দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী ঐতিহাসিক শহীদ সামসুদ্দিন আহমদ ছাত্রাবাস রক্ষা এবং চৌহাট্টায় নির্মিত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল দ্রুত চালুর দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে সিলেটের নাগরিক সমাজ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে সচেতন সংগঠন।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমের কাছে স্মারকলিপি হস্তান্তর করা হয়।
এতে নেতৃত্ব দেন সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল করিম চৌধুরী কিম। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী অরূপ শ্যাম বাপ্পী, রেজাউল কিবরিয়া, রোমেনা বেগম রোজি, সোহাগ তাজুল আমিন ও আব্দুর রহমান হীরা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, চৌহাট্টায় অবস্থিত এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পুরাতন ক্যাম্পাসটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সৈন্যদের সামরিক ব্যারাক ছিল। পরে মুক্তিযুদ্ধে এটি চিকিৎসকদের সংগঠনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এ স্থাপনাগুলো ‘আসাম প্যাটার্ন’র অনন্য নিদর্শন, যার মধ্যে রয়েছে উঁচু ছাদ, লম্বা বারান্দা, ঢালু ছাদ ও কাঠ-ইটের সমন্বয়ে নির্মাণকৌশল।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৩৬ সালে নির্মিত এ ভবনটি ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত সদর হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং পরে মেডিকেল স্কুল ও কলেজের ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে এটি দুটি যুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মারক হিসেবে বিবেচিত। নাগরিকদের অভিযোগ, ভবনগুলো ‘জরাজীর্ণ’ দাবি করে এর অপসারণের প্রস্তুতি হিসেবে গাছ কাটার নিলাম দেওয়া হয়েছে, যা ঐতিহ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুতর হুমকি।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ভবনটি সংরক্ষণ করা না হলে সিলেট তার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস ও স্থাপত্য ঐতিহ্য হারাবে। ভবনগুলোর সংস্কার কিংবা একই ধাঁচে পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে তা সংরক্ষণের আহ্বান জানানো হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে বলা হয়, সিলেট এমসি কলেজের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাস আগুনে পুড়ে গেলে তা পূর্বের নকশা অনুযায়ী পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল—একই দৃষ্টান্ত এখানে প্রয়োগযোগ্য।
আবু সিনা ছাত্রাবাস ভেঙে নির্মিত জেলা হাসপাতাল চালুর দাবি
স্মারকলিপির দ্বিতীয় অংশে সিলেটের নাগরিক সমাজ উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২৫০ শয্যার সিলেট জেলা হাসপাতাল দীর্ঘদিন যাবৎ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ২০১৯ সালে ঐতিহ্যবাহী আবু সিনা ছাত্রাবাস ভেঙে এর নির্মাণকাজ শুরু হলেও ২০২৪ সালে কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরও এটি এখনো চালু হয়নি।
জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিংবা জেলা সিভিল সার্জন অফিস, কোনো পক্ষই এই হাসপাতালের দায়িত্ব নিতে আগ্রহ দেখায়নি। এর মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, হাসপাতালের পরিকল্পনার সময় স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ না করা এবং অবকাঠামোগত ঘাটতি। ফলে সরকারি বিপুল অর্থ ব্যয় করেও হাসপাতালটি জনগণের কাজে আসছে না।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, এই অব্যবস্থাপনার ফলে একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে সিলেটবাসী প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ এটি চালু হলে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওপর চাপ অনেকটাই কমত।
স্মারকলিপি গ্রহণের পর জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘আমরা চাই না আগের সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের পুনরাবৃত্তি হোক। জেলা প্রশাসক আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’