বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রুবেল রহমান ও  এফ এ শাহেদ 

প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৫, ১২:৩৬ এএম

পিআর নিয়ে দলগুলোর মতানৈক্য

রুবেল রহমান ও  এফ এ শাহেদ 

প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৫, ১২:৩৬ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রাজনীতির মাঠে এখন নতুন আলোচনা পিআর (প্রোপোরশনেট রিপ্রেজেনটেটিভ)। নির্বাচনি তারিখ নিয়ে যখন কিছুতেই কাটছে না সংকট তখন পিআর কিংবা সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থা নিয়ে সংকটে নতুন মেরূকরণ বলছে রাজনৈতিকরা। পিআর নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য এখন বেশ স্পষ্ট। 

দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল মনে করে জনগণের সরাসরি ভোটে যাদের নির্বাচিত হওয়ার সামর্থ্য নেই, তাদের পক্ষ থেকে ছলচাতুরী করে সংসদে যাওয়ার জন্য এই সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের ধোঁয়া তোলা হচ্ছে। 

অন্যদিকে, পিআর পদ্ধতিতে যারা নির্বাচন দাবি করছে, তারা মনে করে, গতানুগতিক সরাসরি ভোটের নির্বাচনে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব কখনোই নিশ্চিত হবে না। বিএনপি, এনসিপি, জামায়াত, গণঅধিকারসহ পিআর পদ্ধতির পক্ষ-বিপক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়।

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের ঘোরবিরোধী দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ ফ্যাসিস্টবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে তাদের শরিক ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। এদিকে, এই নির্বাচনব্যবস্থা বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত কি না, তা সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনা করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘জনগণের ঐক্য এখন আগের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি (পিআর) বিভক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে।’

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, যারা আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন বিলম্ব অথবা নির্বাচন বানচাল করা।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, যে দেশে জনসংখ্যা বেশি, গায়ে গায়ে ধাক্কা খায় মানুষ, সে দেশে ভোটাররা যদি নাই বুঝে তবে পিআর পদ্ধতিতে ভোট হয় কী করে? ভোটাররা যখন জানবে না তার ভোটে কে হচ্ছেন জনপ্রতিনিধি, সে কি তখন ভোট কেন্দ্রে যাবে? ধরেন একটি দল ৫০ শতাংশ ভোট পেল আরেকটি দল পেল ১০ শতাংশ ভোট। যদি দুই দলই ঢাকা-৫ আসন চাইল তার সমাধান কে করবে? তখনকার মারামারি কে থামাবে? আমার মনে হয় এবারই নয়, পরের নির্বাচনে পিআর সিস্টেম পাইলট প্রকল্প হিসেবে করা যেতে পারে। আমাদের আশপাশের দেশে কেউ পিআর সিস্টেম ফলো করে না। যেসব দেশে পিআর সিস্টেমে ভোট হয় তারাও এই পদ্ধতি থেকে সরে আসছে। এই পদ্ধতি এখন আর কাজ করছে না। 

