বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতির অন্যতম দল খেলাফত মজলিস। একসময় চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক তারা। গত একাধিক সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে প্রার্থী দিয়েছে দলটি। আগামী সংসদ নির্বাচনেও তারা প্রার্থী দেবে। সংসদীয় ৩০০ আসনকে টার্গেট করে প্রস্তুতি চালানো হচ্ছে। তারা সিলেটের সব কয়টি আসনের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে তাদের এলাকায় তৎপরতা চালাতে নির্দেশনা দিয়েছে। তবে দলটির তরফ থেকে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে কাউকে সিগনাল দেওয়া হয়নি।
বলা হচ্ছে, বিএনপির সঙ্গে জোট হলে তারা দলটির প্রতি সম্মান দেখিয়ে এ আসন ছেড়ে অন্য আসনে প্রার্থিতার দাবি তুলবে। সিলেট অঞ্চলে খেলাফত মজলিসের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। বিশেষ করে কওমি ঘরানার হওয়ায় কওমি অঙ্গনে তাদের একটি শক্ত অবস্থান এ অঞ্চলে। সিলেটের বিভিন্ন আন্দোলনে দলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
দলের শীর্ষ একটি সূত্র জানায়, চারদলীয় জোট এখন খাতা-কলমে নেই। আগামী নির্বাচনে প্রত্যেকটি দল এককভাবে প্রার্থিতা করতে পারে। তবে সমমনা দল নিয়ে একটি ইসলামি মোর্চা বা ঐক্য গঠনের আলোচনা চলছে। এটি সম্ভব হলে এবং দেন-দরবারে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত রাখতে পারলে খেলাফত মজলিস সেই মোর্চায় থাকবে। তা না হলে তারা এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে।
অবশ্য সূত্রটি জানিয়েছে, মোর্চার চেয়ে বিএনপির সঙ্গে জোটে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথাও বলেছেন। ফলে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে না আসা পর্যন্ত এ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে যাচ্ছে না তারা। তাই প্রাথমিক তালিকা করে সম্ভাব্য প্রার্থীদের এলাকায় পাঠিয়েছে দলটি।
দলের যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসির আলী দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, দেশের সব কয়টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা। প্রার্থী যাচাই-বাছাই চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি আসনে প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাদের নির্বাচনি এলাকায় গিয়ে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সিলেটের ৬ আসনেই আপাতত আমরা প্রার্থী দেওয়ার কথা ভেবে এগুচ্ছি।
তবে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলে জোটের স্বার্থে আমরা প্রার্থী কাটছাঁট করব। ইসলামি ঐক্য বা জাতীয় ঐক্য যা-ই হোক প্রয়োজন হলে এবং দলের সিদ্ধান্ত হলে তা করা হবে। তিনি বলেন, আমি আগেও নির্বাচন করেছি। এবার জনগণের নির্বাচনি আকাক্সক্ষা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় আকাশচুম্বি। মানুষ মুখিয়ে আছে ভোটের জন্য। তাদের আকাক্সক্ষা প্রতিফলনের জন্য খেলাফত মজলিস মাঠে থাকবে।
দলের স্থানীয় সূত্র জানায়, জামায়াতে ইসলামী তালিকা প্রকাশ করলেও খেলাফত মজলিস আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো প্রাথমিক তালিকা তারা প্রকাশ করেনি। তবে নিজেদের দলীয় ফোরামে তালিকা প্রণয়ন করে সেই লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে নির্বাচনি তৎপরতা শুরু করা হয়েছে। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনি এলাকায় ঘনঘন আসা-যাওয়া করছেন, দলীয় সভা-সমাবেশ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।
সূত্র জানায়, সিলেট-২ আসনে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসির আলী প্রার্থিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলের প্রভাবশালী এই নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী এবং দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্র মজলিসের সাবেক সভাপতি। দলের অন্যতম নীতিনির্ধারক তিনি। এর আগে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তিনি দলের হয়ে প্রার্থিতা করেন। প্রথম দিকে জোটের ব্যানারে প্রার্থী হওয়ার একটি সম্ভাবনা তৈরি হলেও পরবর্তীতে আলাদা নির্বাচন করায় তিনি এককভাবে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদির লুনা।
যদিও বিএনপির শীর্ষ নীতিনির্ধারণী মহলের বরাত দিয়ে সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে জোট হলে এই আসন তাদের দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সিলেট-২ এ তাদের শক্ত প্রার্থী থাকায় আসনটি চাইবে তারা। সেক্ষেত্রে এরই মধ্যে বিএনপির তাহমিনা রুশদির লুনাকে তার বাবার বাড়ির আসনে প্রার্থী করা হতে পারে। সিলেট-৩ আসনে প্রাথমিক তালিকায় রয়েছেন সিলেট জেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মোহাম্মদ দিলওয়ার হোসেন। এর আগেও তিনি চারদলীয় জোট থেকে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনি দলীয় প্রতীকে প্রার্থীও হন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা করেন তিনি। এ আসনে বিএনপির একাধিকজন প্রার্থী হতে চাইছেন। এর মধ্যে অন্যতম রয়েছেন, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি আব্দুল মালিক, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। অতীতে এ আসনে একাধিকবার সংসদ সদস্য ছিলেন বিএনপির শফি আহমদ চৌধুরী।
সিলেট-৪ আসনে দলটির কেন্দ্রীয় উলামাবিষয়ক সম্পাদক, দেশের আলোচিত ও জনপ্রিয় ইসলামিবিষয়ক বক্তা মুফতি আলী হাসান উসামা। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে সিলেট থেকে গিয়ে তৎপরতা চালাচ্ছেন মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। এই এলাকা ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল। জোট হলে বিষয়টি বিবেচনা করে খেলাফত মজলিসকে প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
সিলেট-৫ আসনে যুক্তরাজ্য খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা সাদিকুর রহমানকে প্রাথমিক তালিকায় নাম রাখা হয়েছে। এ আসনে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন। দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও প্রভাবশালী নেতা ড. এনামুল হক চৌধুরী। সিলেটের আসনগুলোর যে কয়টিতে বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে মোটামুটিভাবে নিশ্চিত করে ধরে নেওয়া হচ্ছে এই আসনের ড. এনামুল হক চৌধুরী তাদের একজন।
সিলেট-৬ আসনে রুহুল আমীন সাদি (সাইমুম সাদী) এবং মুফতি আবুল হাসানকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে মাঠে নামানো হয়েছে। এ আসনে বিএনপির শক্ত কোনো প্রার্থী এখনো আলোচনায় আসেননি।
সূত্র জানায়, শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে বা ইসলামি কোনো মোর্চার সঙ্গে জোট হোক বা না হোক দলটি সিলেটের সব কয়টি আসনে প্রার্থী দেবে। আর জোটে হলে সিলেট-২, সিলেট-৩ এবং সিলেট-৪ আসন দাবি করবে।
সিলেট জেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মোহাম্মদ দিলওয়ার হোসেন বলেন, সিলেট-১ আসন ছাড়া বাকি সব আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার নির্দেশনা পেয়েছি। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। আগামী ১৫ তারিখ দল থেকে প্রাথমিক তালিকার ঘোষণা আসতে পারে। তিনি বলেন, দল বিএনপির সঙ্গে নাকি ইসলামি মোর্চার সঙ্গে নাকি এককভাবে নির্বাচন করবে, সেটি সময়ই বলে দেবে। আমরা নির্বাচনের আগেই সেই সিদ্ধান্ত নেব।