সম্প্রতি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিন্দুরে’ দেশীয় সিস্টেমের সঙ্গে রাশিয়ান এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুটি রেজিমেন্ট ব্যবহার করে ভারত। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি নয়াদিল্লি ৫ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনেছিল।
অবশ্য সেসময় এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না কেনার প্রাথমিক পরামর্শ দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পশ্চিমা সামরিক বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, রুশ এই প্রযুক্তি এস-৪০০ থাড-এর মতো আমেরিকান সিস্টেমের তুলনায় অনেক ‘বাজে’।
পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে বিশ্ব পরিমণ্ডলে ভারতকে নাকানিচুবানি খাওয়ানোয় ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিরক্ষা পরামর্শকে এবার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদির সরকার।
‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র আতওতায় চলমান ভূরাজনৈতিক চাপ ও চীন-পাকিস্তানের হুমকি মোকাবেলায় রাশিয়া থেকে এস-৫০০ প্রোমিটেই আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেম কেনার উদ্যোগ নিয়ে ভারত। এছাড়া আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য দূরপাল্লার আর-৩৭এম হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রও কিনতে তারা।
সোমবার (৩০ জুন) ভারতীয় প্রতিরক্ষা সংবাদ পোর্টাল এ তথ্য জানিয়েছে।
এক প্রতিবেনে বলা হয়েছে, এস-৪০০ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে এবং রেকর্ড দূরত্বে লক্ষ্যবস্তুগুলোকে বাধাগ্রস্ত করেছে। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের এস-৫০০ কেনার বিষয়ে আলোচনা করতে বাধ্য করেছে। পাকিস্তানে জে-৩৫এ স্টিলথ যুদ্ধবিমান সরবরাহের খবরের পটভূমিতে অঞ্চলের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণেও ভারত এতে আগ্রহী।
পোর্টালটি জানায়, এস-৫০০ ‘রাশিয়ার একটি কৌশলগত প্রতিরক্ষামূলক সম্পদ এবং এর রপ্তানির জন্য শীর্ষ জাতীয় নেতৃত্বের অনুমতি প্রয়োজন’। তবে, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী এবং বিশ্বাসযোগ্য সহযোগিতার কারণে একটি চুক্তির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, আলমাজ-অ্যান্টির এস-৫০০ সমগ্র উচ্চতা ও গতির পরিসরে বিদ্যমান এবং সম্ভাব্য সমস্ত মহাকাশ লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে।
ভারত ৫ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পাঁচটি ব্যাটালিয়ন এস-৪০০ কিনেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ব্যবস্থার প্রশংসা করে বলেছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযানে বিমান প্রতিরক্ষাই প্রধান বিষয়। গত সপ্তাহে ভারত ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা নতুন এস-৪০০ কেনার পাশাপাশি এসইউ-৩০এমকেআই যুদ্ধবিমানের আধুনিকীকরণ এবং সংক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
সম্প্রতি চীনের কিংডাওতে অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) ফাঁকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভের সঙ্গে দেখা করেছেন। বৈঠক দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে একটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আগামী দিনে নয়াদিল্লি মস্কোর সঙ্গে অনেক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারে। এটি পাকিস্তানের জন্য অনেক চিন্তার কারণও হবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা বিভাগ (আইডিআরডব্লিউ)।
ভারত ভবিষ্যতে রাশিয়ার কাছ থেকে এই চারটি সামরিক অস্ত্র কেনার উদ্যোগ নিয়েছে।
আর-৩৭এম ক্ষেপণাস্ত্র
- আর-৩৭এম-এর হাইপারসনিক গতি ঘণ্টায় প্রায় ৭ হাজার ৪০০ কিলোমিটার।
- এই ক্ষেপণাস্ত্রটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে শত্রুকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।
- এর পরিসীমা ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি।
- এর নির্দেশিকা ব্যবস্থায় ইনর্শিয়াল নেভিগেশন, মিড কোর্স আপডেট ও সক্রিয় রাডার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
- ভারত শীঘ্রই রাশিয়া থেকে অতিরিক্ত এস-৪০০ ব্যবস্থা পেতে চলেছে।
- এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ৪০০ কিলোমিটার দূর থেকে আকাশ হুমকিকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে।
- বিমান, ড্রোন, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে পারে।
- ইতোমধ্যে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি আদিবাসী ‘আকাশ’ ও ইসরায়েলি ‘বারাক-৮’ সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে, যা একটি শক্তিশালী বহু-স্তরীয় বিমান প্রতিরক্ষা জাল তৈরি করেছে।
এস-৫০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
- এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটিএস-৪০০-এর একটি উন্নত সংস্করণ। ভারতীয় সেনাবাহিনী এতে আগ্রহী।
- এস-৫০০ মহাকাশে শত্রু উপগ্রহ ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে।
- এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পাল্লা ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত; এটি এই অঞ্চলে আকাশ হুমকি দূর করে।
সুখোই সু-৫৭ ফাইটার জেট
- সু-৫৭ হলো রাশিয়ার পঞ্চমম প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার জেট।
- এর গতি ম্যাক ২+ (প্রায় ২৪৭০ কিমি/ঘণ্টা)।
- এর পরিসীমা ৩ হাজার ৫০০ কিমি (অতিরিক্ত ট্যাঙ্ক ছাড়া), ট্যাঙ্ক সহ ৪ হাজার ৫০০ কিমি।