শুক্রবার, ০৮ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হালিমা ইয়াসমিন মুক্তা

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০৪:০৩ এএম

অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির প্রতারণা; অফারে প্রলুব্ধ হওয়া যাবেনা

হালিমা ইয়াসমিন মুক্তা

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০৪:০৩ এএম

অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির প্রতারণা; অফারে প্রলুব্ধ হওয়া যাবেনা

সম্প্রতি অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’- এর গ্রাহক প্রতারণা কেলেঙ্কারি দেশের ভ্রমণপ্রেমীদের একাংশকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। হাজারো গ্রাহক, যাদের কেউ পরিবার নিয়ে দেশে বা বিদেশ সফরের পরিকল্পনা করেছিলেন, কেউ চিকিৎসার প্রয়োজনে টিকিট কেটেছিলেন, তারা আজ অনিশ্চয়তার অন্ধকারে। টাকার বিনিময়ে কাগজে-কলমে টিকিট থাকলেও তাদের অনেকেই জানেন না, আদৌ সেই টিকিটে উড়োজাহাজে ওঠা যাবে কিনা। এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, প্রযুক্তিনির্ভর নতুন সেবা খাতে আস্থা যেমন গড়ে ওঠে, তেমনি তা ভেঙেও পড়তে পারে, যদি না থাকে যথাযথ তদারকি, দায়বদ্ধতা এবং ব্যবহারকারীর সচেতনতা।
ওটিএ প্ল্যাটফর্ম : সুবিধা ও ফাঁদের দুই মুখ

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) খাত উল্লেখযোগ্য প্রসার লাভ করেছে। বিমানের টিকিট কাটার জন্য আর এজেন্সিগুলোতে সশরীরে যেতে হয় না। হোটেল বুকিং, প্যাকেজ ট্যুর, ভিসা প্রসেসিং- সবই এখন একটি মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমে সম্ভব। গ্রাহকের কাছে সময় ও খরচ বাঁচানোর এই সুযোগ প্রযুক্তির এক চমৎকার প্রয়োগ। তবে এই সুবিধার আড়ালেই তৈরি হচ্ছে নতুন ধরনের ঝুঁকি। ফিজিক্যাল অফিস, লাইসেন্স, ট্রাস্টেড এয়ারলাইন পার্টনার - এসব কিছু না জেনেই অনেকেই টাকা পরিশোধ করছেন শুধু ওয়েবসাইটের সুন্দর ‘ইন্টারফেস’ দেখে। সেই সুযোগই নিয়েছে কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান। ফ্লাইট এক্সপার্ট এমন একটি নাম, যা শুরুতে আস্থা অর্জন করেছিল। আন্তর্জাতিক রুটে টিকিট বুকিং, নানা অফার, এবং সহজ রিফান্ড নীতির কথা বলে তারা গ্রাহকের আস্থা পেয়েছিল। কিন্তু সেই আস্থা এখন ভেঙে পড়েছে। একেকজন গ্রাহক লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, অনেক ট্রাভেল এজেন্সিও ভুক্তভোগীদের তালিকায় রয়েছে।
প্রতারণা ঠেকাতে প্রয়োজন নিজস্ব সচেতনতা

যদিও সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এখন বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হয়েছে, কিন্তু এমন ঘটনার মূল প্রতিকার হলো ঘটনার আগেই সতর্কতা অবলম্বন করা। গ্রাহকদের কয়েকটি বিষয়ে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি, বিশেষত যারা প্রথমবার কোনো ওটিএ থেকে সেবা নিতে যাচ্ছেন-

লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন যাচাই করুন : যে প্রতিষ্ঠান থেকে টিকিট কিনছেন, তারা সরকারি অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্ট (আইএটিএ অথবা সিভিল এভিয়েশন কর্তৃক স্বীকৃত) কি না, তা যাচাই করা আবশ্যক। অনেক অনলাইন প্রতিষ্ঠান নিজেদের ওয়েবসাইটে লাইসেন্স নম্বর দিয়ে থাকে; তা যাচাই করতে পারেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে।

রিভিউ ও রেটিং খতিয়ে দেখুন : গুগল, ফেসবুক বা ট্রাস্ট পাইলট এ গ্রাহকদের রিভিউ একটি শক্তিশালী মাপকাঠি। কোনো প্রতিষ্ঠানের রেটিং যদি ৩ এর নিচে হয়, বারবার রিফান্ড সমস্যা বা টিকিট কনফার্মেশন নিয়ে অভিযোগ থাকে, তাহলে সাবধান হওয়াই উত্তম।

