শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


খোরশেদ আলম রাজু, নওগাঁ

প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৫, ০৫:০৫ এএম

টিউশনির টাকায় লাখ টাকার খামার

খোরশেদ আলম রাজু, নওগাঁ

প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৫, ০৫:০৫ এএম

টিউশনির টাকায় লাখ টাকার খামার

নিজের খামারে মাকসুদুর রায়হান জেড। ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

দারিদ্র্যের ঘেরাটোপে বেড়ে ওঠা মাকসুদুর রায়হান জেড আজ এলাকার এক অনুকরণীয় খামারি। নওগাঁর আত্রাই উপজেলার প্রত্যন্ত আটগ্রামের এই যুবক ইংরেজিতে অনার্স শেষ করেও চাকরির পেছনে না ছুটে বেছে নিয়েছেন গবাদি পশু পালনকে। 

মাত্র ৪৬ হাজার টাকার সঞ্চয়, যা তিনি টিউশনি করে জোগাড় করেছিলেন, তা দিয়েই শুরু করেন খামার গড়ার পথচলা। এখন তার খামারে লাখ টাকার গরু, ছাগল ও দুধের ব্যবসা। শুধু নিজের পরিবার নয়, তিনি আশপাশের অনেক পরিবারকে দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে আসার প্রেরণাও দিচ্ছেন। অভাবকে জয় করে ঘুরে দাঁড়ানোর এই গল্প শুধু উদ্যোক্তার নয়, বরং আটগ্রামের স্বপ্ন দেখার এক নতুন দিগন্ত।

দরিদ্র পরিবারের সন্তান জেডের বেড়ে ওঠা কষ্টের মাঝেই। বাবা বেলায়েত হোসেনের তিন বিঘা ফসলি জমিতে একমাত্র ইরি-বোরো ফসল হতো। প্রতিবছরের বন্যায় সে ফসলও ঠিকমতো ঘরে উঠত না।

আর্থিক কষ্টে দিন পার করতে হতো। দুই ভাই-বোনের মধ্যে ছোট জেড ২০১৯ সালে ইংরেজিতে অনার্স শেষ করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন শুরু থেকেই।

চাকরির পেছনে না ছুটে জেড মন দিলেন খামারে। টিউশনির জমানো ৪৬ হাজার টাকা দিয়ে একটি গাভি কিনে যাত্রা শুরু। এখন তার খামারে ১২টি গরু ও ৪টি উন্নত জাতের ছাগল রয়েছে। এর মধ্যে শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান ও ক্রস জাতের গরু রয়েছে। বিক্রিযোগ্য ষাঁড়ও আছে চারটি।

সব মিলিয়ে খামারে এখন প্রায় ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকার গবাদি পশু। প্রতিদিন গাভি থেকে ১২-১৪ লিটার দুধ পাওয়া যায়, যা দিয়ে পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে স্থানীয়দের চাহিদা পূরণ করা যায়।

প্রাকৃতিক খাবারেই পশু লালন-পালন করেন জেড। সামান্য জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছেন। ধান কাটার পর খড় দিয়ে ঘাসের ঘাটতি মেটালেও কিছু সময় বাইরের এলাকা থেকে খড় কিনতে হয়। তার খামার দেখে গ্রামের আরও অনেকেই এখন উন্নত জাতের গরু পালন শুরু করেছেন।

জেড বলেন, ‘অভাব কাঁধে নিয়েই বড় হয়েছি। বাবা একসময় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। আমি ভাবতাম, কীভাবে এ অবস্থার পরিবর্তন করা যায়। তাই চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করি। এখন আর অভাব নেই। ঋণও নেই।’

তিনি মনে করেন, দারিদ্র্য বিমোচনের প্রথম ধাপ হলো ঋণমুক্ত থাকা। আর সে পথে সবচেয়ে বড় সহায়ক গবাদি পশু পালন। তার একটাই স্বপ্নÑ গ্রামের মানুষ যেন একদিন আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে।

জেডের বাবা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘একসময় সংসারে খুব কষ্ট ছিল। ছেলে যখন পড়াশোনা শেষ করে খামারে মন দেয়, তখন থেকেই জীবনে পরিবর্তন আসে। ইচ্ছা আছে, বড় খামার হলে হতদরিদ্র মানুষকে গাভি দিয়ে সহযোগিতা করব। ইতিমধ্যেই দুইটি পরিবারকে গাভি দিয়েছি।’

জেডের প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগে দেশি গরু পুষতাম। জেডকে দেখে উন্নত জাতের গরু কিনেছি। এখন আমার খামারে ৬টি গরু আছে। সব পরামর্শই ওর কাছ থেকেই নিই।’

নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহফুজার রহমান বলেন, ‘ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় চলছে। খুব শিগগিরই প্রাণিসম্পদ ব্যাংক গঠনের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

আত্রাইয়ের প্রত্যন্ত গ্রামে এক তরুণের প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে বাস্তবতা। প্রমাণ হচ্ছে, সুযোগ পেলে পিছিয়ে থাকা মানুষেরাও নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারে। জমিনের কাছ থেকে উঠে আসা গল্পগুলো ঠিক এমনই অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে দাঁড়ায়।

Link copied!