শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৫, ০৪:২৯ এএম

চোরাই ব্যান্ডউইথ কেনাবেচা 

আইটিসির থেকে আইআইজিকে কয়েক গুণ জরিমানা

শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৫, ০৪:২৯ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

নিয়মবহির্ভূতভাবে ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ আমদানির ঘটনায় পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এগুলোর মধ্যে চোরাই ব্যান্ডউইথ নিয়ে আসা তিনটি ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্টোরিয়াল ক্যাবল (আইটিসি) অপারেটর এবং বাকি দুটি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠান। তিন আইটিসি অপারেটর অর্থাৎ, চোরাই ব্যান্ডউইথ নিয়ে এসে বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মাত্র সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পক্ষান্তরে আইটিসির থেকে ব্যান্ডউইথ কেনা তিন আইআইজি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ২২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে জরিমানার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি বলে মনে করছে আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলো।

সাবমেরিন ক্যাবলের বিকল্প হিসেবে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ দেশে আমদানি করতে ছয়টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়েছে সরকার। আইটিসি অপারেটর হিসেবে পরিচিত এই ছয় প্রতিষ্ঠান হচ্ছেÑ সামিট কমিউনিকেশন, ফাইবার অ্যাট হোম গ্লোবাল লিমিটেড, ম্যাংগো টেলিসার্ভিস, ওয়ান এশিয়া অ্যালায়েন্স, বিডিলিংক কমিউনিকেশন এবং নভোকম লিমিটেড। আইটিসি অপারেটরদের আমদানি করা ব্যান্ডউইথ ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তথা এনটিটিএনের মাধ্যমে পৌঁছায় আইআইজি অপারেটরদের কাছে। তবে গত এপ্রিলে অভিযোগ ওঠে, কয়েকটি আইটিসি অপারেটর অনুমোদনহীনভাবে ভারত থেকে ব্যান্ডউইথ আনছে। আর সেই ব্যান্ডউইথ এনটিটিএন ছাড়াই সরাসরি যাচ্ছে কয়েকটি আইআইজি প্রতিষ্ঠানের কাছে।
 
আইটিসি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিদর্শনে আইটিসি গাইডলাইন এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১-এর ব্যত্যয় পেয়েছে বলে দাবি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির। যেমনÑ বিডি লিংক কমিউনিকেশন লিমিটেড নামক আইটিসি অপারেটরের ‘র‌্যাক’-এর (ডাটা সেন্টারের স্টোরেজ ব্যবস্থার স্থান) মধ্যে আইআইজি প্রতিষ্ঠান লেভেল-৩ ক্যারিয়ার লিমিটেডের অনুমোদনহীন দুটি সুইচ পেয়েছে বিটিআরসি। এ-সংক্রান্ত বিডি লিংক এবং লেভেল-৩-এর মধ্যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার শেয়ারিং চুক্তি নেই বলেও বিটিআরসির এক নথিতে উল্লেখ করা হয়। এমন চুক্তি না থাকা ইনফ্রাস্ট্রাকচার শেয়ারিং গাইডলাইনের অনুচ্ছেদ-৪-এর পরিপন্থি। এ ছাড়াও বিডি লিংকের ট্রান্সমিশন সুবিধা ব্যবহার করে লেভেল-৩ আন্তর্জাতিক সরবরাহকারী থেকে সরাসরি ব্যান্ডউইথ কিনেছে। কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের এক নথি অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাসে লেভেল-৩কে দেওয়া ৫০ জিবিপিএস (গিগাবিট প্রতি সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথের তথ্যও বিটিআরসিতে গোপন করে বিডি লিংক। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে কমিশন।

একই রকম অভিযোগ উঠেছে আরও দুই আইটিসি অপারেটর নভোকম লিমিটেড এবং ফাইবার অ্যাট হোম গ্লোবাল লিমিটেডের বিরুদ্ধে। নভোকমের র‌্যাকের মধ্যে ১২০ জিবিপিএস ক্ষমতাসম্পন্ন লেভেল-৩-এর সুইচ পেয়েছে বিটিআরসি। পাশাপাশি লেভেল-৩কে ৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহের তথ্য বিটিআরসি থেকে গোপনও করেছে নভোকম। এ ছাড়া আরো বেশ কয়েকটি অভিযোগে নভোকম ও ফাইবার অ্যাট হোম গ্লোবালকে ৫০ লাখ করে মোট ১ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। সব মিলিয়ে অবৈধ ব্যান্ডউইথ আমদানি ও আইআইজি পর্যায়ে সরবরাহের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিটিআরসি।

