যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির জনসমক্ষে না আসা ঘিরে তৈরি হয়েছে চরম জল্পনা ও উদ্বেগ। কেউ বলছেন, তিনি যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, আবার কেউ বলছেন তিনি বেঁচে আছেন এবং সঠিক সময়ে বের হবেন।
সর্বশেষ ১১ জুন খামেনিকে সরাসরি দেখা গেলেও এরপর থেকে তিনি শুধু ভিডিও বার্তায় উপস্থিত হয়েছেন। এমনকি ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে নিহত শীর্ষ সেনা কমান্ডারদের জানাজাতেও উপস্থিত হননি তিনি, যা সাধারণত তার রুটিনের অংশ।
ধারণা করা হচ্ছে, ইরানে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলার পর তাকে গোপন আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতির পরও তার জনসম্মুখে না আসাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, খামেনির আত্মগোপনে থাকা শুধু নিরাপত্তাজনিত নয়, বরং দেশটির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়েও বড় ধরনের ইঙ্গিত বহন করছে।
নিরাপত্তাগত সংকট ও গোপন আশ্রয়
ইরানে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার পর আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয় ও ইলেকট্রনিক যোগাযোগ সীমাবদ্ধ থাকায় জনসমক্ষে আসছেন না তিনি। মূলত ইসরায়েলি গুপ্তচরবৃত্তি ও হত্যার ভয়কে কেন্দ্র করে তার সুরক্ষা জোরদার করা হয়েছে।
ভিডিও বার্তা ও সীমিত প্রকাশ্য উপস্থিতি
গত ২৩ জুন এবং ২৬ জুন তিনি প্রাক-রেকর্ডেড ভিডিও বার্তায় সাক্ষাৎ করেছেন। তবে জনসমক্ষে উপস্থিতি ছিল না। ভিডিওতে অস্বাভাবিক সেটিং ও প্রযুক্তিগত তফাৎ দেখে ওএসআইএনটি বিশ্লেষকদের ধারণা ভিডিওটি অন্য জায়গা থেকে রেকর্ড হয়েছে। এতে বোঝা যায়, তিনি জনসাধারণের ঊর্ধ্বে ভিডিও বার্তায় তার উপস্থিতি নিশ্চিত করছেন।
রাজনৈতিক সংকট ও ক্ষমতা সঞ্চালনের পরিবর্তন
যদিও জনসমক্ষে অনুপস্থিত তবে গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণে তিনি সক্রিয় রয়েছেন। রাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ উর্ধ্বতন গোলক থেকে তাকে সিদ্ধান্তে জড়িয়ে রাখা হয়েছে। এদিকে, তার অনুপস্থিতি নতুন নেতৃত্বদ্বন্দ্বের সম্ভাবনা বাড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানসহ মধ্যপন্থী দল ক্ষমতা চালু করার চেষ্টা চালাচ্ছে, আর কঠোরপন্থীরা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে।
প্রতিবাদী পরিপ্রেক্ষিত
১২ দিনের ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের পরে ইরানায়িশাস্ত্র খোলাসা ও সীমিত প্রতিক্রিয়ার কারণে, খামেনির স্থিতি অস্থির। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার রাজনৈতিক বিষয় প্রবঞ্চনায় রয়েছে । এদিকে, চ্যাথাম হাউজ ও অন্যান্য নীতিগত পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই সময়টাতে নিরাপত্তাজনিত কারণে তিনি জনসাধারণের সামনে না আসাটা একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত।
রাজনৈতিক ও ভবিষ্যৎ প্রভাব
আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির অনুপস্থিতি ক্ষমতার সংহতি দুর্বল করছে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদের সম্ভাবনা বাড়ছে। হঠাৎ মৃত্যুর আশঙ্কা ও সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে তিনি তিনজন সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীর তালিকা ঘোষণা করেছেন।এতে রাজনৈতিক নির্দেশনাবিহীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রেসিডেন্টসিয়াল ও কট্টরপন্থী বাহিনীগুলির সঙ্গে আইআরজিসির প্রভাব বৃদ্ধি পেতে পারে। যা কঠোর পশ্চিম-বিরোধী নীতির দিকে মোড় নিতে পারে।