আজ আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০২৫। জাতিসংঘ ঘোষিত এ দিবস প্রতিবছর আজকের দিনে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্যÑ ‘প্রযুক্তির যুগে সাক্ষরতার প্রসার’। বরাবরের মতো এবারও যথাযথ আনুষ্ঠানিকতায় দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনটি পালন উপলক্ষে গতকাল রোববার বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার জন্য কর্মমুখী ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। সাক্ষরতা একটি জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুনভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। আসুন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করি, যেখানে প্রযুক্তি ও সাক্ষরতার সম্মিলিত শক্তিতে গড়ে উঠবে একটি জ্ঞানভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক সমাজ।
এদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাক্ষরতার হার অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ সাফল্য লাভ করলেও দেশের প্রায় ২২ দশমিক ১ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনো নিরক্ষর। ২০২৩-২৪ সালে দেশে সাক্ষরতার হার ১ দশমিক ১ শতাংশ বাড়লেও ২০২৪-২৫ সাক্ষরতার হার বাড়েনি। ২০২৩ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ। গত বছর তা উন্নীত হয় ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রতিবেদনের (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪) তথ্য তুলে ধরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জানিয়েছেন, দেশে সাত বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ২২ দশমিক ১ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনো নিরক্ষর। অর্থাৎ শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনের বিষয়টি এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক অবস্থায় নেই। গতকাল রোববার সচিবালয়ে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে দেশের সরকারি-বেসরকারি সব প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ছুটির সংখ্যা কমাতে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানান গণশিক্ষা উপদেষ্টা। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া দেশের ১৫০টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় আগামী অক্টোবর মাস থেকে মিড ডে মিল চালু করা হবে বলে জানান উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা বলেন, দেশে ৭ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ২২ দশমিক ১ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনো নিরক্ষর। এ জনগোষ্ঠী মূলত বিদ্যালয় হির্ভূত বা ঝরে পড়া শিশু এবং শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ।
উপদেষ্টা আরো বলেন, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরে সমাপ্ত বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশুদের উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় ৬৩ জেলায় ২৫ হাজার ৮১৫টি শিখনকেন্দ্রে ৮ লাখ ২ হাজার ৫৩৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল। এর মধ্যে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৪৯৬ জন শিক্ষার্থী মূল ধারায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অবশিষ্ট শিক্ষার্থীরা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেছে। ২০২২ সালে সমাপ্ত মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৪ জেলার ২৪৮টি উপজেলায় ৪৪ দশমিক ৬০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী সাক্ষরজ্ঞান লাভ করেছে।
তিনি জানান, কক্সবাজার জেলায় বিদ্যালয়বহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের জন্য দক্ষতাভিত্তিক সাক্ষরতা শীর্ষক পাইলট প্রকল্প গত জুনে শেষ হয়েছে। যেখানে ১৩টি অকুপেশনে প্রি-ভোকেশনাল কোর্সে ৬ হাজার ৮২৫ জন কিশোর-কিশোরীকে সাক্ষরতার পাশাপাশি কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। স্কিলফো প্রকল্পটি আরও ১৬টি জেলায় সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি অলটারনেটিভ লার্নিং অপরচুনিটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে ৬৪টি জেলার একটি করে উপজেলায় উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা এবং প্রাক-বৃত্তিমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা প্রাথমিক স্কুলে ছুটি কমানোর প্রস্তাব বিবেচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন। বর্তমানে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছরে গড়ে ৭৫ দিন ছুটি দেওয়া হয়। তবে বিভিন্ন আন্দোলন, দুর্যোগ বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে অতিরিক্ত ছুটি যুক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখন ঘাটতি বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য ছুটি ১৬ থেকে ২০ দিন কমিয়ে ৫৫ থেকে ৬০ দিনে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, মাত্র ১৮০ দিন স্কুল খোলা থাকছে। অপ্রয়োজনীয় ছুটি কমানো হতে পারে। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া শিক্ষকদের শিক্ষাবহির্ভূত কাজ থেকে বিরত রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিনই থাকছে। এ ছুটি অন্যভাবে সমন্বয় করা হবে।
এ বিষয়ে সূত্র জানিয়েছে, ছুটির বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। প্রস্তাবটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পর্যালোচনা চলছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে তা পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
অন্যদিকে দেশের ১৫০ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগামী অক্টোবর থেকে ‘মিড ডে মিল’ চালু হবে বলে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা।
এ কর্মসূচি চালু হতে দেরি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আমরা ডিপিপি তৈরি করলাম, সেটি আগের বিবিএসের রিপোর্ট অনুযায়ী তৈরি হলো। এরপর প্রক্রিয়া মেনে আমরা এটি একনেকে উপস্থাপন করলাম, তখন বিবিএসের নতুন পরিসংখ্যান বের হলো। তখন আমাদের বলা হলোÑ আপনারা এই (নতুন পরিসংখ্যান) অনুযায়ী করেন। একটা জেলার মধ্যে কোন অঞ্চলগুলো বেশি দরিদ্র, সেটি তো পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে আবার এটিকে ঠিক করে পাস করাতে হলো। এ জন্য কিছুটা বিলম্ব হলো। উপদেষ্টা বলেন, আর যে প্রক্রিয়াগুলো, প্রকিউরমেন্টে প্রক্রিয়া, ট্রেনিংয়ের বিষয়গুলো, সেগুলো চালু আছে, আমরা আশা করি পারব। ‘মিড ডে মিল’ কর্মসূচিতে ডিম, মৌসুমি ফল, বিস্কুট, দুধসহ পাঁচ ধরনের খাবার থাকবে বলে জানান তিনি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন