শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বাহারুল ইসলাম, ঝিনাইদহ 

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ১১:৫০ পিএম

পাখির গ্রাম আশুরহাট

বাহারুল ইসলাম, ঝিনাইদহ 

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ১১:৫০ পিএম

পাখির গ্রাম আশুরহাট

প্রায় ১২ বিঘা আয়তনের দুটি পুকুরের চারপাশে সারি সারি গাছ। গাছের প্রতিটি ডালে বাসা বেঁধেছে এশীয় শামুকখোল, পানকৌড়ি ও সাদা সারস পাখি। প্রায় ১০ হাজার পাখির এই আবাসভূমি দেখলে হংকংয়ের মনস্টার বিল্ডিংয়ের মতো মনে হতে পারে। দিনভর পাখিগুলো বাসা তৈরি, ডিমে তা দেওয়া এবং বাচ্চাদের খাওয়াতে ব্যস্ত থাকে। দুই পুকুরের মাঝখান দিয়ে পিচঢালা রাস্তায় ইঞ্জিনচালিত যানবাহন কিংবা মানুষের কোলাহল তাদের কর্মকা-ে প্রভাব ফেলতে পারে না। এই গ্রামের মানুষও যেন তাদের সেবায় নিয়োজিত। বাসা থেকে বাচ্চা পড়ে গেলে তারা আবার উঠিয়ে দেয় বাসায়।

এমনই দৃশ্যের দেখা মিলবে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের আশুরহাট গ্রামে, যা এখন ‘পাখির গ্রাম’ নামে পরিচিত।

জানা যায়, ২০০৭ সালের শীতকালে একঝাঁক পারিযায়ী পাখি গ্রামের একটি শিমুলগাছে আশ্রয় নেয়। ভোরে পাখিরা আহার সংগ্রহে বের হতো। সন্ধ্যার আগে আবার ফিরে ওই শিমুলগাছে রাত কাটাত। ২০১৩ সাল থেকে পাখিরা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলে গ্রামটিকে পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

গ্রামের বিশ্বাসপাড়ার গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস ও রাজ্জাক মিয়ার পৃথক দুই পুকুর ঘিরে বর্তমানে পাখিদের রাজত্ব। শীতকালে আসা পাখিরা এখনো বাস করছে এখানে। বর্ষাকালেও এখানে প্রজননে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে এশিয় শামুকখোল, পানকৌড়ি ও সাদা সারস পাখি। আশপাশের বিল-খালে সারা দিন ঝাঁকে ঝাঁকে খাবার খোঁজে আর এখানে ফিরে এসে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বংশ বিস্তারে। এসব পাখির প্রধান খাবার শামুক, ছোট মাছ ও জলজ পোকামাকড়। এবারের ভারি বৃষ্টিতে মাঠের পর মাঠ পানিতে একাকার। সেখানেই তাদের খাদ্যের সমাহার।

এশীয় শামুকখোল পাখি মূলত বর্ষাকালে পর্যাপ্ত খাবারের মজুত আছে এমন এলাকায় প্রজনন করে। এরা তিন থেকে চারটি ডিম পাড়ে। তবে পানকৌড়ি ছয় থেকে আটটি ডিম পাড়ে। সারস পাখি আরও বেশি ডিম পাড়ে। এরা সবাই দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। আশুরহাট গ্রামের এই জায়গাতেই গত প্রায় ১০ বছর ধরেই এভাবে অতিথি পাখিরা বসবাস করে। তবে এ বছরই এত বেশি শামুকখোল পাখি এখানে আবাস গড়েছে।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনা এই এলাকাকে সংরক্ষিত বলে ঘোষণা করেছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে পাহারা দেওয়া হয় এবং ২০১৭ সাল থেকে এখানে পাখি সংরক্ষণ সমিতি গঠন করা হয়েছে। এই গ্রামে শিকারিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। তবে দর্শনার্থীরা প্রতিদিনই পাখি দেখতে আসে এখানে।

পুকুরপাড়ের বাসিন্দা পল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘বহু বছর ধরে এখানে পাখি আসে। বাসা তৈরি করে বাচ্চা তোলে। বাচ্চা বড় হলে চলে যায়। এখানে কেউ পাখি মারে না। বাসা থেকে বাচ্চা পড়ে গেলে আমরা বাসায় উঠিয়ে দিই। অনেক মানুষ প্রতিদিনই পাখি দেখতে আসে।’ 

এখানে আসা দর্শনার্থীদের জন্য ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ থেকে তৈরি করা হয়েছে ছাউনী। সেখানে পানি পানের জন্য স্থাপন করা হয়েছে টিউবওয়েল। আরেক বাসিন্দা রুপিয়া খাতুন বলেন, দুই-তিন মাস আগে সরকার থেকে এখানে বসার জন্য ঘর বানিয়েছে। অনেকেই এখানে পাখি দেখতে আসে। পাখি দেখে তারা আনন্দ পায়।

পাখি সংরক্ষণ সমিতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আগের মতো প্রশাসনিক তৎপরতা না থাকায় রাতের বেলা কিছু শিকারি এখানে আসছে। আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) এ বিষয়ে অবগত করব। সরকারকে বহুবার এই জমি অধিগ্রহণ করে অভয়ারণ্য ঘোষণার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু ব্যক্তিমালিকানা হওয়ায় গত বছর বেশ কিছু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আর যেন কেউ গাছ কাটতে না পারে, সে বিষয়ে প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে।’

শৈলকুপা উপজেলা ইউএনও স্নিগ্ধা দাস বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন গ্রাম পুলিশ টহল দেয়। কেউ পাখি শিকারের চেষ্টা করলে আমরা তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনার বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা তন্ময় আচার্য্য বলেন, ‘আমরা এটাকে পাখি কলোনি বানানোর জন্য জমি অধিগ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়েছি। ওখানে আব্দুর রাজ্জাক সাহেব নিজ উদ্যোগেই জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে সম্মত আছেন, কিন্তু আরেক পুকুরের মালিক গোপাল চন্দ্র বিশ্বাসের আপত্তি থাকায় হচ্ছে না। আমরা তাদের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, ওই জমি দিয়ে অন্য জায়গা থেকে সরকারি জমি নিতে। তারা পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে জানাবে বলেছে। এ ছাড়া আমরা কয়েক বছর আগে এখানে অস্থায়ী আনসার ক্যাম্প বসিয়েছিলাম, কিন্তু এখন সেটা নেই।  স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব।’
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!