অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রতিদিনই যেন ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের নতুন অধ্যায় লেখা হচ্ছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ‘ইসরায়েলি’ হামলায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬০ হাজার ৩৪।
ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া অচিহ্নিত লাশের কথা বাদ দিলেও এই সংখ্যা যেন এক ভয়াল প্রতীক, যেন রক্তে লেখা এক নির্মম উপহার, যা ‘ইসরায়েলের’ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তুলে দিচ্ছেন সমগ্র পৃথিবীর সামনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার হাসপাতালগুলোতে এসেছে আরও ১১৩ জনের মরদেহ। সেই সঙ্গে নতুন করে আহত হয়েছেন অন্তত ৬৩৭ জন। মোট আহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৭০ ছাড়িয়েছে। ধ্বংস, রক্ত আর মৃত্যুর এই হিসাব যেন এক অন্ধকার কবিতার মতো, যেখানে প্রতিটি সংখ্যা একটি নিভে যাওয়া জীবনের গল্প বলে।
গাজার প্রতিটি কোণে এখন মৃত্যু ও আতঙ্কের গন্ধ। একসময় মানুষের কোলাহলে মুখরিত বাজারগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, শিশুর কান্না ডুবে যাচ্ছে বিমান হামলার গর্জনে। ধসে পড়া স্কুল, ভেঙে যাওয়া হাসপাতাল আর ভীতসন্ত্রস্ত মানুষগুলোর মুখে একটাই প্রশ্ন—‘পৃথিবী কি দেখছে?’
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এটিকে মানবসভ্যতার জন্য লজ্জাজনক ট্র্যাজেডির এক অধ্যায় হিসেবে বর্ণনা করছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ‘গাজা শুধু একটি যুদ্ধক্ষেত্র নয়, এটি এখন আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের নির্লজ্জ লঙ্ঘনের এক জীবন্ত সাক্ষ্য।’
‘ইসরায়েলি’ কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের লক্ষ্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। কিন্তু মাঠের বাস্তবতা অন্য কথা বলছে। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। গাজার অর্ধেকের বেশি স্বাস্থ্যকেন্দ্র কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে আহতদের অনেকেই বাঁচার সুযোগ পাচ্ছেন না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রের কণ্ঠে শোনা গেল এক অসহায় মানুষের হাহাকার, ‘এগুলো কেবল সংখ্যা নয়, প্রতিটি লাশ একটি পরিবারের ইতিহাস, একটি স্বপ্নের মৃত্যু।’
নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতির ফল হিসেবে পৃথিবীর সামনে সাজানো হচ্ছে ৬০ হাজার লাশের মিছিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও যদি নীরব থাকে, তবে এই রক্তাক্ত উপহার শুধু গাজার জন্য নয়, পুরো মানবতার জন্য চরম কলঙ্ক হয়ে থাকবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, বিবিসি, টিআরটি ওয়ার্ল্ড