সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রুবেল রহমান

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৫, ০৬:৫৩ এএম

বইছে ভোটের হাওয়া, সম্ভাব্য প্রর্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু

রুবেল রহমান

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৫, ০৬:৫৩ এএম

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা-তারেক রহমানের বৈঠকের পর বেশ উচ্ছ্বসিত বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক বিশ্লষকরা বলছেন, দেশের রাজনীতির আকাশের কালোমেঘ কেটেছে হাজার মাইল দূরে লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক বৈঠকের মাধ্যমে। এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণার পর বিএনপি শিবিরে যে হতাশা দেখা দিয়েছিল, লন্ডনে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের ইঙ্গিতে শক্ত বরফ গলেছে এই বৈঠকে।

বিএনপির দৃষ্টি এখন জাতীয় নির্বাচনের দিকে। একই সঙ্গে এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের অধীর অপেক্ষা, দীর্ঘদিন লন্ডনে নির্বাসিত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিকে। সময়োপযোগী এমন বৈঠকে চাঙ্গা বিএনপি। বেশ উৎফুল্ল দলটির নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে লন্ডন বৈঠকের পর কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দল। যারা আগামী নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার আভাস দিচ্ছে। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে আগামী রমজান শুরুর আগের সপ্তাহে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। 

এরপর অন্তর্বর্তী সরকার ও সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের ব্যাপারে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের এত দিনের মনোভাবের ব্যাপক পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়। লন্ডন বৈঠক সফল হওয়ায় বিএনপির পাশাপাশি তাদের সমমনা দলগুলোও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। বিবৃতি দিয়ে বলেছে, এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর হয়েছে। নির্বাচনের পথ সুগম হয়েছে। বিএনপির দলীয় সূত্রগুলোও বলছে, তাদের দৃষ্টি এখন নির্বাচনের দিকে। সে লক্ষ্যে পরবর্তী দলীয় কার্যক্রম ঠিক করা হবে।

সরকারের প্রতি যে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল বিএনপির, বৈঠকটি সরকারের প্রতি বিএনপির আস্থা ফিরিয়ে আনতে মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে বলে মত তাদের। বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়ে অন্য দলগুলোর ঐকমত্য দরকার। সে জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, যারা হতাশা প্রকাশ করছে তাদের না আছে নিবন্ধন না আছে জনসমর্থন। যে কারণে করছে হা-হুতাশ। বলা চলে সংস্কার, বিচার ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিএনপির সম্পর্কে টানাপোড়েনের মধ্যেই গত শুক্রবার লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দুজনের মধ্যে আলোচনায় সংস্কার ও বিচার দৃশ্যমান করা গেলে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে নির্বাচন আয়োজনে সম্মতি দেন প্রধান উপদেষ্টা। এই খবরে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর মধ্যে ফেরে স্বস্তি। দূর হয়েছে সরকারের প্রতি অবিশ্বাস। আপাতত অবসান হলো অদৃশ্য দ্বন্দ্বের। 

লন্ডন বৈঠকের সাফল্যে শুধু রাজনৈতিক সংকটই কাটেনি, পুরো দেশ রাতারাতি নির্বাচনি ট্রেনে উঠে পড়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ধরেই এগোচ্ছে বিএনপি। তাই হাতে সময় খুব কম, তবে এখনো ৭ মাস। এই সময়ও নেহাত কম নয়। তবু যেন কারো নেই ফুরসত, তর সইছে না দলটির অনেক নেতারই। স্মরণকালের ঐতিহাসিক জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নাম লেখাতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। শুধু বিএনপি নয়, গণতন্ত্রকামী নির্বাচনমুখী সব দলের সম্ভাব্য প্রার্থী অভূতপূর্ব এই নির্বাচনি উৎসবে যোগ দিতে মাঠে নেমে পড়েছেন। পর্দার আড়ালে আসন ভাগাভাগিসহ নির্বাচনি নানা হিসাব-নিকাশ ও সমঝোতার আলাপ সেরে নিতে অনেকে ছুটছেন সাজঘরে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার প্রথম বৈঠকেই বাজিমাত। এক মুহূর্তে উবে গেছে সব অনিশ্চয়তা। অনেকের ভাষায়, একদিকে জনমনে বইছে স্বস্তির ঢেউ, বিপরীতে চরম হতাশায় নিমজ্জিত ষড়যন্ত্রকারীরা। কেউ কেউ বলছেন, ষড়যন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক মেরেছে লন্ডন বৈঠক। সবার দৃষ্টি এখন জাতীয় নির্বাচনের দিকে। 

