মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সাদিয়া সুলতানা রিমি 

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫, ১১:৩৬ এএম

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম: সংযোগ না বিচ্ছিন্নতা?

সাদিয়া সুলতানা রিমি 

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫, ১১:৩৬ এএম

সাদিয়া সুলতানা রিমি 

সাদিয়া সুলতানা রিমি 

আধুনিক প্রযুক্তির যুগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ঝড়পরধষ গবফরধ) আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটি আমাদের একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন, তথ্য আদান-প্রদান এবং বিনোদনের এক অসাধারণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে আসছে বারবার- এই ডিজিটাল সংযোগ কি আমাদের সামাজিকভাবে আরও বেশি করে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে কী? 

সাধারণত মানুষ একে অপরের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে, গল্প করে এবং সময় কাটিয়ে সম্পর্ক গড়ে তুলত। একে অপরের সঙ্গে একটি কফি শপে দেখা করা, বন্ধুর বাড়িতে যাওয়া, বা পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়া ছিল সাধারণ বিষয়। এই ধরনের মুখোমুখি মিথস্ক্রিয়া আমাদের সম্পর্কগুলোকে গভীর এবং অর্থপূর্ণ করত। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া আসার পর থেকে এই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গেছে। এখন আমরা আমাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে মেসেজ, ভিডিও কল এবং লাইকের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকি। একটি জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এখন আর দেখা করার প্রয়োজন হয় না, শুধু একটি মেসেজ বা একটি পোস্টই যথেষ্ট। এর ফলে, আমাদের বাস্তবজীবনের যোগাযোগ কমে যাচ্ছে। অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশি সময় কাটায়, তারা বাস্তব জীবনে তাদের বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে কম সময় কাটায়। এই ডিজিটাল নির্ভরতা আমাদের মুখোমুখি যোগাযোগের দক্ষতা কমিয়ে দিচ্ছে। আমরা এখন আর অন্যের মুখের অভিব্যক্তি, শরীরের ভাষা বা কণ্ঠস্বরের সূক্ষ্মতা বুঝতে পারি না, যা একটি সম্পর্কের গভীরতার জন্য অপরিহার্য। সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা প্রায়শই নিজেদের জীবনের একটি নিখুঁত সংস্করণ উপস্থাপন করি। এতে আমরা আমাদের জীবনের খারাপ দিকগুলো লুকিয়ে রাখি এবং শুধু ভালো দিকগুলো তুলে ধরি। এটি অন্যদের মধ্যে ঈর্ষা এবং হীনম্মন্যতার অনুভূতি তৈরি করতে পারে। যখন একজন ব্যক্তি তার বন্ধুদের জীবনের ‘নিখুঁত’ দিকগুলো দেখে, তখন সে নিজের জীবনকে সেই মাপকাঠিতে বিচার করতে শুরু করে এবং নিজেকে অযোগ্য মনে করে। এটি সমাজে এক ধরনের মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি করে।

সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের শত শত বা হাজার হাজার ‘বন্ধুর’ সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ করে দেয়। কিন্তু এই সংযোগগুলো কতটা গভীর? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, এই সম্পর্কগুলো শুধু ডিজিটাল লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এটি আমাদের মধ্যে এক ধরনের গভীর একাকিত্বের অনুভূতি তৈরি করে। আমাদের কাছে অনেক বন্ধু আছে, কিন্তু যখন আমাদের প্রকৃত সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তখন আমরা প্রায়শই একা হয়ে যাই। প্রকৃতপক্ষে, সোশ্যাল মিডিয়া একটি অদ্ভুত নিঃসঙ্গতার জন্ম দিয়েছে। একদিকে, আমরা আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষের সঙ্গে যুক্ত আছি, কিন্তু অন্যদিকে, আমরা আগের চেয়ে অনেক বেশি একা। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশি সময় কাটায়, তাদের মধ্যে একাকিত্ব এবং বিষণœতার লক্ষণ বেশি দেখা যায়। এর কারণ হলো- এই প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের মধ্যে একটি মিথ্যা সংযোগের অনুভূতি তৈরি করে, যা বাস্তবজীবনে অনুপস্থিত। সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের চারপাশে একটি ডিজিটাল দেয়াল তৈরি করে, যা আমাদের বাস্তবজীবনের সম্পর্কগুলোকে প্রভাবিত করে। এটি আমাদের কাছের মানুষদের থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং আমাদের মধ্যে একটি মানসিক দূরত্ব তৈরি করে।

