বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


 উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২৫, ০৫:২০ এএম

প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম

দুই পদ্ধতিতে পড়াশোনায় বাড়ছে শিখন ঘাটতি

 উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২৫, ০৫:২০ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের প্রবর্তিত নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে অন্তবর্তী সরকার। পরবর্তী সময়ে মাধ্যমিক স্তরে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম অনুযায়ি প্রণীত পাঠ্যবই পরিমার্জন করে চলতি বছরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। তবে মাধ্যমিক স্তরে বাতিল হলেও প্রাথমিক স্তরে এখনো বহাল রয়েছে সাবেক সরকারের শিক্ষাক্রম। ফলে দুই স্তরে দুই ধরনের শিখন পদ্ধতিতে পড়াশোনা করছে শিক্ষার্থীরা। যে কারণে এক ধরনের শিখন ঘাটতি নিয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষ পার করছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে ২০২৭ সাল থেকে মাধ্যমিকে পরিমার্জন করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার পরিকল্পনা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে প্রাথমিকের আগে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও বাস্তবায়ন হলে বর্তমানের মতো দুই স্তরে দুই ধরনের শিখন পদ্ধতির জন্য শিক্ষাক্রমে ভারসাম্যের ঘাটতি হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও (এনসিটিবি) মনে করে, শিক্ষাক্রম হওয়া উচিত কম্প্রিহেনসিভ বা বিস্তৃত আকারে, যাতে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিখন পদ্ধতির মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়।

সাবেক সরকার প্রণীত নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলেছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিকের সব শ্রেণিতেই তা চালুর কথা ছিল। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম বাতিল করে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম পুনর্বহাল করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকে নতুন শিক্ষাক্রমই বহাল রাখা হয়েছে। চলতি বছরের মতো ২০২৬ সালের নতুন পাঠ্যবইও ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকেই দেওয়া হবে। এরই মধ্যে পাঠ্যবই পরিমার্জনের কাজও প্রায় শেষ করেছে এনসিটিবি।

স্বাধীনতার পর এরই মধ্যে সাতবার শিক্ষাক্রম পরিবর্তিত হয়েছে। এর মধ্যে ২০১২ সালে ‘উদ্দেশ্যভিত্তিক শিখন’ নামে শিক্ষাক্রমে বড় পরিবর্তন আনা হয়। এরপর ২০২১ সালে ‘অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন’ নামে নতুন একটি শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়। তবে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন নিয়ে খোদ এনসিটিবিতেই মাধ্যমিক স্তরের সঙ্গে প্রাথমিক স্তরের কর্তৃপক্ষের বিবাদ তৈরি হয়। প্রাথমিক স্তরে দীর্ঘদিন ধরেই ‘সক্রিয় শিখন’ পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। 

মাধ্যমিক স্তরের ‘অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন’-এর মতো পদ্ধতি প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের উপযোগী হবে না জানিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে ভিন্নমত পোষণ করেন এনসিটিবির তৎকালীন প্রাথমিক স্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। তবে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির একপ্রকার জেদের কারণে পরীক্ষাব্যবস্থাপনায় নতুন শিক্ষাক্রমের কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত হলেও প্রাথমিক স্তর কার্যত ‘সক্রিয় শিখন’ পদ্ধতিতেই থেকে যায়। ফলে প্রাথমিক স্তর সক্রিয় শিখন পদ্ধতিতে থাকলেও মাধ্যমিক স্তর একবার অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন ও বর্তমানে উদ্দেশ্যভিত্তিক শিখন পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।   

এনসিটিবি জানিয়েছে, ২০২৭ সাল থেকে থেকে পরিমার্জন করে নতুন আরেকটি শিক্ষাক্রম চালু করতে যাচ্ছে সরকার। নতুন এ শিক্ষাক্রমে অভিজ্ঞতালব্ধ, জ্ঞাননির্ভর ও বাস্তবসম্মত পাঠদান করানো হবে। তবে কী পদ্ধতিতে পাঠদান বা মূল্যায়ন হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রথমে এটি চালু হবে। পরে সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ধীরে ধীরে তা বাস্তবায়ন করা হবে। গত ২৫ জুন এ নিয়ে এনসিটিবিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। তবে বিষয়টি একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। চলতি মাসে শিক্ষাক্রম নিয়ে একটি কর্মশালা হওয়ার কথা রয়েছে। কর্মশালা থেকে শিক্ষাক্রম পরিমার্জনের বিষয়ে অনেক কিছু স্পষ্ট হবে। 

সাবেক সরকারের নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সময় এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক) ছিলেন অধ্যাপক ড. রিয়াজুল হাসান। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি এনসিটিবির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে অবসরত্তোর ছুটিতে রয়েছেন। সাবেক আওয়ামী সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর একগুয়েমিতে দুই স্তরের শিক্ষাক্রমের মধ্যে শিখন পদ্ধতির পার্থক্য তৈরি হয়েছে বলে রূপালী বাংলাদেশকে জানান তিনি। 

তবে মাধ্যমিক স্তরের ক্ষেত্রে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন নিয়ে যে ব্যাপক বিতর্ক ছিল, প্রাথমিকের ক্ষেত্রে তেমন না হওয়ায় ওই শিক্ষাক্রমই বহাল রাখা রয়েছে বলেও জানান তিনি। 

তবে উভয় স্তরে শিখন পদ্ধতি একরকম হলে, তা অবশ্যই পুরো শিক্ষাব্যবস্থার জন্য সুফল বয়ে আনবে বলে মনে করেন রিয়াজুল হাসান। 

আগামী দিনে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে মন্তব্য করে এ শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রাথমিক থেকে অন্ততপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রমের শিখন পদ্ধতি একরকম থাকা উচিত। 

অন্যদিকে এনসিটিবির প্রাথমিক উইংয়ে কর্মরত একজন শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, দুই স্তরের শিক্ষাক্রমের শিখন পদ্ধতির পার্থক্যে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিশ্চিতভাবে ‘লার্নিং গ্যাপ’ হবে। কারণ প্রাথমিক স্তরে হচ্ছে সক্রিয় শিখন আর মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা পড়ছে উদ্দেশ্যভিত্তিক শিখন পদ্ধতিতে।

এ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আগে প্রাথমিকের শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করে সেই ধারাবাহিকতা অনুযায়ী মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম তৈরি করা হলে, তা বেশি কার্যকর হবে। মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম পরিমার্জনের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হলেও প্রাথমিকে এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বর্তমানে অবসরে থাকা এনসিটিবির সাবেক এক শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ বলেন, শিক্ষাক্রম প্রণয়নে অনেক বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এক শ্রেণির সঙ্গে আরেক শ্রেণির শিক্ষাক্রমের মধ্যে ‘উলম্ব (ভার্টিকাল) ও আনুভূমিক (হরাইজন্টাল) ভারসাম্য সঠিকভাবে রয়েছে কিনা। 

২০২৭ সাল থেকে মাধ্যমিকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের বিষয়টি এখনো প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী। 

তিনি বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষাক্রমের ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক (এনসিএফ) বা জাতীয় কাঠামো তৈরি করা হবে। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ, ভ্রাতৃত্ববোধ-এমন মৌলিক চেতনার জায়গাগুলো থাকবে। তবে শিখন পদ্ধতিতে বৈশ্বিক চলমান ব্যবস্থাকেও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!