এদিকে শিগগিরই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশনÑ লন্ডনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের এ কথা জানানোর পর এখন সবার চোখ কমিশনের দিকে। এমন বাস্তবতায় অনানুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে বৈঠক করেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা। যেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন,  আমরা রেফারির ভূমিকায়, আমরা রেফারির মতো কাজ করব। যারা খেলবে খেলুক, যারা জিতবে জিতুক। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব হবে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেওয়া। সেটা করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, রাজনীতিতে একটা সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। আপাতত সেটা নিরসন হয়েছে। একটা বড় দলের সঙ্গে সরকারের একটা সমঝোতা হয়েছে এ কথা বলা যায়। ওই বৈঠককে ইতিবাচক বলছে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। এভাবেই বৃহত্তর ঐক্য ও সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে দেশ। সে কারণে নির্বাচনি ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে তিনি এ-ও বলেন, এখনো সব সংশয় কাটেনি। কারণ এর মধ্যে একটি শক্তি বলেছে, একটি দলকে খুশি করার জন্য এই বৈঠক হয়েছে। আশা করি, সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন হবে। তা ছাড়া তারা যদি-কিন্তুর অপশন রেখেছে। যদি সংস্কার, বিচার কাক্সিক্ষত হয়। এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্য না থাকলেই হয়।

বিএনপি নেতারা মনে করে, জুলাই সনদ, প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং বিচার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান করা এগুলো আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে সম্ভব। স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে বিচারে একটু সময় লাগলেও জুলাই সনদ এবং সংস্কার আগামী দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব। জুলাই-আগস্ট গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, ট্রাইব্যুনালে সেই মামলাগুলোর কয়েকটির রায়ও আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে দৃশ্যমান হওয়া সম্ভব। সুতরাং প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি শেষে রোজার আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠানও সম্ভব।
 
বৈঠকের মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, লন্ডন বৈঠকটি ছিল ঐতিহাসিক, যুগান্তকারী, জাতির প্রতি দিকনির্দেশনামূলক এবং বহুল প্রত্যাশিত। এই বৈঠকে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। জাতি দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। সেই অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। দেশবাসীর প্রত্যাশা, গণতান্ত্রিকভাবে একটা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে, দেশে স্থিতিশীলতা আসবে, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্ত ভিত্তি নির্মাণের মধ্য দিয়ে আমাদের গণতন্ত্রকে একটি শক্তিশালী রূপ দেওয়া সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, পলিটিকস ইজ এন আর্ট অব কম্প্রোমাইজ, অর্থাৎ রাজনীতি হলো একটি আপোষের শিল্প। এ কথাটি আমরা অনুসরণ করেছি। প্রধান উপদেষ্টা অনুধাবন করেছেন এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে আবহাওয়া, রমজান, পাবলিক পরীক্ষার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রমজান মাস শুরুর এক সপ্তাহ আগে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেছেন। এটাকে আমরা স্বাগত জানাই। আশা করি, সেই সিদ্ধান্তের সূত্র ধরে তিনি নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) যথাযথ প্রক্রিয়ায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলবেন।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, দ্রুতই বিএনপির এই শীর্ষ নেতা দেশে ফিরছেন। ৫ আগস্টের আগেই তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন। অথবা নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পরপরই দেশে ফিরবেন। সেদিন তাকে স্বাগত জানাতে কমপক্ষে ১০ লাখ লোক সমবেত হবে ঢাকায়। সারা দেশ থেকে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ধরে রাখাই কঠিন কবে। রাজনৈতিক এক মহানায়কের আগমনে উপচে পড়া সে ঢেউ সারা দেশে নির্বাচনি জোয়ারে উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি করবে অনায়াসে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ আছে। বিএনপিকে জনগণ যদি ভোট দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আনে, তাহলে অবশ্যই দেশের জন্য ড. ইউনূসকে কাজে লাগানো হবে। দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় এ ব্যাপারে তার পরামর্শ নেওয়া হবে। এ রকম আরও যারা আছেন, তাদের মতামত নিয়ে কাজ করতে চান তারেক রহমান। 

অন্যদিকে বিদেশিদের তৎপরতাও বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। বিভিন্ন ফোরামে তারা এ প্রসঙ্গে কথা বলছেন, নিজেদের মতামত তুলে ধরছেন। আগামী সংসদ নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক তথা গ্রহণযোগ্য হয়, তা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তারা জানাচ্ছেন তাদের দেশের আগ্রহের কথা।

এ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকও করছেন। প্রতিটি বৈঠকেই বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বোঝার চেষ্টা করছেন আগামী নির্বাচন কেমন হতে পারে, কোন দলের কৌশল কী হবে। রাজনৈতিক দলগুলোরও চলছে নানা তৎপরতা। ১৭ জুন ঢাকায় মার্কিন একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক করার কথা রয়েছে।

এ ছাড়া ২৪ অথবা ২৫ জুন চীন সফরে যাচ্ছে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরউদ্দিন স্বপন, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়াসহ ৯ জন।


 

Link copied!