দীর্ঘ ২৯ বছর পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ঠাকুরগাঁও-২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। মনোনয়ন পেয়েছেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সাবেক মহাসচিব ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ডা. আব্দুস সালাম।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বহুদিন ধরে চলমান সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে নানা আলোচনা ও গুঞ্জনের অবসান ঘটে।
দলীয় সূত্র জানায়, চিকিৎসা পেশায় অভিজ্ঞতা, সংগঠনে ভূমিকা এবং এলাকাভিত্তিক গ্রহণযোগ্যতা—সব বিবেচনায় ডা. সালামের নাম চূড়ান্ত করা হয়। মনোনয়ন ঘোষণার পর ঠাকুরগাঁও-২ আসনের রাজনৈতিক মাঠে নতুন সজীবতা ফিরে আসে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা আবারও সংগঠনে সক্রিয় হয়ে বৈঠক, বিশ্লেষণ ও প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন।
এর আগে প্রথম দফায় গত ৩ নভেম্বর ঘোষিত ২৩৭ আসনের তালিকায় ঠাকুরগাঁও–১ ও ৩ নম্বর আসন থাকলেও ২ নম্বর আসনটি খালি রাখা হয়। এতে হতাশ হয়ে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। জোটের কাছে আসনটি ছাড়ার গুঞ্জনও ছড়ায়। বিশেষ করে গণঅধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি ফারুক হাসানকে নিয়ে নানা আলোচনা চলছিল। একই সময় মাঠে সক্রিয় ছিলেন জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীও।
সাধারণ ভোটারদের কেউ বলছিলেন, বিএনপি প্রার্থী না দিলে জামায়াত ‘ফাঁকা মাঠে গোল’ দেবে। কেউ কেউ বলছিলেন, নতুন মুখ হলেও ফারুক হাসান মাঠে প্রচারণায় ব্যস্ত। পুরো জেলা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় আটকে ছিল। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত ঘোষণায় সব গুঞ্জন থেমে যায়। ডা. আব্দুস সালামকে প্রার্থী ঘোষণা করায় নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই ঘোষণা ছিল আমাদের সবচেয়ে প্রত্যাশিত। দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, তাকে নিয়েই আমরা মাঠে সর্বশক্তি নিয়ে নামব। ডা. সালাম এলাকার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য। তার নাম ঘোষণায় সবাই আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে।’
হরিপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার প্রিয়ম বলেন, ‘দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আমাদের ঠাকুরগাঁও-২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এবার আমরা নিজের দলীয় প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করব, ইনশাআল্লাহ। ডা. সালাম আমাদের আসনে ব্যাপক জনপ্রিয়।’
উপজেলা যুবদল সভাপতি আব্দুল কাদের বলেন, ‘মনোনয়ন নিয়ে চলমান গুঞ্জন আমাদের সংগঠনকে দুর্বল করছিল। এখন আবার সংগঠন ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ইলিয়াস আলী হৃদয় বলেন, ‘এই একটি ঘোষণা রাজনৈতিক বিভ্রান্তি শেষ করেছে। বিএনপি কখনো মাঠ ছাড়ে না, এই মনোনয়ন তার প্রমাণ। ডা. সালাম পরিচ্ছন্ন, শিক্ষিত ও গ্রহণযোগ্য একজন মানুষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই আসনে বিএনপিকে শক্ত অবস্থানে আনতে হলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বহিষ্কারাদেশ দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।’
ঠাকুরগাঁও-২ আসনে ডা. আব্দুস সালামের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকছেন জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা আব্দুল হাকিম এবং গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী ফারুক হাসান।
বিএনপির প্রার্থী ডা. আব্দুস সালাম বলেন, ‘প্রথমেই আমি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করছি এবং উনার সুস্থতার জন্য দোয়া চাইছি। আমার দেশনায়ক তারেক রহমানের প্রতি আস্থা ছিল, তিনি আমাকে মনোনীত করবেন। আমাকে মনোনীত করায় দেশনায়ক তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ধন্যবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়েই আমি এই আসনটি দেশনায়ক তারেক রহমানকে উপহার দেব, ইনশাআল্লাহ।’
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ঠাকুরগাঁও-২ আসনটি বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড়–কাশিপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৮ হাজার ২৫ জন।
ঠাকুরগাঁও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিউল্লাহ বলেন, ‘কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পুরো প্রক্রিয়া পরিচালিত হচ্ছে। প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।’




সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন