ড্রাগন ফল দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি পুষ্টিগুণের দিক থেকেও অনন্য। এখন দেশেই চাষ হচ্ছে উপকারী এই ফল। ফলে সর্বত্রই দেখা মিলছে লাল টুকটুকে ড্রাগন ফলের। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এতে, যা বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়। গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে।
প্রধান পুষ্টিগুণ (প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফল)
শক্তি: ৫০-৬০ ক্যালোরি।
শর্করা: ১১-১৩ গ্রাম।
প্রোটিন: ১-২ গ্রাম।
ফাইবার: ৩ গ্রাম।
চর্বি: ০.১-০.৬ গ্রাম।
ভিটামিন সি: ৩-৪০% দৈনিক চাহিদা।
আয়রন: ৮-১০% দৈনিক চাহিদা।
ক্যালসিয়াম: ১৮-২০ মি.গ্রা.
ম্যাগনেশিয়াম: ১০% দৈনিক চাহিদা।
কখন ড্রাগন ফল খাওয়ার উপযুক্ত সময়?
ড্রাগন ফল খাওয়ার সবচেয়ে সহজ এবং ভালো নিয়ম হলো এটি খোসা ছাড়িয়ে টুকরো করে খাওয়া, অথবা সালাদ অথবা জুস হিসেবে খাওয়া। এটি পরিমিত পরিমাণে, যেকোনো সময়, বিশেষ করে সকাল অথবা দুপুরে খাওয়া যেতে পারে।
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া: প্রথমে ফলটি ভালো করে ধুয়ে, এরপর খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। ভেতরে থাকা সাদা বা হালকা গোলাপি অংশটুকু কেটে ছোট ছোট টুকরো করে নিতে পারেন।
সালাদে ব্যবহার: ড্রাগন ফলের টুকরোগুলো অন্যান্য ফলের সাথে মিশিয়ে সালাদ তৈরি করতে পারেন। এটি ভালো স্বাদের সাথে সাথে পুষ্টিগুণও বাড়িয়ে দেবে।
জুস হিসেবে খাওয়া: ফলের টুকরোগুলো ব্লেন্ড করে জুস তৈরি করতে পারেন। এতে ভিটামিন সি-এর পরিমাণ আরও বেড়ে যায়, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
অন্যান্য খাবার সাথে: ড্রাগন ফলের টুকরোগুলো গ্রীক লস্সি, আইসক্রিম, বা অন্যান্য ফলের সাথেও মিশিয়ে খেতে পারেন।
ড্রাগন ফল খেলে কি শরীরে রক্ত বাড়ে?
ড্রাগন রক্তের ক্ষতিকারক চর্বির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। দাঁত, হাড়, চুল, নখ মজবুত করার জন্য আয়রন, ক্যালসিয়াম ও খনিজ লবণের দরকার। ড্রাগন ফলে এই খাদ্য উপাদানগুলো রয়েছে উচ্চ মাত্রায়। ড্রাগন আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য আয়রন অপরিহার্য।
ত্বকে যেসব উপকার করে ড্রাগন ফল
ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। নিস্তেজ এবং ক্লান্ত ত্বকে উজ্জ্বলতা নিয়ে আসে এই ফল। ড্রাগন ফলে উপস্থিত ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে। ফলে বলিরেখা এবং বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।
ড্রাগন ফল খেলে কি ব্রণ হয়?
ড্রাগন ফলের প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য এটিকে ব্রণের মতো ত্বকের অবস্থার জন্য উপকারী করে তোলে । ফলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, অন্যদিকে ব্রণের চিকিৎসা এবং প্রশান্তিদায়ক প্রভাব প্রদানের ক্ষমতা এটিকে ত্বকের যত্নে একটি অলরাউন্ডার করে তোলে।
ড্রাগন ফল শুধু দৃষ্টিনন্দন ও সুস্বাদুই নয়, এতে রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্যকর উপাদান। নিয়মিত এই ফল খেলে শরীরের নানা দিক থেকে উপকার মেলে।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায় এবং ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
হজমে সহায়ক: এই ফলে থাকা ডায়েটারি ফাইবার হজমে সহায়তা করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: ড্রাগন ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, ফলে এটি ধীরে ধীরে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: এতে থাকা হেলদি ফ্যাট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারি: ড্রাগন ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ত্বকের বার্ধক্য কমায়, উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং চুলের স্বাস্থ্যোন্নয়নে সাহায্য করে।
রক্তস্বল্পতা দূর করে: ড্রাগন ফলে আয়রন থাকে, যা হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) প্রতিরোধে সহায়তা করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে: কম ক্যালোরি ও বেশি ফাইবারযুক্ত হওয়ায় এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
অ্যান্টিক্যান্সার গুণ রয়েছে: ড্রাগন ফলে থাকা বেটালাইন ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে: ড্রাগন ফলে থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেশিয়াম হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করে: এতে থাকা বিটা-ক্যারোটিন চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ, যা গর্ভাবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ড্রাগন ফল গর্ভকালে কোষ্ঠকাঠিন্য, হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি এবং ভ্রূণের বিকাশে সাহায্য করে।
যদিও ড্রাগন ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর ও অনেক উপকারে আসে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এর অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যারা অ্যালার্জিতে ভোগেন বা নির্দিষ্ট শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাদের সতর্ক থাকা উচিত।
ড্রাগন ফলের সম্ভাব্য অপকারিতা
অ্যালার্জি বা অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন- কিছু মানুষের শরীরে ড্রাগন ফল খাওয়ার পর চুলকানি, ফোলা, ত্বকে র্যাশ, বমি বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়া হতে পারে- ড্রাগন ফলে থাকা অতিরিক্ত ফাইবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত খেলে পেট ব্যথা, ঢেঁকুর, বা ডায়রিয়া হতে পারে।
রঙিন প্রস্রাব বা মল- লাল ড্রাগন ফল বেশি খেলে অনেক সময় প্রস্রাব বা মলের রং গোলাপি বা লালচে হতে পারে, যা অনেকে ভয় পেতে পারেন। এটি মারাত্মক নয়, তবে বেশি খেলে এমন হতে পারে।
রক্তে চিনি কমে যেতে পারে- ড্রাগন ফলে প্রাকৃতিক চিনি কম থাকলেও ডায়াবেটিস রোগী যদি ওষুধ ও ড্রাগন ফল একসাথে বেশি খান, তাহলে রক্তে গ্লুকোজ কমে যেতে পারে।
কিডনির রোগীদের জন্য সতর্কতা- এতে ম্যাগনেশিয়াম থাকে। কিডনি সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিরা অতিরিক্ত ম্যাগনেশিয়াম গ্রহণ করলে সমস্যা বাড়তে পারে।
অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়তে পারে- যদিও এটি ডায়েট-ফ্রেন্ডলি, কিন্তু একবারে অনেক বেশি খেলে এতে থাকা শর্করা ও ক্যালরি ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :