ঈদের দিনেও হাসপাতালের বেডে কাতরাতে থাকা জুলাই অভ্যুত্থনে আহত ৪৮ জন যোদ্ধার কারো খোঁজ নেননি নেতৃত্বে থাকা উপদেষ্টারা - এমন অভিযোগের মধ্যেই শনিবার (৭ জুন) রাতে আহতদের খোঁজ নিতে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) পরিদর্শন করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। সঙ্গে নিয়ে গেছেন ঈদের উপহারও।
হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ২৯ জন ও অন্য ওয়ার্ডে ১৯ জনসহ মোট ৪৮ জন আহত ভর্তি রয়েছেন। ইশরাক হোসেন জানেন, সারাদিনে কেউ একবারও তাদের পাশে দাঁড়াননি। তাই নিজ উদ্যোগেই ছুটে আসেন হাসপাতালে। তার উপস্থিতিতে মুহূর্তেই সেখানে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ।
আহত কাজী মো. জাবের বলেন, ‘ঈদের দিনেও আমাদের কেউ দেখতে আসেনি। যারা আমাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে উপদেষ্টা হয়েছেন, তারা এখন আয়েশে ঘুরছেন। আর আমরা হাসপাতালে নষ্ট খাবার খেয়ে কাতরাচ্ছি।’
আরেক আহত যোদ্ধা নাদিম হাসান বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনে নামলাম। এখন মাসের পর মাস হাসপাতালে পড়ে থাকতে হচ্ছে। অথচ তারা ব্যস্ত নতুন দল গোছাতে।’
মো. আইয়ুব হোসেন ক্ষোভ ঝাড়েন আরও সরাসরি, বলেন, ‘তারা তো উপদেষ্টা হয়ে গেছেন, আমাদের কথা ভাবার সময় কোথায়! কিন্তু যারা জুলাই বেচে খাচ্ছে, জুলাই তাদের ছাড়বে না।’
আহতদের এই অভিযোগ শুনে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘যাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই সরকার, তারা ব্যস্ত লুটপাট আর রাজনীতির হিসাব নিকাশে। এই বীর যোদ্ধাদের ঈদের দিনেও কেউ দেখতে এল না - এটাই প্রমাণ করে, তারা আসলে কী চায়।’
তিনি প্রশ্ন তোলেন ছাত্র উপদেষ্টাদের নিষ্ক্রিয়তা এবং জুলাই ফাউন্ডেশনের ভূমিকাও। বলেন, ‘এই আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত না করলে এবং তারা যদি আবার আন্দোলনে নামে, তবে প্রয়োজনে আমরাও মাঠে থাকব।’
নিটোরে ভর্তি আহতদের মধ্যে রয়েছেন মো. রাফি হোসেন, কাজী মো. জাবের, মো. আল আমিন, মো. মনির হোসেন, মো. ছাব্বির হোসেন, মো. শাহিন আলম, মো. হাছান, মো. আব্দুল্লাহ, মো. রিফাত হাং, মো. পারভেজ মিয়া, মো. শাকিল খান, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. রুমান হোসেন, মো. জামাল হোসেন, মো. আলম শেখ, মো. দুলাল মান, মো. মনির খান, মো. নাদিম, মো. আইয়ুব হোসেন, মো. শামিম মিয়া, মো. সোয়েব, মো. আরাফাত, মো. সজিব হোসেন, মো. শহিদুল, মো. রেজওয়ান, মো. মাহিম, মো. ইব্রাহিম খলিল, মো. মাসুদ, মো. শাহ্ রিয়ায়, মো. মাসুমসহ আরও অনেকে।
আহতদের কণ্ঠে অভিমান, অভিযোগ আর হতাশা। আর ইশরাকের ভাষায় - ‘এই বীরদের পাশে দাঁড়ানো এখন শুধু দায়িত্ব নয়, আন্দোলনের নৈতিক শর্ত।’
আপনার মতামত লিখুন :