বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫, ০৮:৪৮ এএম

হঠাৎ উত্তপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়  ক্যাম্পাসে বাড়ছে উদ্বেগ

সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫, ০৮:৪৮ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে পড়ছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ঘটছে সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টাহামলা। গতকাল মঙ্গলবারও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কোষাধ্যক্ষের ভবনে তালা দেওয়ার পাশাপাশি রেলপথ অবরোধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। স্থানীয়দের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবি তুলে বিক্ষোভ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ডাকসু নির্বাচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে রিটকারী নারী শিক্ষার্থীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকির প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রদল। এর বাইরে তিন দফা দাবিতে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করছে বুয়েটসহ সরকারি-বেসরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সবমিলিয়ে হঠাৎ উত্তাপে ক্যাম্পাসে বাড়ছে উদ্বেগ।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, সংঘর্ষ ও আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত সমাধান না হলে অস্থিরতা আরও বিস্তৃত হতে পারে। এতে দেশের উচ্চশিক্ষাকে দীর্ঘমেয়াদি সংকটে ঠেলে দেবে। অবশ্য শিগগিরই এসব অচলাবস্থার নিরসন হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার।

গত ২৭ আগস্ট তিন দফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। পরে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এরপর থেকেই এই দাবি আদায়ে তিন দিন কমপ্লিট শাটডাউনের পর গত রোববার ক্লাস শুরু হলেও হয়নি পরীক্ষা। গতকাল মঙ্গলবারও লালকার্ড প্রদর্শন কর্মসূচি পালন করেছেন বুয়েট, চুয়েট, রুয়েট ও কুয়েটসহ সরকারি-বেসরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও আগামী শুক্রবার চট্টগ্রামে বিভাগীয় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া প্রকৌশল খাতের সংকট নিরসনের দাবিতে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (ডুয়েট) শিক্ষার্থীরা গতকাল বিকেলে গাজীপুরে সড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। 

অন্যদিকে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতিবাদে পাল্টা সাত দফা কর্মসূচি দিয়েছেন ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা। তারাও গতকাল ঢাকা, রংপুর, পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। 

গত ৩০ আগস্ট চবির পাশের এলাকার একটি বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে এক ছাত্রীর বিত-ার জেরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয়দের হামলার ঘটনায় চবি প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন ছাত্রদলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ছাত্রসংগঠন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবি তুলেছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

গত ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কম্বাইন্ড ডিগ্রি’র দাবিতে চলমান আন্দোলনে হামলার ঘটনার পরই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করে তারা আন্দোলন করছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে রেললাইন অবরোধ করেন তারা। এদিন দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ভবন এবং টিএসসি সংলগ্ন পূবালী ব্যাংক বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারীরা জানান, এ কর্মসূচি অনির্দিষ্টকালের জন্য। যতদিন আমাদের ছয় দফা দাবি মেনে নেওয়া না হচ্ছে, ততদিন এ ভবনগুলো তালাবদ্ধ থাকবে।

বাকৃবির অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ূন কবির বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন চাকরি করার পর অবসরে যান। তারা নিয়মিত পেনশন পান। তাদের পেনশনের টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি খামার ও ফার্মের কর্মচারীদের বেতনসহ নানা খাতে অর্থ ব্যয় হয়’।

এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আর ডাকসু নির্বাচনে ঢাবি শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে রিটকারী নারী শিক্ষার্থীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রদল। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ঢাবির পায়রা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি।

অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘নারী নিপীড়নমূলক কথাবার্তা ৫ আগস্টের পর থেকে চলে আসছে। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। যে কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে গণধর্ষণের পদযাত্রার হুমকির মতো  ঘটনা দেখতে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ঢাবি শিক্ষার্থী সংসদ-১ এবং ২-এ নারীদের বিভিন্ন সময় সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে। কিন্তু উপাচার্য এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এ ছাড়া ঢাবি প্রক্টর যদি দিন-রাত কাজ করেন, তাহলে এই ঘটনা কীভাবে ঘটেছে?’

এই গণধর্ষণের হুমকির প্রতিবাদের ঢাবি ছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহীসহ দেশের বেশ কয়েকটি বিশ^বিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। হুমকিদাতা ওই শিক্ষার্থীর বিচার নিশ্চিতের দাবিতে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কও। 

অন্যদিকে তিন দফা দাবি আদায়ে গত কয়েকদিনে একাধিবার রাজধানীর আগারগাঁও ‘ব্লকেড’ করেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা।

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো অস্থির হচ্ছে তা শুভ লক্ষণ নয়। কেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন ঘটনা ঘটছে তা খুঁজে বের করে দ্রুত সমাধান করা উচিত, না হলে দীর্ঘ মেয়াদে উচ্চ শিক্ষা সংকটে পড়বে। 

এদিকে চবিসহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমের প্রস্তাব পাঠাতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সংঘর্ষ ও অস্থিরতার ঘটনায় স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার। 

গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, গত কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে, সেটি মন্ত্রণালয় অবহিত রয়েছে। অবশ্যই এতে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। এতে আমরা উদ্বিগ্ন। 

তিনি আরও বলেন, যেকোনো সমস্যাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। সে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করি দ্রুত এর সমাধান হবে। যত দ্রুত সেটা হয় ততই মঙ্গলজনক। 

এই ধরনের পরিস্থিতি কারও কাম্য নয় মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতি শিক্ষকরাও চান না, ছাত্ররাও চান না, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও চায় না। আমাদের আশা, খুব দ্রুত এর সমাধান আসবে।

Link copied!