শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে গত ৮ জুন অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস পূর্ণ হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হলেও সেই খরা এখনো কাটেনি। মানি মার্কেট এবং স্টক মার্কেটের এখনো উন্নতি হয়নি। একই সঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের সর্বোচ্চ পতন হয়েছে। চার বছর আগের অবস্থান নিয়েছে ডিএসইএক্স। অন্যদিকে, আস্থার সংকটে ঢাকার সড়কে বিক্ষোভ করেছেন অনেক বিনিয়োগকারী।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিউ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ আস্থার সঞ্চার করতে পারছেন না। বিনিয়োগকারীর বিপরীতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাই ভীষণ আস্থার সংকটে ভুগছে। যার সর্বোচ্চ প্রভাব বাজারে পড়ছে বলে মন্তব্য করেন তারা।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট সরকারের পতন ঘটে। তিন দিন পরে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। আওয়ামী সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে বিপর্যস্ত হয়েছে পুঁজিবাজার। সেই দুঃশাসন হটিয়ে নতুন সরকারের কাছে মানি মার্কেট এবং স্টক মার্কেটে শুদ্ধাচার ও আস্থা ফেরানোর দাবি করেন লাখো বিনিয়োগকারী। সরকারের পক্ষ থেকে শুদ্ধাচার ফেরাতে নীতি সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হলেও কার্যত এখনো হয়নি। যার ফলে সুপ্রভাব পড়েনি বলে মনে করেন তারা।
ডিএসইর ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণে গতকাল শনিবার দেখা গেছে, চার বছর আগে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ ডিএসইর প্রধান সূচকের সর্বোচ্চ পতন ঘটে। সেদিন ডিএসইএক্স ছিল ৩ হাজার ৫৮৬ পয়েন্ট। এর পরে সামান্য উন্নতি হয়ে ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট ৪ হাজার ৬৭৮ পয়েন্টে অবস্থান নেয়। যা চলতি বছরের সর্বশেষ ৪ জুন ছিল ৪ হাজার ৬৬৪ পয়েন্ট। সরকারের ৯ মাস পূর্ণ হলেও সফলতার সূচক নেইÑ বলেন অধিকাংশ বিনিয়োগকারী।
ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত ডিএসইর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ২৪৭ পয়েন্ট। পাশের দেশ ভারতের সেনসেক্স ছিল ৭৩ হাজার ১৯৮, পাকিস্তানে ১ লাখ ১৩ হাজার ২১৫ পয়েন্ট, ইন্দোনেশিয়া ৬ হাজার ২৭০ পয়েন্ট, থাইল্যান্ডে ১ হাজার ২০৩ পয়েন্ট। গ্র্রাফের চিত্রানুসারে পাশের দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সম্পর্কে মার্চেন্ট ব্যাংক এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মজুমদার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বাজারে নতুন করে মানিপ্রবাহ ঘটাতে চাইলে আইপিওর (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) বিকল্প নেই। গত দুই বছরে কয়টা আইপিও বাজারে এসেছে? কিছু আইপিও নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবুও আইপিও আনা জরুরি।
তিনি বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটে নানাবিধ কোম্পানি আসবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে, মিয়ানমার বা শ্রীলঙ্কার দিকে তাকান। তারা কয়টি কোম্পানি বাজারে আনছে। সর্বোপরি কথা হচ্ছে- সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে এবং শুদ্ধাচার ফেরাতে হবে।
শুদ্ধাচার বা পরিসংখ্যান সম্পর্কে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, বিগত সরকারের আমলে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। ভুল, মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে উন্নয়নের মিথ্যা গল্প শোনানো হতো। দেশের রিজার্ভ, জিডিপি, রপ্তানি আয়, দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য উৎপাদন, বাল্যবিবাহ, এমনকি প্রকৃত জনসংখ্যা নিয়েও মিথ্যাচার করা হয়েছিল। সরকার যেভাবে চাইত বিবিএস সেভাবেই তথ্য পরিসংখ্যান দিত। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যকে বোগাস বলে আখ্যায়িত করেন।
তবে শুদ্ধাচার ফিরিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের বিকল্প নেই। এ জন্য বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ আনার কথা ভাবছে বিএসইসি। একই সঙ্গে করহারে পার্থক্য আনা জরুরি বলে মনে করেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ আনার দরকার নেই। বাকি যেগুলো উনি বলেছেন, সেগুলো তো আমরা বহু বছর ধরেই বলে আসছি। ভালো কোম্পানি আনতে হলে করহারে পার্থক্য করতে হবে, প্রণোদনা দিতে হবে। বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে কিছু হবে না।
আপনার মতামত লিখুন :