শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ০৮:০৮ এএম

মানবিক প্রতিষ্ঠানে অমানবিকতা

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ০৮:০৮ এএম

মানবিক প্রতিষ্ঠানে অমানবিকতা

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি একটি মানবিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, যার কাজ দেশজুড়ে দুর্যোগ মোকাবিলা, স্বাস্থ্যসেবা, রক্তদানসহ নানামুখী মানবকল্যাণমূলক কর্মকা- নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়ানো। অথচ সেই প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে এখন অমানবিকতা, অনিয়ম ও দলীয়করণের ছায়া গভীরভাবে বিস্তার লাভ করেছে। এটি কেবল উদ্বেগজনক নয়, ক্ষমতার দরবারে মানবিকতা বিক্রির দৃষ্টান্ত।

রূপালী বাংলাদেশে প্রকাশিত ‘তিন কুতুবের কথায় চেয়ারম্যানের উঠবস’ শিরোনামের  অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির দুর্নীতির খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নতুন বোর্ড ও চেয়ারম্যান নিয়োগের পর রেড ক্রিসেন্টে নিয়োগ বাণিজ্য, নারী কেলেঙ্কারি, রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের পুনর্বাসনসহ নানা অনিয়মের খবর। নিয়োগবিধি ও প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা যেন একপেশে সিদ্ধান্তের কাছে পরাজিত। ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতার বলয়ে পড়ে সেবা প্রতিষ্ঠানটি এখন কিছু সুবিধাভোগীর স্বার্থরক্ষার যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।

বিশেষভাবে উদ্বেগজনক হলো, নারী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের প্রশ্রয় এবং ভুক্তভোগীদের হেনস্তার অভিযোগ। মানবিকতার মূল নীতির সঙ্গে এমন আচরণ সরাসরি সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া, পছন্দের লোককে নিয়মবহির্ভূতভাবে পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধি, চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তাদের ছুটি ও স্থায়ীকরণে অনিয়ম, এমনকি আওয়ামী ঘরানার রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অপচেষ্টা একটি ভয়াবহ প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাধির ইঙ্গিত দেয়।

এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠে, যে সংস্থা দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্বে নিয়োজিত, তার ভেতরে যদি অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা বাসা বাঁধে, তবে জনগণের আস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলাম এসব অভিযোগের কিছুটা সত্যতা রয়েছে বলে স্বীকার করে বলেছেন, এখানে কিছু বিষয়ে ব্যত্যয় আছে। আমি আসার পর নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করছি। নানা অভিযোগও পেয়েছি। স্বচ্ছতার জন্য আমি বিষয়টি দুদককে দিয়ে দিয়েছি। তারা তদন্ত করে দেখুক। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবেই আমরা চিনি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন মানবিক কাজে নজির স্থাপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে নানা অনিয়ম হয়েছে এটা সবারই জানা। গণঅভ্যুত্থানের পর এই সময়টায় কারো একক স্বেচ্ছাচারিতায় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে। এটা কখনো আমাদের কাম্য নয়। পূর্বের সরকারের সময় সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু এখন যেহেতু দেশ একটি নিরপেক্ষ সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে সেহেতু আমরা আশা করব, এসব দুষ্কৃতকারীরা এ সময়েই শাস্তির আওতায় আসবে। যা পরবর্তী সময়ে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।  

সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করা। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে রেড ক্রিসেন্টের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার নিশ্চয়তা দিতে হবে, যেন ভবিষ্যতে এর মতো মানবিক প্রতিষ্ঠানে অমানবিকতা আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।

মানবিক প্রতিষ্ঠানের ভেতরে এ অমানবিকতার বিস্তার সমাজে আস্থা ও নৈতিকতার ভিত্তি নষ্ট করছে। এই প্রবণতা রোধে প্রয়োজন জবাবদিহিতা, কঠোর নজরদারি এবং সর্বোপরি মানবিক মূল্যবোধের চর্চা। 

আমরা আশা করব, মানবিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সত্যিকারের মানবিকতায় ফিরিয়ে আনতে সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভুলে গেলে চলবে না,  এসব প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম বাড়তে থাকলে শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, পুরো সমাজই অমানবিক হয়ে উঠবে।

দেশ আজ একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে চলছে। তাই এই সময়ে উদাহরণ সৃষ্টি করে সবার জন্য একটি বার্তা দেওয়া জরুরি, যে মানবিকতার জায়গায় অমানবিকতা চলবে না। রেড ক্রিসেন্টকে ফিরিয়ে আনতে হবে জনসেবার নির্ভরযোগ্য প্রতীক হিসেবে। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!