বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রেজাউল করিম, রংপুর

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫, ১০:০১ এএম

আলু নিয়ে বিপাকে উত্তরের কৃষক

রেজাউল করিম, রংপুর

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫, ১০:০১ এএম

আলু

আলু

*** সরকারের নির্ধারিত দাম ২২ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ১৪ টাকা কেজি
*** কৃষক, ব্যবসায়ী, হিমাগার মালিক সবার মাথায় হাত

আলুর দর পতনে চরম বিপাকে পড়েছে উত্তরের কৃষক, হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীরা। আলুর দর পতন হওয়ায় তাদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কায় দিশাহারা তারা। জানা যায়, সরকার আলু চাষিদের উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হিমাগারের গেটে আলুর বিক্রয় মূল্য প্রতি কেজি সর্বনি¤œ ২২ টাকা নির্ধারণ করেছে। তবে সরকারের নির্ধারিত দামে হিমাগার গেটে আলু বিক্রি হচ্ছে না। হিমাগার গেটে ১২-১৪ টাকা এবং খুচরা বাজারে ২০-২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু।

গত মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কৃষি মন্ত্রণালয় হিমাগারের গেটে প্রতি কেজি আলুর সর্বনি¤œ মূল্য ২২ টাকা দরে ৫০ হাজার টন আলু কেনার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে-এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এদিকে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে নভেম্বরের শেষের দিকে আগাম নতুন আলু উঠবে। তখন পুরাতন আলুর চাহিদা অনেক কমে যাবে। তাই সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ অনুযায়ী আলু বিক্রি না হলে ব্যবসায়ী, কৃষক ও হিমাগার মালিকদের লোকসানে পড়তে হবে।

রংপুর নগরীর ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন, আবুল কালাম বলেন, স্থানীয় একটি হিমাগারে প্রায় ৩ হাজার বস্তা আলু রেখেছি। সরকার ২২ টাকা কেজি নির্ধারণ করে দেওয়ায় কিছুটা আশার আলো দেখে। বুধবার হিমাগারে গিয়ে দেখি প্রতিকেজি আলু ১২-১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে আলু বিক্রি না করেই চলে আসি।

গঙ্গাচড়া উপজেলা গজঘণ্টা ইউনিয়নের আলু চাষি বাবুল মিয়া বলেন, আবু হানিফ হিমাগারে আলু রেখেছি, লোকসানের ভয়ে আলু হিমাগার থেকে উত্তোলন করছি না। সরকারি ঘোষণায় হিমাগার গেটে আলু বিক্রি করতে গিয়ে দেখি নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হচ্ছে না। সংসারের খরচ মিটাতে লোকসান দিয়ে সামান্য কিছু আলু বিক্রি করেছি।

তিনি আরও বলেন, কৃষকের জমি থেকে আলু ক্রয়, বস্তা-বাঁধাই, লেবার, হিমাগার ভাড়াসহ মোট খরচ পড়েছিল ২২ লাখ টাকা। বর্তমান বাজার দরে আলু বিক্রি করলে ঘরে আসবে আট লাখ টাকা। পুঁজি থেকে চলে যাবে ১৪ লাখ টাকা। এখন কী করব, এই চিন্তায় দিশাহারা।

মিঠাপুকুরের উত্তমাশা কোল্ড স্টোরেজ প্রা. লি. এর প্রোপাইটার মো. ওবায়দুল হক বলেন, তার হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা ২ লাখ টনের কিছু বেশি। সরকার নির্ধারিত সর্বনি¤œ দামের চেয়েও অনেক কম দামে আলু বিক্রয় হচ্ছে। কৃষকরা ভালো মূল্য না পেলে বিপাকে পড়বেন হিমাগার মালিকরা। কারণ অধিকাংশ হিমাগার চালাতে ঋণ করতে হয়েছে। আবার অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ীকে আলু বাবদ ঋণ দেওয়া হয়েছে।

কৃষকরা জানান, এক দোন (২২ শতক) জমিতে আলুর বীজ লাগে ২৪ হাজার টাকার। রোপণ, সার, উত্তোলন ইত্যাদির খরচ পড়ে ১৯ হাজার টাকা। এতে মোট খরচ হয় ৪০-৪২ হাজার টাকা। উৎপাদন হয় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ কেজি। সেই হিসেবে এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৯-২০ টাকা। হিমাগারে আলু রাখলে কেজি প্রতি আরও যোগ হবে ৮ টাকা। সব মিলিয়ে দেখা যায়, এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়ছে ২৬-২৮ টাকা। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী প্রতিকেজি আলুতে কৃষকদের লোকসান হচ্ছে ২০-২২ টাকা। বর্তমানে খুচরা বাজারে ১০-১২ টাকায় আলু বিক্রি হলেও পাইকারিতে দাম এর অর্ধেক।

জানা গেছে, কৃষি অফিসের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে এবার আলুর আবাদ হয়েছে। রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় এবার আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৩৯ হেক্টর। এবার আলুর উৎপাদন হেক্টর প্রতি ২৬ টনের বেশি হয়েছে। এই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ৩২ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী প্রতি টন আলুতে ২০ হাজার টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে। সেই হিসাবে ৩২ লাখ টন আলুতে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে। এসব তথ্য জানা গেছে ব্যবসায়ী ও কৃষি অফিসের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে।

রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ৭১টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা সাড়ে ৭ লাখ টন। দুই একজন বড় কৃষক অথবা ব্যবসায়ী বাইরের জেলার হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করলেও হিমাগারের বাইরে রয়েছে ২২ থেকে ২৪ লাখ টন আলু। এসব আলু কৃষকরা নিজস্ব পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে থাকেন। তপ্ত আবহাওয়ায় সংরক্ষিত আলু নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই অবস্থায় নামমাত্র মূল্যে কৃষকরা আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের নির্ধারিত মূল্য বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।

রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল ও লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক রকিব হায়দার বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্য যাতে বাস্তব না হয় সে ব্যাপারে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!