ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

হল সংসদকে অধিকার আদায়ের প্লাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে চাই: সিয়াম

শাওন বিশ্বাস 
প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ০৮:১৪ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সংসদের সদস্য পদপ্রার্থী মো. তরিকুল ইসলাম সিয়াম। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

মো. তরিকুল ইসলাম সিয়াম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। আসন্ন ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছেন। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সংসদ নির্বাচনে সদস্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। তার দাবি অনুযায়ী তিনিই এবারের নির্বাচনের সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী।

নির্বাচন নিয়ে তার প্রত্যাশা ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন এই প্রার্থী। সিয়াম বলেছেন,‘নির্বাচনে জয়ী হলে হল সংসদকে শিক্ষার্থীদের অধিকারের আদায়ের প্লাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলাই হবে আমার প্রধান লক্ষ্য।’ 

সাক্ষাৎকারে তরিকুল ইসলাম সিয়াম বলেন, ‘বয়সে সবার ছোট হলেও আমি স্কুল জীবন থেকেই শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংকট চিহ্নিতকরণ ও সমাধানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। নদী বেষ্টিত প্রত্যন্ত গ্রামের একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমি স্কুলে শিক্ষার্থীদের বাড়তি জ্ঞান আরোহণের লক্ষ্যে লাইব্রেরির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম। মাধ্যমিক স্কুল এমপিওভুক্তকরণের প্রধানতম শর্তের মধ্যে অন্যতম দুইটি শর্ত স্কুলে শিক্ষার্থীদের বাড়তি জ্ঞান আহরণের জন্য লাইব্রেরি ও খেলাধুলার সামগ্রী থাকতে হবে। কিন্তু আমিসহ স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক তথা মা-বাবারা ছিল গ্রামের পা ফাঁটা, রোদ-বৃষ্টিতে ভেজা কৃষকের সন্তান। আমাদের তৎকালীন স্কুল কর্তৃপক্ষের ফাঁকিবাজি ও অনীহার কারণে সরকার আরোপিত এই শর্তের সুযোগ-সুবিধা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছিল। বিষয়টি আমি মেনে নিতে পারিনি। বিষয়টিকে স্কুলের সব শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুলে ধরে লাইব্রেরিসহ খেলাধুলার সামগ্রীর দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলে স্কুলে ধর্মঘট পর্যন্ত ডেকেছিলাম। আমাদের ধর্মঘট সফল হয়েছিল, স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে লাইব্রেরি নির্মাণ করে লাখ টাকার বই কিনেছিল। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বৃদ্ধির সুযোগ প্রসারিত হয়েছিল। সুতরাং আমি দাবি করি, সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের পথ আমার অনেকটা জানা আছে। হলের ব্যাচম্যাটসহ সিনিয়র বড় ভাইদের সমর্থন পেয়ে নির্বাচিত হলে আমি আমার ক্ষুদ্রতম এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জহুরুল হক হলকে শিক্ষার্থী বান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।’

ডাকসু শুধু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় করে না, বরং দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনকেও প্রভাবিত করে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর একদল শিক্ষার্থী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মব সৃষ্টি করে এইচএসসি-২৪ ব্যাচের কয়েকটি পরীক্ষা বাতিল করে অটোপাশের সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে বাধ্য করেছিল। অটোপাশ নয় বরং পরীক্ষা গ্রহণ করে মেধার ভিত্তিতে পাশ-ফেল নিশ্চিত করতে হবে। এমন বিষয় তুলে ধরে ঢাকার নটর ডেম, ভিকারুননিসা নুন, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল ও সেন্ট যোসেফ বিভিন্ন কলেজের পরীক্ষার্থীদের একত্রিত করে পরীক্ষা গ্রহণের দাবিতে রাজপথে নেমেছিলাম। মেধা না কোটা, এমন প্রশ্নে যেখানে প্রবল ক্ষমতাশালী হাসিনাশাহীর পতন হয়েছিল, সেখানে মেধার এমন অবমূল্যায়নের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারিনি আমি। আমাদের আন্দোলনে দেশের ক্রিয়াশীল সকল সংগঠন বিবৃতি দিয়েছিল। ঢাবি, বুয়েটসহ দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা সরকারকে পরীক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু সরকার কথা শোনেনি।’

