প্রতিবছরের মতো চলতি মৌসুমেও রাজশাহী অঞ্চলের চাষিদের আম স্বল্প খরচে রাজধানীতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চালু করা হয় ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’। প্রতিবছরের মতো লোকসান দিয়ে চালাতে হলে ট্রেনের সেই যাত্রা থমকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফলে ট্রেনটি চলবে কি না, সেই সিদ্ধান্তও নিতে পারেনি পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। গেল পাঁচ বছরের লোকসানের ফলে আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা ট্রেনের বিষয়ে অনাগ্রহ রয়েছে, তবে তারা যদি চায় তাহলে হয়তো ট্রেন চলতে পারে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৮ কেজি আম পরিবহন করা হয়েছে। ট্রেন ভাড়া পেয়েছে ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা। গত চার বছরে ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে ঢাকায় যাওয়া-আসা করতে তেল খরচ হয়েছে ৯২ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ফলে এই পাঁচ বছরে ট্রেনের লোকসান হয়েছে অর্ধকোটি টাকা।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ মেট্রিক টন। পরিপক্ব আমের বাজারজাত নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন এবারও ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ ঘোষণা করেছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সুজিত কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘এই ট্রেন নিয়ে অতীত অভিজ্ঞতা খুব ভালো নয়। চাষিরা আগ্রহ দেখান না। তাই এবার এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মাঠ পর্যায়ে সমীক্ষা চলছে। চাষি ও ব্যবসায়ীদের আগ্রহ থাকলে ট্রেন চালু হতে পারে। তবে ঈদের আগে চালু করা সম্ভব না-ও হতে পারে।’
আম ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম বলেন, আম পাড়া শুরু হয়েছে। আমরা কুরিয়ারে কিংবা ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানেই আম পাঠাচ্ছি। ট্রেনের সুবিধা গত কয়েক বছর পাওয়া গেছে, কিন্তু সেটা একটু ঝামেলা মনে হয়। তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী ট্রেনে আম পাঠান।
ঘোষিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, গত ১৫ মে থেকে গুটি জাতের আম নামানো শুরু হয়েছে। উন্নত জাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ গত বৃহস্পতিবার থেকে নামানো শুরু হয়েছে। আগামীকাল থেকে লখনা ও রানিপছন্দ আম নামবে। এ ছাড়া হিমসাগর ও খিরসাপাতি ৩০ মে, ল্যাংড়া ও ব্যানানা ম্যাংগো ১০ জুন, আম্রপালি ও ফজলি ১৫ জুন, বারি-৪ আম ৫ জুলাই, আশ্বিনা ১০ জুলাই এবং গৌড়মতি ১৫ জুলাই থেকে নামানো যাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা জানিয়েছেন, এবার আমের উৎপাদন গতবারের তুলনায় বেশি। দামও ভালোই আছে এখন পর্যন্ত। চাষিরা লাভবান হবেন বলে আমরা আশা করছি। আমে চাষিরা লাভবান হবেন।
উল্লেখ্য, গত বছর রাজশাহী থেকে ট্রেনটিতে ঢাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি আম পরিবহনে ভাড়া পড়েছিল ১ টাকা ৪৩ পয়সা। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে লাগে ১ টাকা ৪৭ পয়সা। এত কম টাকায় আম পরিবহন করা গেলেও বাগান থেকে আম স্টেশনে নেওয়া এবং স্টেশন থেকে আবার বাজারে নিয়ে যাওয়াকে বিড়ম্বনা হিসেবেই দেখেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
ফলে তাদের আগ্রহ থাকে কম। ২০২০ সালে প্রথম ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালু করা হয়। ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চার বছরে মোট ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৮ কেজি আম পরিবহন করা হয়েছে। এতে ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা ভাড়া আদায় করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে ট্রেন পরিচালনার খরচের চেয়েও বেশি।
এই ট্রেন চালিয়ে লোকসান হয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। ২০২০ সালের ৫ জুন থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত ৪৬ দিন চলেছে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। ওই বছর ট্রেনে এক হাজার ২০০ মেট্রিক টন আম পরিবহন করা হয়। ২০২১ সালের ২৭ মে থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ৫০ দিন চলেছিল ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। ওই বছর দুই হাজার ২৩৫ মেট্রিক টন আম পরিবহন করা হয়েছিল।
২০২২ সালের ১৩ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সাত দিন চলে এ স্পেশাল ট্রেন। ওই বছর ১৭৯ মেট্রিক টন আম, ৩৬টি গরু ও ১৬০টি ছাগল পরিবহন করা হয়। ২০২৩ বছর ৮ জুন থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত ১৮ দিন স্পেশাল ট্রেন চলেছে। ২০২৩ সালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের সঙ্গে অতিরিক্ত দুটি ওয়াগন যুক্ত করে কোরবানির পশু পরিবহনের ব্যবস্থা করে রেলওয়ে।
প্রতিটি ওয়াগনের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল ১১ হাজার ৮৩০ টাকা। ২০২৪ সালে ওয়াগন বাড়ানো হয়েছিল। এতে আরও বেশি লোকসান হয়েছে বলে জানিয়েছে রেল।
আপনার মতামত লিখুন :