আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা বেড়েছে। দীর্ঘদিন সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আব্দুর শহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা আসনটিতে এবার বিএনপির দুইজন প্রার্থী মনোনয়নের অপেক্ষায় মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী ও নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
জানা যায়, মৌলভীবাজার-৪ আসনটি দুইটি উপজেলা-শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ নিয়ে গঠিত। এটি জেলার রাজনৈতিক কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু। শ্রমিক অধ্যুষিত এই আসনে গত তিন দশকে ছয়টি বিতর্কিত নির্বাচন (১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে টানা ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আব্দুর শহীদ। তিনি এক সময় সংসদে চিফ হুইপ এবং পরে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। প্রায় তিন মাস পর বিশেষ অভিযানে পুলিশের হাতে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে পরিবর্তনের সূচনা হয়। বর্তমানে আসনটি পুনরুদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। এ আসনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ, ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এখন নিজেদের রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে মাঠে নানা ধরনের প্রচার চালাচ্ছে তারা।
আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। মৌলভীবাজার -৪ (শ্রীমঙ্গল -কমলগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোট থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়াই করা, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাবেক বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আলহাজ মুজিবুর রহমান চৌধুরী, ও শ্রীমঙ্গল পৌরসভা, সাবেক মেয়র, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. মহসিন মিয়া মধু। তিনিও আগামী নির্বাচনে বিএনপি জোট থেকে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি হলেন সিলেট মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুর রব। অন্যদিকে ছাত্রদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছেন দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব প্রীতম দাশের নাম।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাবেক বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আলহাজ মুজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘নবম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল দল। সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে আমাকে হারানো হয়। আমার বিরুদ্ধে শতাধিক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে বিশেষ আইনে গ্রেপ্তার করে আমাকে ১৪ মাস জেলে রাখা হয়। এই সময় আমার ছোট ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান শামিম আহমেদ চৌধুরী মারা গেলেও জানাজায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। সবকিছুর পরও আমি দলের আদর্শ থেকে সরে যাইনি। এবারও দল আমার ত্যাগের মূল্যায়ন করবে বলে বিশ্বাস করি।’
আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. মহসিন মিয়া মধু বলেন, ‘২০০১ সালে আমি ধানের শীষের প্রার্থী ছিলাম। রাজনীতির ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। বারবার জেল খেটেছি, তবুও জনসেবার কাজ চালিয়ে গেছি। মেয়র থাকা অবস্থায় গরিব ও অসহায়দের জন্য কম্বল বিতরণ, ইফতার আয়োজন, ত্রাণ বিতরণ করেছি। আমি মাঠে কাজ করছি এবং মানুষ আমাকে চায়।’
জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আব্দুর রব বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন চায়। বৈষম্যহীন সমাজ ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা চায়। জামায়াত অতীতে যেমন মানুষের পাশে ছিল, এবারও আমরা জনগণের সেবায় কাজ করব। বিশ্বাস করি, মানুষ এবার আমাদের ওপর আস্থা রাখবে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকেও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এসেছেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব প্রীতম দাশ। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো সরাসরি নির্বাচনী প্রচারে নামিনি। তবে নিয়মিত রাজনৈতিক কার্যক্রম ও কর্মসূচি পালন করছি। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা পেলে আমরা মাঠে প্রচারণা শুরু করব।’
বিএনপির মনোনয়ন কার হাতে উঠবে, সেটি নির্ধারিত হবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তে। দুইজনই প্রার্থী হিসেবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রচারণা চালালেও দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
আপনার মতামত লিখুন :