নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনায় এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক, যার মধ্যে ৫ জন গুরুতর অবস্থায় নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় পুরো ইপিজেড এলাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসন ইপিজেড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাতটার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান সাংবাদিকদের ব্রিফ করে এ ঘোষণা দেন।
তিনি জানান, ‘শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি অচিরেই প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করবে। ইপিজেডে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা ম্যানেজমেন্টের কোনো গাফিলতি আছে কি না তা খুঁজে দেখবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ইপিজেড খুলে দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানা গেছে, এভারগ্রিন কোম্পানির শ্রমিকরা কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছিলেন। সোমবার কোম্পানি কর্তৃপক্ষের ঘোষণার জের ধরে মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা ইপিজেডের প্রধান গেটে অবস্থান নেন।
পরে তারা অন্য কোম্পানির শ্রমিকদের কাজ শুরুতে বাধা দিতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাধে। এই সময় হাবিব নামে একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন এবং হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শ্রমিকদের অভিযোগ, তারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি আদায়ের জন্য অবস্থান নিয়েছিলেন। মমিনুর রহমান বলেন, ‘আমরা অন্য কারখানার শ্রমিকদের কোনো বাধা দিইনি। বরং তারা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘তখন সেনাবাহিনী ও পুলিশ একটি নারী শ্রমিককে মারধর করছিল। আমরা এগিয়ে গেলে তারা নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। গুরুতর আহত একজনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনি মারা যান।’
অন্য একজন শ্রমিক মো. রায়হান বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করছি, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।’
লিপি আক্তার নামে একজন শ্রমিক বলেন, ‘আমরা ডিউটি করতে গিয়েছিলাম, দেখি গেট বন্ধ। হঠাৎ করে সেনাবাহিনী-পুলিশ আমাদের ওপর গুলি চালায়। আমাদের এক ভাই নিহত হয়েছেন। এর দায়ভার কে নেবে? সরকারকে জবাব দিতে হবে।’
৫৬ বিজিবি নীলফামারীর অধিনায়ক লে. কর্নেল এস. এম. বদরুদ্দোজা বলেন, ‘বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ নেই। প্রশাসনিক পর্যায়ে কাজ চলছে। ইপিজেডের সকল কোম্পানি বর্তমানে বন্ধ।’
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. তানভীরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘মোট ৬ জনকে হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে হাবিবকে আমরা মৃত অবস্থায় পাই। বাকিরা চিকিৎসাধীন।’
বেপজার নির্বাহী পরিচালক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘যিনি টাকা নিবেন এবং যিনি টাকা দিবেন তাদের মধ্যে যোগাযোগের ঘাটতির কারণে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে। মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
নীলফামারী জেলা পুলিশ সুপার এ. এফ. এম. তারিক হোসেন খান বলেন, ‘নিহত হাবিবের পরিবার জানিয়েছে তাদের কোনো দাবি নেই। তাই ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন