রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে শ্যামলী আক্তার নামে এক নারীকে এবং কদমতলীতে শান্ত আহমেদ বাবু নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত সোমবার মধ্যরাতে পৃথক ঘটনা দুটি ঘটে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে শ্যামলীকে (৩০) কুপিয়ে হত্যা করেন তার পরকীয়া প্রেমিক সুজন (৩৮)। ঘটনার পরপরই ঢাকা রেলওয়ে থানার (কমলাপুর) পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সুজনকে গ্রেপ্তার করে। ভিকটিম শ্যামলীর বাড়ি নাটোর জেলায় আর সুজনের বাড়ি পাবনায়।
জানা গেছে, নিহত শ্যামলী ও সুজন স্বপ্ন সুপারশপের একটি শাখায় সেলসম্যান ও সেলসগার্ল পদে চাকরি করতেন। তারা দুজনই বিবাহিত, আলাদা সংসার আছে। দুজনেরই সন্তানও আছে। একই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে দুজন পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
ঢাকা রেলওয়ে (কমলাপুর) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদিন বলেন, এ ঘটনায় নিহতের ভাই মিজান বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় সুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ভিকটিম ও আসামি গ্রিন রোড এলাকায় থাকতেন। একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুবাদে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন দুজন। সোমবার রাতে তারা কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘুরতে আসেন। সেখানে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এ সময় ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে শ্যামলীকে হত্যা করেন সুজন।
রেলওয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, অনেক দিন আগে স্বামীর সঙ্গে শ্যামলীর ছাড়াছাড়ি হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সুজন পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, শ্যামলীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু শ্যামলী তাকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিলেন না। তা ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে শ্যামলীর সম্পর্ক ছিল বলে তার ধারণা। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে শ্যামলীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী চার-পাঁচ দিন আগে তিনি একটি ছুরি কেনেন।
তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সুজন বলেন, সোমবার রাতে তিনি কৌশলে শ্যামলীকে ডেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে নিয়ে আসেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে রেলস্টেশনের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে তাকে ছুরিকাঘাত করেন। কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশেই ঢাকা রেলওয়ে থানা। খবর পেয়ে রেলওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা রক্তমাখা ছুরিসহ সুজনকে হাতেনাতে আটক করে এবং রক্তাক্ত অবস্থায় শ্যামলীকে উদ্ধার করে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে শ্যামলীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এদিকে সোমবার রাতে কদমতলী থানাধীন পাটেরবাগ এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে কুপিয়ে হত্যা করা হয় যুবক শান্ত আহমেদ বাবুকে। নিহত বাবু শনির আখড়া এলাকার মৃধাবাড়ীতে থাকতেন। একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।
নিহতের বন্ধু তন্ময় জানান, রাতে শান্তর ছোট ভাইয়ের মোবাইল ফোন কয়েকজন দুর্বৃত্ত নিয়ে যায়। বিষয়টি জানার পর শান্তসহ আরও চার-পাঁচজন ঘটনাস্থলে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে হঠাৎ ২০-৩০ জন তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় দুর্বৃত্তরা শান্তর গলায় ছুরি ঢুকিয়ে দেয় এবং শরীফ নামে একজনকে মারাত্মকভাবে আহত করে। আহত দুজনকে ঢাকা মেডিকেলে নিলে চিকিৎসক শান্তকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত শরীফের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তন্ময় বলেন, ‘ওই হামলাকারীদের মধ্যে কোরবান, হাসান, হোসাইন ও জনি নামে কয়েকজনকে আমরা চিনেছি। চোখের সামনে আমার বন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, আরেকজন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।’
কদমতলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাফায়েত বলেন, ‘পূর্বশত্রুতার জেরে শান্তকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে আমরা শনাক্ত করেছি। তাদের গ্রেপ্তারে কাজ করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, নিহতের গ্রামের বাড়ি বরিশালে। তার মরদেহ দাফন শেষে পরিবার থানায় মামলা করতে আসবে বলে জানিয়েছে।