আওয়ামী লীগ ভোটে আসবে কি না সেই বিষয়ে সরকার এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। যদি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের সুযোগ দেয়, তাহলে এখন যারা পিআর পদ্ধতিতে ভোট চায় তাদের কী হবে? একবার ভেবে দেখেছেন তারা? আওয়ামী লীগের ভোট কমেছে এটা ঠিক, তবে যারা হৈ চৈ করছে তাদের চেয়ে তো বেশি। যারা পিআর চায় তাদের মূল উদ্দেশ্য ভিন্ন। যারা পিআর নিয়ে খুশিতে গদগদ তারাই সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বে পিআর সিস্টেমে ভোট হলে। যারা বেশি শতাংশ ভোট পাবে তারা সরকার গঠন করবে, কম ভোট পাওয়া দলগুলো কি তখনকার বাস্তবতায় গুরুত্ব পাবে? তারাই তো বিপদে পড়বে। তখন তো সরকার অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক, সামাজিক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে, তখন কি তাদের কদর থাকবে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সনাতন অথবা পিআর পদ্ধতিতে দলগুলোকে একমত করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে ঐকমত্য না হলে আগামী নির্বাচন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘দেশের বড় দল বিএনপি। তারা পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে। এখন তারা যদি এটি না চায় তবে এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আবার যদি পিআর পক্ষের দলগুলো অনড় অবস্থানেই থাকে, তবে দলগুলোকে ঐকমত্য করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এতে নির্বাচন পিছিয়েও যেতে পারে।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি ছাড়া জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না। নির্বাচনের আগে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে জুলাই সনদ জুলাই মাসেই ঘোষণা করতে হবে। তিনি বলেন, যেনতেনভাবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে না, বরং সমস্যার গভীরতা আরও বাড়ে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতা চাইলে করা হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম চরমোনাই পীর বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। এমন নির্বাচন একদিকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অন্যদিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতিতে দলগুলো ভোটের অনুপাতে সংসদীয় আসন পায়, ফলে কোনো দল এককভাবে ক্ষমতা দখল করতে পারে না এবং সংসদে ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা, আপস এবং যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিবেশ তৈরি হয়। 

বর্তমান নির্বাচনি ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটে না বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, আমরা আংশিক পিআর সিস্টেম (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি) চাই। বর্তমান ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটে না। তাই ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধি নির্বাচনে আংশিক পিআর সিস্টেম নিম্নকক্ষে ও পূর্ণ পিআর সিস্টেম উচ্চকক্ষে চালু করা প্রয়োজন।

এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, নির্বাচন চান; কিন্তু পিআর মানেন না কেন? নির্বাচন চান, কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে আপনাদের অসুবিধা কী? আমরা এই টালবাহানা চলতে দিতে চাই না।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ভারসাম্যপূর্ণ সংসদের জন্য আমরা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই এবং দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ চাই। এটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও যুগোপযোগী। তিনি বলেন, ২০২১ সালে আমরা যখন দল গঠন করি তখনই দলের ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করেছিলাম আনুপাতিক হারে নির্বাচন এবং দ্বি-পক্ষ বিশিষ্ট সংসদের বিষয়টি। তবে দেশের অন্যতম বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক দল যেহেতু পিআর পদ্ধতিতে চায় না সুতরাং আমাদের একটি ঐকমত্যের জায়গায় পৌঁছাতে হবে। সবাই এগিয়ে আসলে সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পিআর পদ্ধতি সম্ভব না হলেও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। 
 
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, মুজিববাদী সংবিধান বাংলাদেশে আর চলতে পারে না। নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য অবশ্যই বাংলাদেশে গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তিনি বলেন, উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের প্রস্তাবে ইতিমধ্যে প্রায় সব দল একমত হয়েছে; কিন্তু দু-একটি দলের কারণে এটি করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নতুন কাঠামোতে পরিচালিত করতে হলে অবশ্যই পিআর পদ্ধতি নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে।

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, পিআর পদ্ধতিতে যদি ভোট হয় হিন্দু সম্প্রদায় ভোট দিতে যাবে, না হলে যাবে না। তিনি একই সঙ্গে পৃথক নির্বাচন পদ্ধতিরও দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘মাইনোরিটিদের প্রতিনিধিত্বের সিদ্ধান্ত তারা নেবে, তারা নিজেদের ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করবে।’
তবে আনুপাতিক ভোটিং ব্যবস্থার পক্ষে রাজনৈতিক ঐকমত্য এখনো স্পষ্ট নয়। বিএনপি এই পদ্ধতির প্রথম থেকেই বিরোধিতা করে আসছে। তাদের যুক্তি, এতে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জোটনির্ভর সরকার গঠনের ঝুঁকি থাকে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হলে স্বল্প পরিসরে পিআর শুরু করা সম্ভব।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!