অনলাইন সম্পর্কগুলো প্রায়শই অগভীর এবং ক্ষণস্থায়ী হয়। সোশ্যাল মিডিয়াতে একজন অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধু হওয়া খুব সহজ, আবার তাকে ব্লক করাও সহজ। এই ধরনের সম্পর্ক গড়তে কোনো বাস্তব চেষ্টা বা প্রতিশ্রুতি লাগে না। কিন্তু বাস্তবজীবনে একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে অনেক সময়, চেষ্টা এবং ভালোবাসা লাগে। একটি সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য দুজন মানুষের মধ্যে আস্থা, বিশ্বাস এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া প্রয়োজন, যা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সাধারণত অনুপস্থিত। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে ভুল বোঝাবুঝির ঝুঁকিও বেশি। একটি মেসেজ বা কমেন্ট ভুলভাবে বোঝা যেতে পারে, যা সম্পর্ক নষ্ট করে দিতে পারে। বাস্তবজীবনে, আমরা একজন মানুষের মুখের অভিব্যক্তি, শরীরের ভাষা এবং কণ্ঠস্বর থেকে তার মনের ভাব বুঝতে পারি, যা অনলাইন যোগাযোগে অনুপস্থিত। এর ফলে, ভুল বোঝাবুঝি এবং মনোমালিন্যের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

এ ছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়াতে ফেক নিউজ এবং ভুল তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের তথ্য সমাজে অবিশ্বাস এবং বিভাজন সৃষ্টি করে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় ইস্যুতে মানুষ নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে। এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রায়শই এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়ে, যা সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ঘৃণা এবং বিভাজন সৃষ্টি করে। এর ফলে, সমাজে একটি বিভাজনের দেয়াল তৈরি হয় এবং মানুষ একে অপরের প্রতি সহনশীলতা হারাতে শুরু করে। অন্যদিকে, সাইবার বুলিং একটি মারাত্মক সমস্যা। সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষ সহজেই একে অপরকে আক্রমণ করতে পারে। নাম প্রকাশ না করে বা ছদ্মবেশে অন্যদের অপমান করা বা হেনস্তা করা খুব সহজ। এর ফলে, সমাজে ঘৃণা, হতাশা এবং মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়, যা আমাদের সমাজকে আরও বেশি বিচ্ছিন্ন করে তোলে।

এতসব নেতিবাচক দিক সত্ত্বেও, সোশ্যাল মিডিয়ার কিছু ইতিবাচক দিকও আছে। এটি আমাদের দূরবর্তী বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে সাহায্য করে। যারা অন্য দেশে বসবাস করে, তাদের জন্য এটি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকার এক দারুণ উপায়। বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন এবং জনসচেতনতা প্রচারেও সোশ্যাল মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আমাদের নতুন তথ্য জানতে এবং নতুন দক্ষতা অর্জন করতেও সাহায্য করে। সোশ্যাল মিডিয়া বিভিন্ন সম্প্রদায়কে একত্রিত করতেও সাহায্য করে। একই ধরনের শখ বা আগ্রহ আছে এমন মানুষরা এখন সহজেই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, যা আগে সম্ভব ছিল না।

সোশ্যাল মিডিয়া কি আমাদের সমাজকে আরও বেশি বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর হলো, হ্যাঁ, এটি অনেকাংশে সত্য। সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার একটি মাধ্যম হলেও, এটি আমাদের বাস্তবজীবনের সম্পর্কগুলোকে দুর্বল করে দিচ্ছে এবং সমাজে বিভাজন তৈরি করছে।

কিন্তু এর মানে এই নয় যে, সোশ্যাল মিডিয়া সম্পূর্ণ খারাপ। যদি আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, তবে এটি আমাদের সমাজকে আরও বেশি বিচ্ছিন্ন করে দেবে। আমাদের উচিত সোশ্যাল মিডিয়াকে শুধুমাত্র একটি টুল হিসেবে ব্যবহার করা, যা আমাদের বাস্তবজীবনের সম্পর্কগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, ধ্বংস করতে নয়।

আমাদের প্রয়োজন হলো- ডিজিটাল এবং বাস্তবজীবনের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখা। যখন আমরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি, তখন আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের আসল জীবন আমাদের ডিজিটাল জগতের বাইরে। আমাদের নিজেদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান মুহূর্তগুলো ডিজিটাল স্ক্রিনের পেছনে নয়, বরং বাস্তবজীবনের অভিজ্ঞতাগুলোর মধ্যে লুকানো থাকে। তাই, আসুন আমরা আমাদের ফোনগুলোকে দূরে রাখি এবং একে অপরের সঙ্গে কথা বলি, হাসাহাসি করি এবং মূল্যবান সময় কাটাই।

সাদিয়া সুলতানা রিমি 
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!