তাজমহলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে এসেছিলেন পোল্যান্ডের এক পর্যটক। কিন্তু যা দেখলেন, তাতে মনটাই বিগড়ে গেল। বিশ্বখ্যাত এই স্মৃতিসৌধের ঠিক পেছনে অর্থাৎ দশেরা ঘাটের কাছে বিস্তর নোংরা, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ আর যমুনায় গিয়ে মিশছে গৃহস্থালির আবর্জনা ও নর্দমার পানি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ৩২ সেকেন্ডের এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মুখ ঢেকে রেখেছেন সেই বিদেশি মহিলা। শরীরী ভাষা স্পষ্ট করে দিচ্ছে তিনি ঘৃণায় তটস্থ। ভিডিওতে কটাক্ষের সুরে তাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘দিস ইজ রিয়েল ইন্ডিয়া’।
তার পাশে থাকা এক সঙ্গী যখন প্রশ্ন করেন, ‘হোয়ার ইজ দ্য তাজমহল?’, তিনি তৎক্ষণাৎ নাক চেপে গন্ধ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ভিডিওতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, যমুনার পানি নয়, তাতে মিশছে নোংরা কালো তরল—প্লাস্টিক, আবর্জনা এমনকি মৃত পশুও ভাসছে সেই পানিতে। এই দৃশ্যেই চমকে উঠছেন বহু নেটিজেন।
ভিডিওর শেষে ক্যামেরা ঘুরে ধরেছে তাজমহলের এক ক্লোজ-আপ শট, সুন্দর এক সূর্যাস্ত। কিন্তু তাতে নান্দনিকতা নেই, কারণ দৃশ্যের সামনেই রয়েছে কচুরিপানা আর প্লাস্টিকের স্তূপ। ক্যাপশনেই লেখা, ‘দারুণ এক সূর্যাস্ত... কিন্তু সেটা দেখা যাচ্ছে আবর্জনার উপর দিয়ে।’
এই প্রথম নয়। ২০২২ সালেও এই একই দশেরা ঘাটের ছবি পোস্ট করেছিলেন মণিপুরের জলবায়ু আন্দোলনকর্মী লিসিপ্রিয়া কংজুম। হাতে একটি পোস্টার, তাতে লেখা ছিল, ‘বিহাউন্ড দ্য বিউটি অব তাজমহল ইজ প্লাস্টিক পলিউশন’। সেসময় গোটা ভারতজুড়ে চর্চা শুরু হয়েছিল, প্রশাসনও তৎপর হয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিষ্কার করেছিল এলাকা।
সম্প্রতি সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (সিএসই)-এর এক গবেষণায় তাজমহলের কাছে যমুনা নদীর তলদেশের ১২ কিলোমিটার অংশে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের উদ্বেগজনক ঘনত্ব পাওয়া গেছে। চারটি স্থানের মধ্যে, এই অংশে পলি দূষণের পরিমাণ সর্বাধিক অর্থাৎ প্রতি কিলোগ্রামে ৮০০ মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা, যা পোয়া ঘাট (৪৮০ মেগাপিক্সেল), পার্বতী ঘাট ও বালকেশ্বর ঘাটের (৬০০ মেগাপিক্সেল) এর চেয়ে অনেক বেশি।
গবেষণায় ধোয়া কাপড়, ছোট ছোট কাপড়ের টুকরো, প্লাস্টিকের প্যাকেজিং উপকরণ এবং টায়ার থেকে নির্গত জলকে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শনাক্তকৃত কণার ৫৭ শতাংশ ছিল টেক্সটাইল ফাইবার, তারপরে ৩৬ শতাংশ ছিল প্যাকেজিং থেকে নির্গত টুকরো। টায়ারের ক্ষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত কালো কণা মোট দূষণের ২৭ শতাংশ ছিল, হলুদ মাইক্রোপ্লাস্টিক ২১ শতাংশ ছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অনুপ্রবেশ করতে পারে ও রক্ত-মস্তিষ্কের বাধা এবং প্লাসেন্টা অতিক্রম করতে পারে। ফলে প্রদাহ ও রক্তনালীতে বাধা সৃষ্টি হয়, যার মধ্যে অন্যান্য স্বাস্থ্যগত জটিলতাও রয়েছে।
তথ্যসূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ, দ্য ওয়াল
আপনার মতামত লিখুন :