ঢাকা শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫

ইরানের হামলার পর ইসরায়েলিদের অন্য দেশে জমি কেনার হিড়িক

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২৫, ০৬:৩৭ পিএম
ইহুদিদের অন্যতম আশ্রয়স্থল ইউরোপের ছোট দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাস। ছবি- সংগৃহীত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ইউরোপের ছোট দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাস ছিল ইহুদিদের অন্যতম আশ্রয়স্থল। হিটলারের নাৎসি বাহিনীর গণহত্যা থেকে বাঁচতে হাজার হাজার ইহুদি আশ্রয় নেন এই দ্বীপে। সময়ের পরিক্রমায় ইসরায়েলের সঙ্গে গড়ে ওঠে সাইপ্রাসের ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সম্পর্ক।

সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এবং ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময়ও বহু ইসরায়েলি নাগরিক সাইপ্রাসে গিয়ে আশ্রয় নেন। এমনকি গুঞ্জন রয়েছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও তখন সাইপ্রাসে গিয়েছিলেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।

এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলিদের মধ্যে সাইপ্রাসে জমি কেনার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। দেশটির বামপন্থী রাজনৈতিক দল আকেল সতর্ক করেছে, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে একসময় সাইপ্রাসবাসীর নিজ ভূমি হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। দলটি ভূমি বিক্রির নীতিতে কঠোরতা আনতে ইতোমধ্যে পার্লামেন্টে দুটি বিলও উত্থাপন করেছে।

সাইপ্রাস ‘গোল্ডেন ভিসা’ কর্মসূচির আওতায় জমি বিক্রি ও বিনিয়োগকে উৎসাহ দিয়ে আসছে। তবে আকেলের দাবি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থাকা দেশের নাগরিকদের মধ্যে বিশেষ করে ইসরায়েলিদের জমি কেনার হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে।

সাইপ্রাস মেইল–এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ইস্যুতে প্রথমবারের মতো কোনো রাজনৈতিক দল খোলাখুলি অবস্থান নিয়েছে।

আকেল পার্টির নেতা স্তেফানো স্তেফানো দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টিভি চ্যানেল সিওয়াইবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সাইপ্রাস একটি ছোট রাষ্ট্র এবং এটি একটি অস্থিতিশীল ভূ-অঞ্চলের মাঝে অবস্থিত। আমাদের ভূমির মালিকানা নিয়ে এখনই সচেতন না হলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়তে হতে পারে।’

তিনি জানান, গত কয়েক বছরে নির্মাণ খাতে ব্যাপক প্রসার ঘটেছে এবং সেই সঙ্গে ইউরোপের বাইরের দেশের নাগরিকরা বিপুলসংখ্যক সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।

স্তেফানোর বক্তব্য, ‘স্পেন, ইতালি, জার্মানির মতো দেশেও ভূমি বিক্রিতে বিদেশিদের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। এতে করে স্থানীয়দের জমি সুরক্ষিত থাকে এবং বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমাদেরও এই পথ অনুসরণ করা উচিত।’

আকেলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েলিরা সাইপ্রাসের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল এলাকায় জমি কিনছেন। যার আশপাশে রয়েছে সামরিক ঘাঁটি ও নিরাপত্তা স্থাপনা। যদিও নির্দিষ্টভাবে কোনো স্থাপনার নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে উদাহরণ হিসেবে দেশটির ন্যাশনাল গার্ডের স্থাপনাগুলোর কথা বলা হয়েছে।

স্তেফানোর অভিযোগ, ‘বিশেষ করে লিমাসোল ও লারনাকা অঞ্চলে ইসরায়েলিরা গেটেড কমিউনিটি গড়ে তুলছে, যেগুলোর ভেতরে বাইরের কেউ প্রবেশ করতে পারে না। সেখানে ইসরায়েলি স্কুল, সিনাগগ ও জায়নবাদী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বাড়ছে। এমনকি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোতেও এ নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে।’

তার ভাষ্য, ‘স্থানীয়রাও বিষয়টি বুঝতে পারছে। আপনি যদি লারনাকা বা লিমাসোলে যান, সেখানে বাসিন্দারা আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু এলাকার কথা বলবে, যেখানে এই তৎপরতা দৃশ্যমান।’

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত লারনাকা এলাকায় ইসরায়েলিরা মোট ১,৪০৬টি সম্পত্তি কিনেছেন, যার মধ্যে ৪৮১টির মালিকানা ইতোমধ্যে দলিলভুক্ত হয়েছে। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন ব্রিটিশ নাগরিকরা। তারা কিনেছেন ২,৭৪৩টি, এবং লেবাননের নাগরিকরা কিনেছেন ১,৭৪৪টি সম্পত্তি।

অন্যদিকে লিমাসোলে ইসরায়েলিরা চতুর্থ অবস্থানে আছেন। এখানে তারা ১,১৫৪টি সম্পত্তি কিনেছেন, যার মধ্যে ৫১১টি দলিল সম্পন্ন হয়েছে। শীর্ষে রয়েছেন রাশিয়ার নাগরিকরা। তারা কিনেছেন ২,৫৬১টি, আর ব্রিটিশ নাগরিকরা ১,৮৪০টি সম্পত্তি কিনেছেন।

যদিও প্রতিটি জেলাতেই জমি কেনার দৌড়ে স্থানীয় সাইপ্রিয়ট নাগরিকরাই শীর্ষে রয়েছেন, তবে বিদেশিদের এই অস্বাভাবিক ক্রয়প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। জমি নিরাপত্তা, জনসংখ্যাগত ভারসাম্য এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।

স্তেফানো শেষমেশ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিই, তাহলে একদিন হয়তো দেখব—আমাদের নিজেদের ভূমিও আর আমাদের হাতে নেই।