অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে বেশ কড়াকড়ি শুরু করেছে ব্রিটিশ সরকার। এতে কপাল পুড়ছে বাংলাদেশ থেকে পড়তে আসা হাজারো শিক্ষার্থীর। ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং দেশে ফিরে যাওয়ার ভয় তাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলছে। জানা যায়, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও যারা ব্রিটেনে অবস্থান করছেন, তাদের সরাসরি টেক্সট এবং ই-মেইলের মাধ্যমে সতর্ক করা হচ্ছে। সব টেক্সট এবং ই-মেইল বার্তায় বলা হচ্ছে, তাদের দ্রুত দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। অন্যথায় জোরপূর্বক পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য ব্রিটেন। ভিসা ডাটার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশটিতে পড়তে আসেন ১৫ হাজার ২৩৪ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, ২০২৩ সালে আসেন ৯ হাজার ২৭৫ জন। ২০২৪ সালে আসেন ১১ হাজার ৮৮ জন। এ বছর (২০২৫) আসেন ৬ হাজার ৪শ জন শিক্ষার্থী।
ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার সদ্য এক বার্তায় জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বর থেকেই ‘চ্যানেল অভিবাসীদের’ প্রথম দলটিকে ফেরত পাঠানো শুরু হবে। একই সঙ্গে সরকার শরণার্থীদের জন্য পারিবারিক পুনর্মিলন আবেদনের নতুন প্রক্রিয়াও স্থগিত করেছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিকে বিশেষ বিমানে করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো বার্তাগুলো সেইসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য, যারা তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন এবং রাজনৈতিক আশ্রয় (অ্যাসাইলাম) নেওয়ার চেষ্টা করছেন। শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠানো বার্তাগুলোতে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে কোনো ছাড় না দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এসব বার্তায় বলা হয়েছে, ‘আপনি যদি এমন কোনো রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন যা ভিত্তিহীন, তবে সেটা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হবে।’
অন্য এক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার যেকোনো অনুরোধ কঠোরভাবে যাচাই করা হবে। যদি আপনি মানদ- পূরণ করতে না পারেন, তাহলে কোনো সহায়তাই পাবেন না। এ ছাড়াও বলা হয়েছে, ‘যদি আপনার যুক্তরাজ্যে থাকার কোনো আইনি অধিকার না থাকে, তবে আপনাকে অবশ্যই এই দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। যদি না যান, আমরা আপনাকে অপসারণ করব।’
এই বার্তাগুলো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করেছে। অনেক শিক্ষার্থী তাদের স্বপ্নের পেছনে বিশাল আর্থিক ও মানসিক ত্যাগ স্বীকার করে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন। হঠাৎ এমন কঠোর পদক্ষেপের কারণে তাদের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার পথে। যেসব বাবা-মা তাদের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করে যুক্তরাজ্যে পাঠিয়েছেন, তারা এখন সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়েছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ও সমাজে তাদের অবদানকে মূল্য দেওয়া হচ্ছে না।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থী তায়েফ হাসান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সরকারের কঠোর নীতি আমাদের বেকায়দায় ফেলেছে। বড় অংকের টাকা খরচ করে দেশ থেকে এসেছি। এমন অবস্থায় আমাদের কিছুই করার নেই। অবৈধ হয়ে গেলে এখানে কাজের সমস্যা। থাকা-খাওয়া, পরিবার-পরিজনের খোঁজ নেওয়া ক্রমেই দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে। এখানে কারো কিছু করারও নেই। মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি।ব্রিটিশ কাউন্সিলের তথ্যমতে, নেপাল ও পাকিস্তান থেকে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে প্রায় দ্বিগুণ শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষা নিতে গেছেন। ২০২২ সালে নেপাল ও পাকিস্তান থেকে যুক্তরাজ্যে পড়তে যান যথাক্রমে ৪ হাজার ৬৬৪ এবং ২৭ হাজার ৯০৩ শিক্ষার্থী। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় নেপাল ও পাকিস্তান থেকে যথাক্রমে ৮ হাজার ৫২৮ ও ৩১ হাজার ৯৩। অথচ ভারত ও বাংলাদেশ থেকে এ হার হঠাৎ কমে যায়। ভারত থেকে ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে পড়তে যান ১ লাখ ৩৯ হাজার ১৫২ জন শিক্ষার্থী। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা প্রায় ১৪ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ২০ হাজার ১১০ জনে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন