শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এফ এ শাহেদ 

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৫, ০৪:৫৬ এএম

জাতীয় পার্টিতে শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব

এফ এ শাহেদ 

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৫, ০৪:৫৬ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

অতীতের ধারাবাহিকতায় আলোচিত-সমালোচিত জাতীয় পার্টিতে (জাপা) আবারও ভাঙনের সুর। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলটিতে চলছে চরম অস্থিরতা। বিদ্রোহ এবার দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে। তার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে সামনে এসেছেন দলের কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা।

জি এম কাদেরকে সরিয়ে গঠনতন্ত্রে থাকা চেয়ারম্যানের একক কর্তৃত্ব খর্ব করাই তাদের লক্ষ্য। ফলে, বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আগামী ২৮ জুন দশম সম্মেলন হঠাৎই দলের পক্ষ থেকে বন্ধ যোষণা দেওয়া হয়। এদিকে পার্টির একটি বড় অংশ ২৮ জুন সম্মেলন করার বিষয়ে অনড় রয়েছে। তারা সম্মেলনের জন্য বিকল্প স্থানও খুঁজছে। 

জাতীয় পার্টির ‘বিদ্রোহী’ নেতারা বলছেন, ওই সভায় এমনও সিদ্ধান্ত হয় যে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র বরাদ্দ না পেলে কাকরাইলে দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে সম্মেলন করা হবে। কিন্তু জি এম কাদের কারও সঙ্গে আলোচনা না করে সম্মেলন স্থগিত করেন। প্রেস সচিবের মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে সম্মেলন স্থগিত প্রসঙ্গে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কর্তৃপক্ষ সম্মেলনকেন্দ্রের হল বরাদ্দ বাতিল করায় ২৮ জুনের সম্মেলন হচ্ছে না। হল বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে সম্মেলনের তারিখ ও সময় জানানো হবে।

দলের অসন্তোষের বিষয়ে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা ছাড়াই জি এম কাদের গণমাধ্যমের সামনে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এসব বিষয় নিয়েও দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা চেয়ারম্যানের ওপর নাখোশ।

দলের বিদ্রোহী কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে বিতর্কিত ধারা-২০-এর (ক) উপধারা সংশোধনের দাবি দীর্ঘদিনের। কারণ এই ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পার্টির চেয়ারম্যান যেকোনো পদে যেকোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ, অপসারণ এবং তার স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন। ধারাটিকে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী বলা হচ্ছে দলের ভেতর থেকেই।

এ বিষয়ে মুজিবুল হক চুন্নু  বলেন, ‘দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার (ক) উপধারা নিয়ে আমিসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা আপত্তি জানিয়ে আসছি। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছেন। বারবার বললেও তিনি এখনো কিছু জানাননি এ বিষয়ে। 

সম্মেলনে বর্তমান চেয়ারম্যান এরশাদের ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। এ দুই নেতার পাশে এককাট্টা দলটির অনেক সিনিয়র নেতা। ফলে সম্মেলন ঘিরে আবারও জাতীয় পার্টিতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। জাতীয় পার্টির বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া দল সপ্তমবারের মতো ভাঙছে। তবে জি এম কাদেরের অনুসারীরা বলছেন, জি এম কাদেরের নেতৃত্বেই থাকবে মূল দল। 

দলের অবস্থা সম্পর্কে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ লিখিতভাবে আমাকে তার অবর্তমানে পার্টির সার্বিক দায়িত্ব দিয়েছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা যাওয়ার পর দলীয় স্বার্থ বিবেচনায় ওই চিঠি কার্যকরের উদ্যোগ নিইনি। পল্লিবন্ধু এরশাদ সবাইকে নিয়ে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে বলেছিলেন। এখন দিনে ি নে পার্টি ছোট হয়ে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শক্তিশালী অবস্থান নেওয়া এবং সারা দেশে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের এক ছাতার নিচে আনার লক্ষ্যে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি জি এম কাদের সাহেব আমাদের এই উদ্যোগে সাড়া দেবেন।

নতুনভাবে জাতীয় পার্টিকে চাঙা করার লক্ষ্যে অনেক নেতা দাবি করেন, দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্যই তারা জি এম কাদেরকে সরানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। পার্টির প্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্য সমালোচনার সৃষ্টি করছে। এই প্রক্রিয়ায় পার্টির সাবেক নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টুসহ অনেকে যুক্ত হয়েছেন। তারা সম্মেলন ঘিরে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। যোগাযোগ করছেন জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে। 

আগামী ২৮ জুন ঢাকায় বড় ধরনের শোডাউন করে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের সূচনা ঘটাতে চান তারা। তারা বলছেন, অতীতে যারা দল ছেড়ে চলে গেছেন, তাদের ফিরিয়ে আনা, সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ নানা বিষয়ে বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি অনুরোধ করা হলেও তা রাখা হয়নি। এরই মধ্যে দেশের অধিকাংশ জেলার শীর্ষ নেতারা নতুন এই উদ্যোগে সম্মতি দিয়েছেন। 

জানা যায়, নব্বইয়ের গণআন্দোলনে এরশাদ সরকারের পতন হলে হুদা-মতিনের নেতৃত্বে জাপা প্রথমবারের মতো ভাগ হয়। ওই দশকেই ১৯৯৭ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও শেখ শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফা, ১৯৯৮ সালে কাজী জাফর ও শাহ্ মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে তৃতীয় দফা ভাঙে দলটি। এরপর একবিংশ শতকের শুরুতেই ২০০১ সালে নাজিউর রহমানের নেতৃত্বে চতুর্থ দফা এবং ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে পঞ্চম দফা ভাঙন ঘটে।

সর্বশেষ দলের প্রতিষ্ঠাতা এরশাদের মৃত্যুর পর চেয়ারম্যান পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে ২০২৪ সালের ৯ মার্চ ষষ্ঠবারের মতো ভাঙে এরশাদের জাতীয় পার্টি। এরশাদের অসিয়ত মতো তার ছোট ভাই জি এম কাদের চেয়ারম্যান হলে বেঁকে বসেন স্ত্রী রওশন এরশাদ। নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করে দলের কমিটি গঠন করেন, মহাসচিব করা হয় কাজী মামুনুর রশীদকে। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই মারা যান দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৮২ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের কাছ থেকে ক্ষমতা নেন তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদ। এরপর ১৯৯০ সাল পর্যন্ত টানা ৯ বছর দেশ শাসন করেন তিনি।

Link copied!