শেখ হাসিনা সরকারের নিয়োগকৃত এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মাহাবুব খান মেম্বারের (অপারেসন্স অ্যান্ড প্ল্যানিং) সিন্ডিকেট এখনো সিভিল এভিয়েশনে সক্রিয় রয়েছে। এই সিন্ডিকেটে আওয়ামী ঘরানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে।
এতে করে শুধু ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নয়, দেশের অন্যান্য বিমানবন্দর সংযুক্ত ব্যবসায়ীদের মাঝেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। দুর্নীতিমুক্তভাবে ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীরা প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আবেদন করেছেন।আবেদনে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, সিভিল এভিয়েশনে ফ্যাসিবাদে বিশ্বাসী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্তর্বর্তী সরকারের অর্জনকে ম্লান করতে উঠে-পড়ে লেগেছেন। আর এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন শেখ হাসিনা পরিবারের আশীর্বাদপুষ্ট এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মাহাবুব খান (সদস্য-অপারেশন্স অ্যান্ড প্ল্যানিং) সিন্ডিকেট। তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আবু সাঈদ মাহাবুব খান শেখ পরিবারের প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ শেখ হেলালের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে সর্বপ্রথম ২০১৭-১৮ সালের দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি এয়ার কমোডর পজিশনে পদোন্নতি লাভ করেন। তার পরপরই তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদস্য এ টি এম হিসেবে প্রধান কার্যালয়ে যোগদান করেন এবং তার দুর্নীতির শাখা-প্রশাখা প্রসারিত করেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে সদস্য-অপারেশন্স অ্যান্ড প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্টে পদায়ন করেন। এই পদায়নের পরই বাংলাদেশের সব বিমানবন্দর পরিদর্শনের মাধ্যমে তার নিজের একটি দুর্নীতির সিন্ডিকেট তৈরি করে এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়তে রয়েছেন বলে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর দায়েরকৃত অভিযোগে দাবি করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা গেছে, চলতি বছর এপ্রিলে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে ২ জন ব্যক্তির নামে শাহজালাল বিমানবন্দরসহ বাংলাদেশের অন্যান্য বিমানবন্দরের অভ্যন্তরের লিজকৃত লাউঞ্জের চুক্তি বাতিলের নির্দেশনা প্রদান করেন। আর সেই দুই ব্যক্তি ফ্যাসিস্ট সরকারের ছত্রছায়ায় পালিত ছিল।
অভিযোগে দাবি করা হয়, সেই দুই ব্যক্তির নামে লিজকৃত লাউঞ্জ বাতিল করে বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ লাউঞ্জে অবস্থিতে স্পাইসি রেস্টুরেন্টের মালিক সাদির নামে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সাবেক চেয়ারমান মঞ্জুরুল কবির ভূইয়া ও এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মাহাবুব খানের সাথে কোটি টাকার লেনদেনের চুক্তি হয়েছে।
২০২৫-২৬ সালের অর্থবছরের জুন মাসে বাংলাদেশের সব বিমানবন্দরের সব ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের লিজকৃত ব্যবসা নবায়নের জন্য ব্যাবসায়িক কাগজপত্র বিমানবন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বেবিচকের চেয়ারম্যানের দপ্তরে প্রেরণ করেন। সাবেক চেয়ারম্যান এবং এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মাহাবুব যোগসাজশ করে সব নথিপত্র অপারেশন্স অ্যান্ড প্ল্যানিং কর্মকর্তার দপ্তরে ফাইলবন্দি করে রাখেন।
অভিযোগে দাবি করা হয়, এপ্রিল মাসে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের লিজ বাতিলের চিঠির অজুহাতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে আওয়ামী লিগের দোসর তকমা দিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণ করে যাচ্ছে, যা শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে সূত্রে প্রকাশ।
এমনকি বেবিচকের এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার চাহিদামতো ঘুষ দিতে পারেননি, তেমন ১৬টি প্রতিষ্ঠানের পরবর্তী বছরের লিজ বাতিল করা হয়েছে।
জানা গেছে, দুর্নীতির এসব বড় লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে ফ্রান্সে। কারণ এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মাহাবুব খান গত জুন মাসের শেষ সপ্তাহে অফিস ট্যুরে ফ্রান্স ভ্রমণে ছিলেন। তার দপ্তরে আরও অনেক বন্দি থাকা ফাইলসমূহ তার দপ্তরের ডিডির মাধ্যমে উৎকোচ নিশ্চয়তার পর কিছু কিছু অনুমোদনের জন্য চেয়ারম্যানের দপ্তরে প্রেরণ করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া গত ৬ আগস্ট পর্যন্ত ১৫% থেকে ২০% নবায়নের জন্য পাঠানো ফাইলে ঘুষ নিশ্চিত না হওয়ার কারণে তার দপ্তরে ফাইলবন্দি করে রেখেছেন, যার কারণে সরকার বর্তমান অর্থবছরের কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, বর্তমান চেয়াম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহামুদকে নানাভাবে অন্যায়ের দিকে প্রভাবিত করছে। এমনকি অতিদ্রুত সময়ে পদোন্নতি পেয়ে এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মাহাবুব খান বেবিচকের চেয়ারম্যান হবে, এমনটাই সিন্ডিকেট সদস্যদের মাধ্যমে প্রচার করেন। যাদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়েছেন, তাদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর আরও বড় পরিসরের ব্যাবসায়িক সুবিধা দেওয়ার কথাও গুঞ্জন উঠেছে। এসব বিষয়ে ১৬ জন ব্যবসায়ী লিখিতভাবে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সিভিল এভিয়েশন সংযুক্ত ব্যবসায়ীরা দুর্নীতিমুক্তভাবে ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য লিখিত আবেদন দায়ের করেন।
আপনার মতামত লিখুন :