পেমেন্ট মেথড নির্বাচন : ওটিএর কাছে সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফার বা মোবাইল ব্যাংকিং না করে, বরং ক্রেডিট কার্ড বা ভিসা মাস্টারকার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করলে গ্রাহক কিছুটা বাড়তি নিরাপত্তা পান। কিছু ব্যাংকে ‘ডিসপিউট রেজ্যুলেশন’ সুবিধা রয়েছে, যা প্রতারণার ক্ষেত্রে রিফান্ড পেতে সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়াও অনেক ব্যাংক তাদের ক্রেডিট কার্ডে বিমা সুবিধা বা ‘প্রিমিয়াম শিল্ড’ দিয়ে থাকে। এই সুবিধার আওতায়, গ্রাহক মূল্য পরিশোধের পরেও কাক্সিক্ষত সেবা না পেলে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিফান্ডের আবেদন করলে, সেই অর্থ ক্রেডিট কার্ডে ফিরে আসে। 
রসিদ ও টিকিট যাচাই : টিকিট বুকিংয়ের পর প্রাপ্ত ‘পিএনআর’ বা ‘প্যাসেঞ্জার নেম রেকর্ড’ সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনের ওয়েবসাইটে যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় দেখা যায়, ওটিএ একটানা পেমেন্ট নিয়ে টিকিট ইস্যু করলেও, পিএনআর ভুয়া বা অকার্যকর।

ফিজিক্যাল অফিস আছে কি না : শুধু নামসর্বস্ব অনলাইনভিত্তিক কোম্পানি হলে সাবধান হোন। একটি স্থায়ী অফিস, কাস্টমার সার্ভিস ডেস্ক, ফোন নম্বর ও যোগাযোগের সুযোগ থাকা উচিত। প্রয়োজনে গুগল ম্যাপে প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা ও অবস্থান যাচাই করুন।

শর্তাবলি ও রিফান্ড পলিসি বুঝে নিন : বুকিংয়ের আগে ‘রিফান্ড পলিসি’ ভালোভাবে পড়ে নেওয়া উচিত। যদি প্রতিষ্ঠান রিফান্ডে বিলম্ব করে বা ‘নন-রিফান্ডেবল’ বলে জানায়, তাহলে ভবিষ্যতে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়। এ ছাড়াও অন্যান্য শর্তাবলি ‘টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন’ অনুচ্ছেদে লেখা থাকে। সময় নিয়ে সেগুলো পড়ে সিদ্ধান্ত নিলে, ভবিষ্যৎ হয়রানি এড়ানো সম্ভব। 

অফারের প্রলোভন থেকে সংযত থাকা
যেকোনো প্রেক্ষাপটে প্রতারণা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার প্রথম ধাপ হচ্ছে আকর্ষণীয় কোনো অফারের প্রলোভন থেকে সংযত থাকা। বিশাল মূল্যছাড় বা বাজারমূল্য থেকে অনেক কমে কোনো পণ্য বা সেবার অফার দেখলে সতর্ক হোন। ওই প্রতিষ্ঠান বাজারমূল্য থেকে কীভাবে কমে পণ্য বা সেবা দিচ্ছে, নিজেকে সেই প্রশ্ন করুক, তারপর সেই প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করুন। অফারে সাধারণত অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করার শর্ত থাকলে আরও সতর্ক হোন। উদাহরণস্বরূপ, ফ্লাইট এক্সপার্টের কথাই ধরা যাক। এয়ারলাইন্স ভেদে ১০ শতাংশের বেশি কম দামে টিকিট বিক্রি করে আসছিল ফ্লাইট এক্সপার্ট। অথচ এয়ারলাইন্সগুলো এজেন্সিগুলোকে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিতো। অর্থাৎ কোনো এজেন্সি তার গ্রাহকদেরকে টিকিটের মূল দাম থেকে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দিতে পারে। ৭ শতাংশ মূল্যছাড় দিলেও সেই এজেন্সির ব্যবসায়িক মুনাফা থাকবে না। আবার কোনো প্রতিষ্ঠান তো মুনাফা না করে ব্যবসা করবে না। কোন এজেন্সি হয়তো বিশেষ ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় দিয়ে থাকতে পারে, তবে সেটা সাময়িক অথবা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হবে। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠান যদি সবসময়েই অনেক কমে টিকিট বিক্রি করতে থাকে, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়। 

তাই, একটি ক্লিকেই ভ্রমণের টিকিট পাওয়া যেমন প্রযুক্তির দান, তেমনি প্রতিটি ক্লিক হোক সাবধানতার ছায়ায় ঢাকা। গ্রাহক হোন সচেতন, রাষ্ট্র হোক জবাবদিহিমূলক, এবং ব্যবসায়ীরা হোন নৈতিক, এই ত্রিমাত্রিক পথেই গড়ে উঠবে সত্যিকারের টেকসই ট্রাভেল ইকোসিস্টেম। 

হালিমা ইয়াসমিন মুক্তা, ভিসা প্রসেসিং এনালিস্ট ও ট্যুরিজম পেশাজীবী

Shera Lather
Link copied!