- রশিদপুর গ্যাস ফিল্ডের ৩ নম্বর কূপ থেকে দৈনিক ৮ থেকে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার আশা করছে পেট্রোবাংলা
রশিদপুর গ্যাস ফিল্ডের ৩ নম্বর কূপের ওয়ার্কওভার শেষ হয়েছে। কূপটি থেকে দৈনিক ৮ থেকে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার আশা করছে পেট্রোবাংলা। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স তার নিজস্ব রিগ দিয়ে কূপটির ওয়ার্কওভারে সফল হয়েছে। সে হিসেবে আগামী দশ বছর কূপটি থেকে ২৫ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসপ্রাপ্তির ধারণা করা হচ্ছে। ওয়ার্কওভার কাজে প্রায় ৭৩ কোটি টাকার মতো খরচ প্রাক্কলন করা হয়েছে। আর কূপটি থেকে প্রাপ্ত গ্যাসের দাম (আমদানীকৃত এলএনজির মূল্য ঘনমিটার ৬৫ টাকা) ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাশাপাশি গ্যাসের উপজাত কনডেনসেট পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে। সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের ওই কূপটিতে ৫ সেপ্টেম্বর ওয়ার্কওভারের সময় প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রবাহ নিশ্চিত হয়েছে বাপেক্স।
গতকাল রোববার বাপেক্স জানায়, সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের আওতাধীন গ্যাস ফিল্ডগুলোতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। রশিদপুর-৩-এর পাশাপাশি কৈলাশটিলা-১ ও বিয়ানীবাজার-২ কূপের ওয়ার্কওভারের কাজ চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে সিলেট-১০ এক্স, সিলেট-১১, ডুপিটিলা-১, কৈলাশটিলা-৯, রশিদপুর-১১ ও ১৩, কূপ খননের প্রকল্প চলমান রয়েছে। সফলভাবে শেষ করা গেলে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করছে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড।
বাড়ন্ত চাহিদার বিপরীতে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি তো দূরের কথা, বর্তমান উৎপাদন অব্যাহত রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মজুদ কমে আসায় প্রতিদিনই কমে আসছে উৎপাদন। চাইলেও দুই বছরের আগে আমদানি বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই, তেমন একটি পরিস্থিতিতে ধস ঠেকানো না গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। খোদ পেট্রোবাংলার অনেকেই মনে করেন, বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে হঠাৎ করেই বড় ধরনের ধস দেখা দিতে পারে। ২০২৬ সালের শেষ দিকে বিবিয়ানার উৎপাদন ৫০০ মিলিয়নের নিচে নেমে আসতে পারে। শঙ্কা সত্যি হলে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন দেড় হাজার মিলিয়নে নেমে যাবে।
দৈনিক ৮ থেকে ১০ মিলিয়ন গ্যাসপ্রাপ্তির খবর খুবই আশাবাদ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। সবচেয়ে সুবিধার হচ্ছেÑ পাইপলাইন ও প্রসেস প্লান্ট বিদ্যমান রয়েছে। গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে অন্য কোনো জটিলতা নেই। আর জামালপুর কিংবা জকিগঞ্জের মতো নতুন ফিল্ডে গ্যাসের সন্ধান পেলেও কী পরিমাণ গ্যাস মজুত রয়েছে, কী পরিমাণ উত্তোলন করা যাবে, সেই গ্যাসের দাম কত হবে, পাইপলাইনের বিনিয়োগ উঠবে কি না অনেক প্রশ্নসাপেক্ষ। সে দিক থেকে রশিদপুরের গ্যাসপ্রাপ্তি দারুণ সুখকর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর ওপর একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক কোম্পানি স্লামবার্জার। ২০১১ সালে দাখিলকৃত রিপোর্টে বলা হয়, বিদ্যমান গ্যাস ফিল্ডগুলোর সংস্কার করে ৪০০ থেকে ৮০০ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এতে খরচ হতে পারে সর্বোচ্চ ১২৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার। দীর্ঘদিন সেই রিপোর্ট পড়েছিল অনাদরে অবহেলায়। বিগত সরকার দেশীয় গ্যাসের উত্তোলনের দিকে নজর না দিয়ে আমদানির দিকে ঝুঁকেছিল। যে কারণে দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দাম। তারপরও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না ঘাটতি। দেশীয় উৎস থেকে পাওয়া গ্যাসের গড় মূল্য দেখা যাচ্ছে ৬ দশমিক ০৭ টাকা আর মাত্র ৩০ শতাংশ আমদানির পর গড় মূল্য দাঁড়াচ্ছে ২৭ দশমিক ৫৩ টাকা।
দেশের খনি থেকে গ্যাস উত্তোলন করা বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশকে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম দেওয়া হয় ২ দশমিক ৭৬ ডলার, আর তাল্লোকে দেওয়া হয় ২ দশমিক ৩১ ডলার। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে কাতার থেকে আমদানি করা এলএনজির দাম ১০ দশমিক ৬৬ ডলার ও ওমান থেকে আনা এলএনজির দাম পড়েছে ১০ দশমিক ০৯ ডলার।
গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড় বিক্রয়মূল্য পড়েছে ২২ দশমিক ৯৩ টাকা, আর আমদানিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত গ্যাসের দাম পড়েছে ২৭ দশমিক ৫৩ টাকা। এতে করে প্রতি ঘনমিটারে ৪ দশমিক ৬০ টাকার মতো ঘাটতি রয়ে গেছে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। যে কারণে সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন