সংকটাপন্ন কয়েকটি ব্যাংকের কারণে পোশাক রপ্তানিকারকদের আর্থিক কার্যক্রমে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) একটি প্রতিনিধিদল। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে আয়োজিত এই বৈঠকে প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।
প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, পরিচালক ফাহিমা আক্তার, পরিচালক এ.বি.এম. সামছুদ্দিন, রিও ডিজাইন লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হারুক আহমেদ, ও’ডেল অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ মোহাম্মদ মোহিত, ডে অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনওয়ার হোসেন পাটওয়ারি এবং একেএইচ ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুল আলম। বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি গভর্নরের কাছে পাঁচটি সংকটাপন্ন ব্যাংকের কারণে পোশাক রপ্তানিকারকরা বর্তমানে যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলোতে তীব্র তারল্য সংকটে থাকার কারণে ব্যাংকগুলো রপ্তানি আয় (প্রত্যাবসিত রপ্তানি মূল্য) এলেও সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারকদের সেই অর্থ সময়মতো পরিশোধ করছে না, এমনকি ব্যাংকগুলো নতুন লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলতেও ব্যর্থ হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট পোশাক কারখানাগুলো দারুণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে নিয়মিত কার্যক্রম ও রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। বিশেষ করে কারখানাগুলো সময়মতো শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে না পারার কারণে শ্রমিক অসন্তোষ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে, যা আইনশৃঙ্খলার পরিপন্থি। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মভাবে ক্ষুণœ করছে, সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের বাংলাদেশের প্রতি আস্থাও কমাচ্ছে, যা শিল্পের জন্য মোটেও শুভ নয়।
বৈঠকে বিজিএমইএ নেতারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে অনেক প্রতিষ্ঠান সহসাই রুগ্ণ শিল্পে পরিণত হবে। ফলে অনেক শ্রমিক ভাইবোন কর্মসংস্থান হারাবে এবং সর্বোপরি, দেশের প্রধান রপ্তানি খাত আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে, যা মোটেও কাম্য নয়। বিজিএমইএ সভাপতি এই জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বিজিএমইএ প্রতিনিধিদলের উদ্বেগ গুরুত্ব সহকারে শোনেন এবং এই সমস্যার একটি দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, সাময়িকভাবে ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের প্রাপ্য টাকা পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে রপ্তানিকারকদের জরুরি আর্থিক চাহিদা মেটানো যায়। পরবর্তীতে, সমস্যাটির একটি স্থায়ী ও চূড়ান্ত সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিজিএমইএ সভাপতি আশা করেন যে, দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে। পোশাকশিল্পে বিরাজমান আর্থিক অনিশ্চয়তা দূর হবে এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরে আসবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন