লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার রেট বা লাইবরের পরিবর্তে সিকিউর্ড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট বা সোফার ব্যবহার করছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো লাইবরের মধ্যেই আটকে রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের এলএনজি (লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) আমদানি পেমেন্ট দিতে সমস্যা হচ্ছে, তেমনি আগের আমদানি করা এলএনজির লেট পেমেন্টও দেওয়া যাচ্ছে না। তাই সমস্যা সমাধানে পেট্রোবাংলা সোফার ব্যবহার করে লেট ফি হিসাবের অনুমোদন চেয়েছে অর্থ বিভাগের কাছে। বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি বিভাগ মনে করে, বাংলাদেশের জ¦ালানির নিরাপত্তা বাড়াতে এবং অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে সোফার ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যা জ¦ালানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি উৎপাদন, সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনায় আধুনিকীকরণের ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে সোফারের ব্যবহার দেশের অর্থনৈতিক সুসম্বন্ধ ও সমৃদ্ধির পথ উন্মোচন করবে। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে, যা জাতীয় উন্নয়নের পথে একটি বড় সংকেত হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের এলএনজি (লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) আমদানিসংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, এলএনজি ক্রয়ে ব্যবহৃত লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার রেট বা লাইবরের পরিবর্তে সিকিউর্ড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট বা সোফার ব্যবহারের প্রস্তাব সামনে এসেছে। বর্তমান বিশ্বজুড়ে এলএনজি এবং অন্যান্য জ¦ালানি সম্পদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে একাগ্রতা এবং স্থিরতা বাড়াতে সোফার অপরিহার্য।
পেট্রোবাংলার অফিসিয়াল সূত্র অনুযায়ী, ২০১০ সালের ‘বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন’-এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে উদ্দেশ্য করে একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ৮ জুন এবং ২০২২ সালের ১০ মে, দুটি পর্যায়ে প্রকাশিত এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট বা ইওআইয়ের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো অংশগ্রহণ করে। ফলে পেট্রোবাংলা ২২টি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাস্টার সাপ্লাই এগ্রিমেন্ট বা এমএসপিএ স্বাক্ষর করেছে। যদিও পরবর্তী সময়ে ওমানের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করার ফলে মোট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৩টি হয়েছে।
তবে বর্তমান সময়ের প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পেট্রোবাংলার পক্ষে ব্যাবসায়িক স্তরে কিছু পরিবর্তন জরুরি ছিল। ২০২২ সালের মে মাসের আগে স্বাক্ষরিত এমএসপিএ অনুযায়ী ‘লেট পেমেন্ট রেট’ ছিল ৩ শতাংশের ওপরে লাইবর। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে লাইবর ব্যবহারের পতন এবং সোফারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি লক্ষ করা যাচ্ছে। ফলে ২০২২ সালের ২১ জুলাই অনুষ্ঠিত পিপিসি সভায় পেট্রোবাংলা সোফার ব্যবহার করার বিষয়ে একটি প্রস্তাব প্রদান করে। ওই সভায় অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটিতেও এ বিষয়ে আলোচনা হয় এবং পরবর্তী সময়ে সরকারি অনুমোদনও মেলে।
এদিকে, এলএনজি আমদানিতে সোফারের ব্যবহার এমন একটি কল্যাণকর পদক্ষেপ, যা বাজারের জন্য নতুন উন্নতির ভিত তৈরি করবে। বাংলাদেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হবে, যদি সব পর্যায়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের পর থেকে এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ইনভয়েসগুলোর যাচাই, লাইবরের পরিবর্তে সোফার ব্যবহার করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পেট্রোবাংলার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এলএনজি আমদানির আপডেটেড ইনভয়েসসমূহ ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলো সরকারের অর্থনৈতিক নীতির প্রতি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। সোফার ব্যবহারের মাধ্যমে এলএনজি আমদানি লেনদেনের স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতা বাড়বে। পেট্রোবাংলার সঙ্গে উল্লিখিত ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সব স্তরের এলএনজি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতের দ্রুত উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং আশা করা হচ্ছে যে, এই সময়োপযোগী পরিবর্তনগুলো সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সাফল্য আনতে সহায়ক হবে। সরকারের নীতিগত দ্বন্দ্ব সমাধানের মাধ্যমে আরও অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। এলএনজি আমদানি ও সরবরাহের ক্ষেত্রে সোফার ব্যবহারের মাধ্যমে জ¦ালানির দাম স্থিতিশীল করার পথে সাময়িক সুবিধা পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এলএনজি আমদানিতে সোফার ব্যবহার একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। দেশের নাগরিকদের জন্য এলএনজি সরবরাহ আরও বাড়বে এবং জ¦ালানিসংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি হবে। সহজলভ্যতা ও স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য এই প্রস্তাবগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সোফার ব্যবহার দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের জন্য সুদূরপ্রসারী ফলাফল বয়ে আনবে এবং জাতির উন্নয়নে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে পেট্রোবাংলা মনে করে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন