সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এফ এ শাহেদ 

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৫, ০৭:১১ এএম

আইন প্রয়োগের ঘাটতি থামেনি মব ভায়োলেন্স

এফ এ শাহেদ 

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৫, ০৭:১১ এএম

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

ধর্মীয় উসকানি, হেনস্তা ও ধর্মের অবমাননাসহ ‘মব ভায়োলেন্স’ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে উঠছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুন প্রেক্ষাপটে কিছু মহলের বেপরোয়া ও অতিউৎসাহী ক্রিয়াকলাপে হুমকির মুখে পড়েছে সামাজিক নিরাপত্তা। 

সম্প্রতি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার আউলিয়াবাদ এলাকায় ওলামা পরিষদের ব্যানারে চাপ প্রয়োগ করে চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধ করা হয়। এ ঘটনার দুই দিন আগে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় একটি পর্যটনকেন্দ্র থেকে পর্যটকদের বের করে দিয়েছেন স্থানীয় একদল ওলামা। একই সঙ্গে ওই এলাকায় কাউকে ঘুরতে না আসতেও নিষেধ করেন তারা। এর পর থেকেই চলছে নিরাপত্তার স্বাধীনতা নিয়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। 

ধর্মীয় ব্যানারে উসকানি দিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা সৃষ্টির জন্য তারা চিন্তিত বলে দাবি করেন ইসলামি রাজনৈতিক নেতারা। আর অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নিরাময়ের অভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে মব ভায়োলেন্সের মতো অপরাধ। যা দেশের ইমেজ ও নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গত ৮ মাসে এমন বিশৃঙ্খলায় মারা গেছেন ১৪৩ জন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনের যথাযথ ও কঠোর প্রয়োগ না থাকায় এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি অনেকটা দৃশ্যমান। যার কারণে মব ভায়োলেন্স বাড়ছে। একই সঙ্গে ছিনতাই, ডাকাতি, লুটপাটও বেড়েছে। হামলা ও হেনস্তার মতো ঘটনা নিত্যদিনের। এর নেতিবাচক প্রভাব দেশের সব শ্রেণির মানুষের ওপর পড়লেও বিশেষ করে নারীর নিরাপত্তাহীনতার চিত্র বহুমাত্রিক রূপ পায়।

বিশ্লেষকদের দাবি ধর্মীয় অপব্যাখ্যা, কিছু অতিউৎসাহী ব্যক্তির কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ধর্মীয় সংগঠনকে। আবার একটি বিশেষ গোষ্ঠী নারীদের দমিয়ে রাখতে পুরুষতান্ত্রিক বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে বলেও মত দেন তারা। তারা বলছেন, মব ভায়োলেন্সের কারণে মানুষ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছে না। অর্থনৈতিক অবস্থা দিনদিন খারাপের দিকে  যাচ্ছে। মবের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে অন্যায় স্বার্থ হাসিল করছে বিভিন্ন গোষ্ঠী। 

এদিকে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) মতে, ২০২৪ সালে মব-সংশ্লিষ্ট গণপিটুনির ঘটনায় সারা দেশে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসিনা সরকারের পতনের পরের চার মাসে এ সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের আট মাসে সারা দেশে মব বিশৃঙ্খলায় মারা গেছে ১৪৩ জন।

আসকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পট পরিবর্তনের পরের চার মাসে মৃত্যু হয় ৯৬ জনের। এ সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় তিনগুণ বেশি। অন্যদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের ৮ মাসে গণপিটুনিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৪৩ জন। 

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মব ভায়োলেন্সে এ বছরের জানুয়ারিতেই ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যেখানে ঢাকায় ৭ জন। ফেব্রুয়ারিতে মারা যাওয়া ১১ জনের মধ্যে ঢাকায় ৩ জন আর মার্চে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ঢাকায় ১৪ জন।

হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৪ সালে ২০১টি গণপিটুনির ঘটনায় ১৭৯ জন নিহত এবং ৮৮ জন আহত হয়। ২০২৩ সালে ১১৪টি ঘটনায় ৭৩ নিহত এবং ৯১ জন আহত হন। সে হিসাবে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি। তাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাসে ১১৪টি গণপিটুনির ঘটনায় ১১৯ জন নিহত এবং ৭৪ জন আহত হয়েছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ  ড. তৌহিদুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘২৪-এর অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে নানা ইস্যু নিয়ে মব ভায়োলেন্সের ঘটনা ঘটেছে এবং চলমান রয়েছে। এসব ঘটনা আইনের সঠিক ব্যবহার ও প্রয়োগের মাধ্যমে সমাধান করা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ছিল।’

তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করে বিশেষ স্বার্র্থ হসিলের উদ্দেশ্যে ভায়োলেন্স করতে চাইলে সরকারকে শক্ত হাতে তা দমন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের যেসব স্টেকহোল্ডার রয়েছেন, তাদের শক্ত অবস্থানে দেখা যাচ্ছে না। সরকারের দায়িত্বশীলরা দীর্ঘ সময়ের দোহাই দিয়ে এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার বিষয় চিন্তা করে শক্ত অবস্থানে নেই। যার ফলে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই মব ভায়োলেন্সকে অনেকেই অফলাইন ও অনলাইনে মব-জাস্টিস বলে বৈধ্যতা দেওয়ার কাজ করে। আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত হলে এটি বন্ধ হতো। এই রোগ যদি দ্রুত নিরাময় করা না যায়, তবে এটি ছোঁয়াছে রোগের মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে দেশে সেই পেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছে। যা দেশের শিল্প-সংস্কৃতির জন্য হুমকির।’

তিন আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকে এ ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়া প্রয়োজন ছিল, কিন্তু তারা তা করেনি। ফলে এই ব্যাধি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এখন চাইলেও রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। অপরাধ বন্ধে এখন কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ করতে হবে।’

‘মনে রাখতে হবেÑ ট্যুরিজম সেক্টরে একবার আতঙ্ক সৃষ্টি হলে তার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। যার প্রভাব দেশের অর্থনীতিসহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন পরে দেশে ট্যুরিজমের যে সম্ভাবনার দ্বার খুলেছিল, তা হুমকির মুখে পড়বে’Ñ বলেন ড. তৌহিদুল হক। 

ভায়োলেন্সের বিষয়ে খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা একটি রাজনৈতিক দল। তাই দেশের প্রচলিত আইনের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের কর্মকাণ্ডকে সর্মথন করি না। আমরা প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল; আইনের ব্যত্যয় হয় এমন কোনো কাজকে সমর্থন করি না।’

তিনি বলেন, ‘ইসলামি দল হিসেবে ও ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে যে বিষয়গুলো সমর্থন করি না, তার গঠনমূলক সমালোচনা করি। সেই বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকতে নিজেদেও ভেতর আলোচনা এবং পরামর্শ করে থাকি। যারা ইসলামের নামে, বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে অতিউৎসাহী হয়ে বিভিন্ন ঘটনা ঘটান, তারা দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তি নন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘মতপ্রকাশসহ মানুষের চলাচলে স্বাধীনতা রয়েছে। খেয়াল রাখতে হবেÑ কোনো দর্শনীয় স্থান বন্ধের নির্দেশ যেন কেউ না দেন, পাশাপাশি অসামাজিক কোনো কার্র্যকলাপ যেন না হয় সেটিও গুরুত্ব দিয়ে মানতে হবে।’
 

Link copied!