বয়সে ছোট হলেও শিক্ষার পরিবেশ ও সংকট সমাধান করতে কখনো ভয় পান না জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘পরীক্ষা বাতিল করতে সরকারকে যারা বাধ্য করেছিল তারা মবকারী। সরকার আমাদের কারও কথা শোনেনি। এরপরেও সরকার বা মবকারীদের ভয় না পেয়ে আমি আমার বন্ধুদের নিয়ে পরীক্ষা গ্রহণের দাবিতে হাইকোর্টে রিট পিটিশনও করেছিলাম। কিন্তু আদালত বিষয়টিকে নির্বাহী বিভাগের বিষয় বলে কোনো মন্তব্য করেনি। সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে অটোপাশ দেওয়ায় এখন প্রমাণিত হয়েছে এইচএসসি-২৪ ব্যাচের অনেক শিক্ষার্থীই এ কারণে তাদের শিক্ষা জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুতরাং আমি ও আমার বন্ধুরা ঠিক ছিলাম। ডাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের নির্বাচন। আমি মনে করি, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ঢাবির শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকারসহ আশা-আকাঙ্খা নিশ্চিত হবে। আমি এর অংশ হতে চাই।’

জহুরুল হক হল সংসদের এই সদস্য পদপ্রার্থী বলেন, ‘ঢাবির শিক্ষার্থীরা ১৯৫২ থেকে একাত্তর হয়ে ২০২৪ পর্যন্ত সকল গণআন্দোলনে সম্মুখ সারিতে ছিল। শত বছরের বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে এ কাজ করে যাচ্ছেন ঢাবির শিক্ষার্থীরা। আমিও আমার পেছনের শিক্ষা জীবনে ন্যায্য আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলাম। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিতে ঢাবিকে অনুকরণ করে আমি আমার পেছনের স্কুল-কলেজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছি।’

তরিকুল ইসলাম সিয়াম বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে হল সংসদে একজন প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিকভাবে আমি কয়েকটি ক্ষেত্রে গুরত্বের সাথে কাজ করব বলে শিক্ষার্থীদের নিকট প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তার মধ্যে প্রথমেই বলতে হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীবান্ধব যেই পরিবর্তনগুলো এসেছে, সেগুলো ধরে রাখাই হবে আমার প্রথম দায়িত্ব। এর পাশাপাশি, হলের খাবারের মান উন্নয়নে নিয়মিত পরিদর্শন ও খাদ্য কমিটির সাথে কাজ করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পানির সমস্যা নিরসনে তদারকি ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা ও কাউন্সেলিং সেবার সুযোগ সৃষ্টি এবং হল সংসদকে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের প্লাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলাই আমার প্রধান প্রতিশ্রুতি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হচ্ছে হাজার বছরের সঞ্চিত জ্ঞান সংরক্ষণ, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণ করা। ঢাবিতে আমি নতুন কুঁড়ি। সুতরাং আমার আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতা রক্ষার হিসেবে, নতুনদের মধ্যে জ্ঞান বিতরণে নতুন কুঁড়ি হিসেবে, বয়সে ছোট হিসেবে যা-ই বলেন না কেন, সিনিয়রদের আদর-স্নেহ, ভালোবাসা, সমর্থন ও ভোট পাওয়ার সবচেয়ে বেশি দাবিদার আমি। তাই আমি মনে করি, জহুরুল হক হলে আমার সিনিয়র ও সহপাঠীরা আমাকে বিবেচনা করে নির্বাচিত করবেন। নির্বাচিত হলে আমি আমার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে জহুরুল হক হল সংসদে নিজের মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারব।’