অস্ট্রেলিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে প্রকাশিত এক যুগান্তকারী প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং উপকূলীয় বন্যার কারণে অন্তত ১৫ লাখেরও বেশি মানুষের ঘরবাড়ি ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। একইসঙ্গে তাপ-সম্পর্কিত অসুস্থতায় মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাবে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জাতীয় জলবায়ু ঝুঁকি মূল্যায়নে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর কোনো অনুমান বা ভবিষ্যদ্বাণী নয়, বরং বাস্তবতা। অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু মন্ত্রী ক্রিস বোয়েন মন্তব্য করেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে বাস করছি। কোনো কোনো প্রভাব এড়ানোর জন্য এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।’
সরকারের জন্য স্বাধীনভাবে প্রস্তুত করা এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত প্রায় ১৫ লাখ মানুষ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও বন্যার ঝুঁকিতে পড়বে। ২০৯০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখে পৌঁছাতে পারে।
প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, টরেস স্ট্রেইট দ্বীপপুঞ্জে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বিশ্ব গড়ের চেয়ে দ্রুত বাড়ছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও জীবিকা হুমকির মুখে ফেলবে।
এডিথ কোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটি এনগেজমেন্ট কোঅর্ডিনেটর ও আদিবাসী প্রতিনিধি জোয়ান হিল বলেন, ‘আমরা এই জরুরি প্রতিক্রিয়া আর বিলম্বিত করতে পারি না। যদি এখনই পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, উপকূলীয় ও দ্বীপ সম্প্রদায়গুলোর জীবনধারা ও ঐতিহ্য চিরতরে হারিয়ে যাবে।’
প্রতিবেদন প্রকাশের সময়টি তাৎপর্যপূর্ণ। আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অধীনে তাদের নতুন নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্য প্রকাশ করবে। অনেকেই আশা করছেন দেশটি আরও উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করবে।
প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সম্পত্তি খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৬১১ বিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার (৪০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। ২০৯০ সালের মধ্যে এ ক্ষতি বেড়ে ৭৭০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। একইসঙ্গে যদি তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তবে সিডনির মতো প্রধান শহরে তাপজনিত মৃত্যুর হার ৪০০ শতাংশেরও বেশি বাড়তে পারে।
এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অস্ট্রেলিয়ার অনন্য প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদকে হয় নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে হবে, নয়তো বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ক্লাইমেট কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী আমান্ডা ম্যাকেঞ্জি প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যকে ‘ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলে এখনও একটি উন্নত ভবিষ্যৎ বেছে নিতে পারি। এ জন্য এখনই দ্রুত ও কঠোরভাবে দূষণ কমাতে হবে। প্রথম পদক্ষেপ হবে ২০৩৫ সালের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা আইন প্রণয়ন এবং নতুন দূষণকারী প্রকল্প বন্ধ করা।’
বিশ্বের অন্যতম বড় জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু পরিবর্তনকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দায় হিসেবে দেখার জন্য সমালোচিত করা হয়েছে। নির্গমন নীতি নিয়ে বছরের পর বছর চলা ‘জলবায়ু যুদ্ধ’ দেশটির অগ্রগতিকে ব্যাহত করেছে।
বর্তমান মধ্য-বামপন্থি লেবার সরকার নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াতে এবং নির্গমন কমাতে উদ্যোগী হয়েছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, সরকার একইসঙ্গে নতুন জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি নর্থ ওয়েস্ট শেল্ফ নামের একটি বৃহৎ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) প্রকল্পের কার্যক্রম ৪০ বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আদিবাসী ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে ক্ষুব্ধ করেছে।
মন্ত্রী বোয়েন স্বীকার করেছেন, সবুজ ভবিষ্যতের পথে অস্ট্রেলিয়ার চ্যালেঞ্জ জটিল হলেও দেশটির নবায়নযোগ্য শক্তি সম্পদ বিশ্বসেরাদের মধ্যে রয়েছে। তার ভাষায়, ‘আমরা শক্তিশালী অবস্থান থেকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে যাচ্ছি।’

 
                             
                                    

 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন