*** মেলায় নেই বৃক্ষ
*** গাড়ি পার্কিংয়ের প্রতিটি থেকে নেওয়া হচ্ছে ৫০-১০০ টাকা
*** লটারীর নামে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন আকর্ষণীয় পুরস্কারের প্রলোভন
*** টিকিট কিনে সর্বশান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ
গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নাম ভাঙিয়ে বৃক্ষমেলার নামে চলেছে জুয়ার আয়োজন। সদর উপজেলার নয়নপুর (রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট) এলাকার স্থানীয় ঈদগা মাঠে গত ২২ আগস্ট (শুক্রবার) থেকে ‘বৃক্ষ ও কুটির শিল্পমেলা-২০২৫’ ব্যানারে মেলার কার্যক্রম শুরু হলেও বৃক্ষ ও কুটির শিল্পের স্টল দেখা যায়নি। চোখে পড়েছে লটারির নামে জুয়ার ফাঁদ! মাঠের অপরপাশে বন বিভাগের জায়গায় বৃক্ষের ক্ষতি করে বানানো হয়েছে বিশাল পার্কিং। গাড়ি পার্কিংয়ের প্রতিটি গাড়ি থেকে নেওয়া হচ্ছে ৫০-১০০ টাকা, যেটি সম্পূর্ণ অবৈধ।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন শতাধিক অটোরিকশা দিয়ে গাজীপুর সদর উপজেলা ও শ্রীপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকদের টার্গেট করে প্রচারণা চালিয়ে লটারি নামের বিক্রি করছে জুয়ার টিকিট। অটোরিকশাগুলোর ব্যানারে লেখা রয়েছে ‘সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড’। এ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন আকর্ষণীয় পুরস্কারের প্রলোভন। এতে প্রতিদিন লটারির টিকিট বিক্রি করছে ১৫-২০ লাখ টাকা। আর এর মধ্যে পুরস্কার হিসেবে বিতরণ করা হচ্ছে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার বিভিন্ন পণ্য। বাকি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা।
মেলার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মেলা ও লটারির নামে জুয়া পরিচালনা করছেন, গফুর, সামসুদ্দিন সামসু, মজিবর, বাদল, আতাসহ অত্র এলাকায় চিহ্নিত হাউজি জুয়ার মাঠ পরিচালনাকারীরা। উল্লেখ্য, গত বছরের ২২ অক্টোবর জয়দেবপুর থানা পুলিশ গফুর ও তার সঙ্গীদের পিরুজালী জুয়ার কোট থেকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেন, সেখান থেকে জামিনে বেরিয়ে তার সঙ্গীদের নিয়ে মেলার নামকরে লটারির আড়ালে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
অনুমোদন কোথায় থেকে নিয়েছেন জানতে চাইলে মজিবর বলেন, ‘ক্যান্টেনমেন্ট বোর্ড’ আমাদেরকে ৩০ দিনের জন্য বৃক্ষ ও কুটির শিল্পমেলার অনুমোদন দিয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তা আ.ন.ম আবুজর গিফারী জানান, তারা আমাদের কাছে এসেছিল কিন্তু আমরা কোনো ধরনের কোনো মেলার অনুমতি দেইনি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ জানান, আমার এই বিষয়ে জানা নেই বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয় ও পুলিশ কমিশনার জানতে পারেন।
জয়দেবপুর থানার ওসি তৌহিদ আহমেদ বলেন, গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় আমার অফিসার পাঠিয়ে নিষেধ করে দিয়েছি যে, কোনো ধরনের আইন বিধিবহির্ভূত অ্যাক্টিভিটিস করা যাবে না। মেলার অনুমোদন ও লটারির নামে জুয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, শুনেছি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অধীনে আর্মির কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে কিন্তু কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি। ওটা তো সেনা বাহিনীর এলাকা তারা পুলিশের হেল্প চাইলে আমরা হেল্প করব।
ওই এলাকার সৌরভ নামের এক রিকশাচালক জানান, তিনি পরপর চারদিন রিকশা চালিয়ে জমানো টাকার টিকিট কিনেছেন, জোটেনি তার ভাগ্যে কিছু। এভাবে শত শত রিকশাচালক টিকিট কিনে প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিদিন।
রাজেন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শারমিন তার বান্ধবীদের নিয়ে আসেন মেলার মাঠে মেলা দেখতে। তিনি বলেন মেলায় এসে আকর্ষণীয় পুরস্কারের প্রলোভনে সব বান্ধবীরা ১০০ টিকিট কিনে একটিও পুরস্কার পাননি। জানা যায় স্কুলের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা লটারির প্রলোভনে পরে তাদের টিফিনের টাকায় টিফিন না খেয়ে কিনছে লটারির টিকিট।
গার্মেন্টস শ্রমিক আছমা বেগম বলেন, ছেলের অনেক শখ একটা মোটরসাইকেল কিনার কিন্তু আমরা গরিব মানুষ তাই তার শখ মিঠাতে পারি নাই। শুনছি রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টেনমেন্টের মেলায় লটারি কিনলে মোটরসাইকেল পাওয়া যায় এটা শুনে ছেলের বায়নায় অনেক কষ্টে জমানো ১০ হাজার টাকার লটারির টিকিট কিনে প্রতারিত হয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আশা করছি, এই লটারির নামে জুয়ার আসর বন্ধ করে দেওয়া হোক।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন