ঢাকা বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রাজ্যের মর্যাদার দাবিতে অগ্নিগর্ভ লাদাখ, বিজেপির অফিসে আগুন

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫, ০৫:২৪ পিএম
লাদাখের লেহ শহরে বিজেপির পার্টি অফিসের সামনে পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। ছবি- সংগৃহীত

জম্মু-কাশ্মীর থেকে আলাদা করে লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার পর থেকেই সেখানে ক্ষোভ বাড়ছিল। এবার সেই ক্ষোভের আগুন আবারও জ্বলে উঠেছে। রাস্তায় নেমেছে অনেক মানুষ। লাদাখের লেহ শহরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। রাজ্যের মর্যাদা এবং সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবিতে এই আন্দোলন চালাচ্ছেন স্থানীয়রা।

ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই অনুসারে, লেহ-তে বিজেপির পার্টি অফিসে হামলা ও ভাঙচুর চালান তারা, একপর্যায়ে দলীয় কার্যালয়ের আগুন ধরিয়ে দেয়, সেখানে থাকা পুলিশের গাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধরা। পুলিশের দিকে পাথর ছুড়ে মারে বিক্ষোভকারীরা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। লাঠিচার্জও করা হয়।

আগামী ৬ অক্টোবর লাদাখের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে কেন্দ্র সরকারের। তার আগে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) লেহ শহরে বিক্ষোভ দেখায় একদল লোক। তাদের মূল দাবি ছিল, লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দিতে হবে। বিক্ষোভ চলাকালীন পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধ জনতা বিজেপির পার্টি অফিসে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

পুলিশকর্মীরা তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষুব্ধরা। লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে গত কয়েক বছর ধরেই আন্দোলন চলছে। তবে রাজ্যের দাবিতে এমন উত্তেজনা সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি।

সংবাদ সংস্থা এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯ সালের অক্টোবরে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পরে জম্মু ও কাশ্মীরকে ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা হয়। একটি জম্মু-কাশ্মীর এবং অন্যটি লাদাখ। প্রাথমিকভাবে এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিলেন জলবায়ুকর্মী সোনম ওয়াংচুক-সহ অনেকেই।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই পৃথক রাজ্যের দাবিতে ধারাবাহিকভাবে সরব হয়েছেন ওয়াংচুক এবং তার অনুগামীরা। বিগত দিনে দফায় দফায় অনশনেও বসেছেন তিনি। গত দু’সপ্তাহ ধরে লাদাখের রাজ্যের মর্যাদার দাবিতে কেন্দ্রের ওপর চাপ বৃদ্ধি করতে ফের অনশন শুরু করেছেন ওয়াংচুক। এরই মধ্যে তার পাশে দাঁড়াতে লেহ অ্যাপেক্স বডি বুধবার প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেলে উত্তেজনা ছড়াল।

গত ২০ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক লাদাখের নেতৃত্বের সঙ্গে পুনরায় আলোচনা শুরু করার কথা জানায়। অক্টোবরে সেই আলোচনার দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে। লাদাখে লেহ অ্যাপেক্স বডি এবং কার্গিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (কেডিএ) অধীনে রাজনৈতিক শক্তিগুলো রাজ্যের মর্যাদা এবং ষষ্ঠ তফসিলের মর্যাদা দাবিতে দীর্ঘ বিক্ষোভের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২ জানুয়ারি একটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করেছিল।

গত প্রায় বছর তিন ধরেই দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেই রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভ চলেছে। তবে এই ধরনের সহিংস আন্দোলন এই প্রথম। এই অসন্তোষের ফলে বৃহৎ আকারের বিক্ষোভ এবং অনশন শুরু হয়। লেহ অ্যাপেক্স বডি ও কেডিএ-র অধীনে প্রথমবারের মতো বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ লেহ এবং মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কার্গিলের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলি একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ শুরু করে।

কার্গিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের নেতা সাজাদ কার্গিল এক্স-এ লিখেছেন, ‘লেহ-তে যা হচ্ছে তা দুর্ভাগ্যজনক। কেন্দ্রীয় সরকারের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির পরীক্ষার ফলে শান্তিপূর্ণ লাদাখ অশান্ত হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রের ওপর দায়িত্ব বর্তাবে, লাদাখের মানুষের কথা শোনা এবং আলোচনা পুনরায় শুরু করা। আমি সকলকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানাই।’