‘ইসরায়েলি’ সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর ঘাঁটি ও অবকাঠামো ধ্বংস করতে তাদের সেনারা দক্ষিণ লেবাননে প্রবেশ করেছে। এটি হিজবুল্লাহর সঙ্গে চলতি সংঘর্ষে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের সাম্প্রতিক একটি ঘটনা।
বুধবার (৯ জুলাই) সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহ যাতে ওই এলাকায় আবার ঘাঁটি গড়তে না পারে, সেজন্য তারা একটি বিশেষ এবং লক্ষ্যভিত্তিক অভিযান শুরু করেছে।
সেনাবাহিনী দাবি করেছে, গোয়েন্দা তথ্য ও দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় হিজবুল্লাহর অস্ত্র ও ঘাঁটি সনাক্ত করার ভিত্তিতে এই স্থল অভিযান চালানো হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলে’র নবম ব্রিগেড সীমান্তের কাছে লাব্বোনেহ এলাকায় মোতায়েন ছিল, আর ৩০০তম ব্রিগেড কাজ করেছে জাবাল ব্লাট অঞ্চলে, দুই এলাকাই সীমান্তের খুব কাছাকাছি।
এই অভিযানের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনী একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে রাতের বেলায় সৈন্যদের দক্ষিণ লেবাননের মাটিতে হাঁটতে দেখা যায়। ভিডিওটির শিরোনাম ছিল ‘দক্ষিণ লেবাননে নবম ব্রিগেডের লক্ষ্যবস্তু অভিযানের ফুটেজ’।
২০২৪ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ‘ইসরায়েল’ ও হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। তবে এখন লেবাননে চালানো সাম্প্রতিক অভিযানের বিষয়ে সেনাবাহিনী বলেছে ঠিক কখন থেকে এটি শুরু হয়েছে সে বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
যুদ্ধবিরতির পরও ‘ইসরায়েল’ প্রায় প্রতিদিনই লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালাচ্ছে, যার মধ্যে রাজধানী বৈরুতে একাধিক হামলাও রয়েছে। এই হামলাগুলোর লক্ষ্য হিসেবে ‘ইসরায়েল’ বলছে, তারা হিজবুল্লাহর অস্ত্রের গুদাম ও যোদ্ধাদের টার্গেট করছে।
তবে বাস্তবে এসব হামলায় বহু বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছে এবং অনেক আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়েছে। হিজবুল্লাহর সঙ্গে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই সংঘাতে কয়েক মাসের ভয়াবহ যুদ্ধও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
লেবাননজুড়ে ‘ইসরায়েলি’ আগ্রাসন
‘ইসরায়েল’ যখন লেবাননে তার হামলা আরও জোরদার করছে, তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। হিজবুল্লাহ দুর্বল অবস্থানে আছে, লেবাননের সেনাবাহিনীও এখন অনেকটা একা। এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে ‘ইসরায়েলে’র ওপর চাপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই ‘ইসরায়েল’ নতুন করে অভিযান শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে।

লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্র ও ‘ইসরায়েল’কে অনুরোধ করেছেন যেন লেবাননের ওপর হামলা বন্ধ করা হয়।
রোববার হিজবুল্লাহ নেতা নাইম কাসেম বলেন, তারা শান্তির পক্ষে, তবে ‘ইসরায়েল’ যদি বিমান হামলা বন্ধ না করে এবং দক্ষিণ লেবানন থেকে সরে না যায়, তাহলে তারা পিছু হটবে না কিংবা নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে রাজি হবে না।
তিনি আরও বলেন, “যদি ‘ইসরায়েলে’র আগ্রাসন চলতেই থাকে, তাহলে আমাদের অবস্থান নরম করতে বা অস্ত্র ছাড়তে বলার কোনো মানে হয় না।” এই কথা তিনি বৈরুতের দক্ষিণে আশুরা উপলক্ষে জমায়েত হওয়া হাজারো সমর্থকের সামনে বলেন।
যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী, হিজবুল্লাহকে তাদের যোদ্ধাদের ‘ইসরায়েলি’ সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে, লিটানি নদীর উত্তরে ফিরিয়ে নিতে হবে। এর ফলে ওই অঞ্চলে শুধু লেবাননের সেনাবাহিনী ও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরাই অস্ত্রধারী বাহিনী হিসেবে থাকতে পারবে।
‘ইসরায়েল’ যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার করার কথা থাকলেও তারা নিজেদের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা পাঁচটি স্থানে সৈন্য রেখে দিয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ও সিরিয়ার জন্য বিশেষ দূত টমাস ব্যারাক সোমবার আবার বৈরুত সফর করেছেন। তিনি লেবাননের হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে লেবানন সরকারের প্রতিক্রিয়ার প্রশংসা করেছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ‘ইসরায়েল’ লেবাননের ভেতরে একাধিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব হামলার বেশিরভাগই ঘটেছে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে, যেখানে বিভিন্ন ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর সদস্যরা অবস্থান করে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার উত্তর লেবাননের ত্রিপোলি শহরের কাছে একটি গাড়িতে ‘ইসরায়েলি’ হামলায় অন্তত তিনজন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছে।
পরে ‘ইসরায়েলে’র সেনাবাহিনী জানায়, তারা ওই হামলায় মেহরান মুস্তাফা বা'জুরকে হত্যা করেছে, যিনি লেবাননে হামাসের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কমান্ডার ছিলেন।
সেনাবাহিনী আরও বলেছে, ‘ইসরায়েলি’ অভিযান এখন কেবল দক্ষিণেই সীমাবদ্ধ নেই, এটি লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। যুদ্ধবিরতির পর এটিই লেবাননে প্রথম ‘ইসরায়েলি’ টার্গেট হত্যা।
আপনার মতামত লিখুন :