তবে আইটিসি অপারেটরদের কাছ থেকে ব্যান্ডউইথ নেওয়ার অভিযোগে দুই আইআইজি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে ২২ কোটি টাকা। ইনফ্রাস্ট্রাকচার শেয়ারিং গাইডলাইনের ব্যত্যয়, বিটিআরসির অনুমোদন ছাড়া সরাসরি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থেকে ব্যান্ডউইথ ক্রয়, কমিশনে ১০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের তথ্য প্রদান না করা এবং চুক্তি সম্পাদন ছাড়া ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করায় লেভেল-৩কে ১০ কোটি টাকা প্রশাসনিক জরিমানা আরোপ করে বিটিআরসি। পাশাপাশি আগামী ১ জুলাই থেকে লেভেল-৩-এর ২৫ শতাংশ ব্যান্ডউইথ ক্যাপিং করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

অন্যদিকে, আরেক আইআইজি আর্থ টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেডকে ১২ কোটি টাকা প্রশাসনিক জরিমানা আরোপ করেছে বিটিআরসি। একই সঙ্গে লেভেল-৩-এর মতো ১ জুলাই থেকে আর্থ টেলিকমিউনিকেশন্সের ২৫ শতাংশ ব্যান্ডউইথ ক্যাপিং করারও আদেশ দিয়েছে কমিশন। বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রদান, ‘পপ’ (পয়েন্ট অব প্রেজেন্স) হিসেবে ঘোষণা ছাড়াই ব্যান্ডউইথ ব্যবহার, এনটিটিএনের বদলে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ঝুলন্ত অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন এবং চুক্তি ছাড়া ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করার অভিযোগে আর্থ টেলিকমকে এই জরিমানা করে বিটিআরসি।

তবে বিটিআরসির এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে আর্থ টেলিকম। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এসব অভিযোগের সিংহভাগই সঠিক নয়। আর্থ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল হোসেন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঝুলন্ত ক্যাবলের বিষয়টি সঠিক নয়। যদি ঝুলন্ত তারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরবরাহ করে থাকি, তাহলে সেই তারগুলো জব্দ করা হোক। কোথায় সেই ক্যাবল? প্রতি মাসে ২০৪ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের তথ্য গোপনার রাখার যে অভিযোগ এসেছে, সেটাও প্রত্যাখ্যান করছি। কারণ আইটিসি থেকে যে ব্যান্ডউইথ নেই, সেই ব্যান্ডউইথের হিসাবই কমিশনে দিয়েছি। আইটিসি অপারেটরগুলোও তো তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানেও আমাদের ব্যান্ডউইথের তথ্য আছে। আর ‘পপ’ ডিভাইসের বিষয়ে যেটা বলা হচ্ছে, সে বিষয়েও ভুল বোঝা হচ্ছে। কিছু ডিভাইস আছে, তবে সেগুলো অপ্রদর্শিত ব্যান্ডউইথ সরবরাহের জন্য নয়। কম অপারেশনাল খরচে গ্রাহকদের উন্নত সেবা দিতে আমরা আমাদের সরবরাহব্যবস্থায় কিছু কারিগরি উন্নয়ন করেছি। বেনাপোল থেকে আসা ব্যান্ডউইথ আগে ঢাকায় আসত, তারপর যশোরে গ্রাহকদের কাছে যেত। এতে আমাদের খরচ বেশি হতো আবার গ্রাহকের ইন্টারনেটে ল্যাটেন্সি বেশি থাকত। আবার একবার ঢাকায় থাকা ডাটা সেন্টারে আগুন লাগায় দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছিল। এ ধরনের বিষয় এড়ানোর জন্যই ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবস্থায় কিছু ডিভাইস বসানো হয়েছে। এই ডিভাইসগুলো আবার ফাইবার অ্যাট হোমের স্থাপনাতেই ছিল। ফাইবার অ্যাট হোমের একই নামে আইটিসি ও এনটিটিএন লাইসেন্স। ডিভাইসগুলো ফাইবার অ্যাট হোমের এনটিটিএন অংশেই ছিল। কাজেই এনটিটিএনের বদলে নিজস্ব ব্যবস্থায় ব্যান্ডউইথ সরবরাহের তথ্যও সঠিক নয়। জরিমানার চিঠি পাওয়ার পর এরই মধ্যে বিটিআরসিকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছি।

এদিকে অবৈধ ব্যান্ডউইথ আমদানিকারকদের তুলনায় ব্যবহারকারীদের কয়েক গুণ বেশি জরিমানা করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ইন্টারনেট সঞ্চালন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক ব্যবসায়ী বলেন, যিনি ইন্টারনেট আনলেন, তার থেকে প্রায় পাঁচ গুণ জরিমানা করা হয়েছে তাকে, যিনি সেই ইন্টারনেট কিনেছেন। বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতাকে বেশি জরিমানা করা হলো। বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে চাননি কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র বলছে, ব্যান্ডউইথ যদি অবৈধ না হয়ে বৈধ হতো আর আইআইজিগুলো যদি সেগুলো নিয়মমাফিক বিক্রি করত, তাহলে রেভিনিউ শেয়ারিং বাবদ কমিশন একটা অংশ পেত। সেই অংশের হিসাব করেই আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরিমানা করা হয়েছে।

Link copied!