নিজেদের প্রযুক্তিতে তৈরি ট্যাকটিকাল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে ভারত। ক্ষেপণাস্ত্রটি ৫০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। দেশটির ভাষ্য অনুযায়ী এটি ছিল ‘পরীক্ষামূলক’। দু’দিন ধরে চলে এই পরীক্ষা। কিন্তু সেই উৎক্ষেপণস্থল ছিল বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছাকাছি। ফলে এটিকে বাংলাদেশের জন্য ‘বার্তা’ হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।
ক্ষেপণাস্ত্রটির নাম ‘প্রলয়’, যা ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার (ডিআরডিও) তত্ত্ববধানে তৈরি। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সোশ্যাল হ্যান্ডেল এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ‘প্রলয়’ উৎক্ষেপণের তথ্য জানিয়েছে ডিআরডিও।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার বিজ্ঞানীরা ২৮ এবং ২৯ জুলাই দু’দফায় ক্ষেপণাস্ত্রটির লক্ষ্যভেদের পরীক্ষা করেছেন। উদ্দেশ্য ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন পাল্লা পরীক্ষা করা। এই পরীক্ষাকে বলা হয় ‘ইউজার ইভ্যালুয়েশন ট্রায়াল’।
উভয় পরীক্ষাই ব্যবহারকারীর মূল্যায়ন পরীক্ষার অংশ ছিল, যার অর্থ ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর ব্যবহারের জন্য ক্ষেপণাস্ত্রটি বাস্তব-বিশ্বের পরিস্থিতিতে পরীক্ষা করা হয়েছিল। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘প্রলয়’ ক্ষেপণাস্ত্রটিতে ব্যবহার করা হয়েছে সলিড প্রোপেল্যান্ট। রয়েছে উন্নত গাইডেন্স ও নেভিগেশন সিস্টেম।
ক্ষেপণাস্ত্রটি চালিত হয় রকেট মোটর দ্বারা। এর দৈর্ঘ্য ৯.০৬ মিটার, ব্যাস ৭৪০ মিলিমিটার, ওজন ৫.১ টন। ৫০০ থেকে ১০০০ কেজি ওজনের পেলোড বহন করতে পারে। তবে এটি মোটামুটি ৪০০ কি. মি. দূর পর্যন্ত ৫০০ কেজির ওয়ারহেড নিক্ষেপ করতে পারে নির্ভুলভাবে। ১০০০ কেজি পর্যন্ত ওয়ারহেড বহনেও সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্রটি।
বাংলাদেশের সীমান্তের খুব কাছে নয়াদিল্লির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা কতটা স্বাভাবিক সেটি নিয়ে আলোচনা উঠছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ঢাকাকে পরোক্ষভাবে নয়াদিল্লি ‘বার্তা’ দিচ্ছে কি না সে প্রশ্নও উঠছে।
কারণ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণস্থল ওড়িশার বালাসোর জেলার চাঁদিপুর থেকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা জেলা সদরের দূরত্ব মাত্র ৩০০ কিলোমিটার। কলকাতার ব্যারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে যশোর ক্যান্টনমেন্টের দূরত্ব ১২৫ কিলোমিটার, আর খুলনার জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট ১৬৩ কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত।
গত বছরের ৫ আগস্টে শেখ হাসিনার পতন পরবর্তী সময় ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় নয়াদিল্লির। দেশটি তাকে আশ্রয় দিয়েছে। এ নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে ভারতের প্রতি ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
তা ছাড়া বাংলাদেশ চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করছে। সম্প্রতি ঢাকা, বেইজিং ও ইসলামাবাদের মধ্যে জোট গঠনের আলোচনাও কূটনৈতিক মহলে বেশ রটেছে।
এদিকে সীমান্তেও হঠাৎ হঠাৎ উত্তেজনা বাড়ছে। পুশইন এখন নিত্যদিনের ঘটনা। আগের তুলনায় বেড়েছে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশ বারবার বলেছে, তারা প্রতিবেশী যেকোনো দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায়।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উভয় পাল্লাতেই লক্ষ্যভেদের পরীক্ষায় ‘প্রলয়’ সফল হয়েছে। ‘প্রলয়’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ১৫০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরের লক্ষ্যে আঘাত করতে পারে। ‘ভূমি থেকে ভূমি’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো উড়ন্ত অবস্থায় অভিমুখও বদলাতেও পারে। ২০২২ সালে ভারতীয় সেনার অস্ত্রাগারে প্রথম শামিল হয়েছিল ‘প্রলয়’। তারপর থেকে সেটি উন্নত করার কাজ করছে ডিআরডিও।
৩৫০ থেকে ৭০০ এবং ৫০০ থেকে হাজার কেজির উচ্চ শক্তির বিস্ফোরক ব্যবহার করে ‘প্রলয়’। শত্রুপক্ষের ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রকে এড়িয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে ‘প্রলয়’। ভারতীয় সেনার পাশাপাশি বিমান বাহিনীও এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে থাকে।
২০২০ সালে পূর্ব লাদাখে চীনা বাহিনীর সঙ্গে এবং গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পরে এলএসিতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে সক্রিয় হয়েছিল ভারতীয় সেনারা। সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ২০২২ সালে পূর্ব লাদাখে মোতায়েন করা হয়েছে প্রলয়। মধ্য এশিয়ার দেশ আর্মেনিয়া সম্প্রতি ‘প্রলয়’ কেনার বিষয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বলে খবর।

 
                             
                                    


 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন