দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম ইলিশের পাইকারি বাজার হচ্ছে ‘চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র’। দাম ভালো পাওয়ার কারণে সাগর উপকূলীয় এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা নৌ এবং সড়কপথে ইলিশ বিক্রি করতে নিয়ে আসে এখানকার আড়তগুলোয়। স্থানীয় পদ্মা-মেঘনায় আহরিত ও আমদানি ইলিশ এসব আড়ত ঘুরে চলে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। একই সঙ্গে ইলিশের বিক্রি বেড়েছে অনলাইনে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে ইলিশের আমদানি ও স্থানীয় ইলিশের প্রাপ্যতা কমে যাওয়ায় দুই বছরের ব্যবধানে ইলিশের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০২৩ সালে ১ কেজি ওপরের ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩০০ টাকা। বর্তমানে একই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা।
গত কয়েক দিন চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা এবং মৎস্য বণিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া ইলিশের চলমান বাজার দর জানতে কথা হয়েছে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। ইলিশ কেন কম পাওয়া যাচ্ছে বিষয়টি জানালেন মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
আড়তদার মো. ইউসুফ বন্দুকসী ও মো. আকবর জানান, ১ কেজির ওপরে ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ২ হাজার ২০০ টাকা। ছোট সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।
খুচরা বিক্রেতা কামাল উদ্দিন বলেন, খুচরা বিক্রেতাদের অবস্থা খারাপ। বছরের শুরুতে ১ কেজি ওপরের সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৮০০ টাকা। এখন সেই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা। গত কয়েক দিন আড়তগুলোয় খুচরা ক্রেতার সংখ্যা অনেক কমেছে। খুচরা বিক্রেতারা এখন বিপদে। কারণ অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে।
গেল বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ভরা মৌসুমে ১ কেজির ওপরে সাইজের প্রতি কেজি ইলিশের দাম ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা। ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ছিল প্রতি কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা।
২০২৩ সালের একই সময়ে এক কেজির ওপরের সাইজের প্রতি কেজি ইলিশের দাম ছিল ১ হাজার ৩০০ টাকা। ৮০০-৯০০ গ্রামের ওজনের ইলিশ প্রতি কেজির দাম ছিল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা।
এদিকে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আরেক আড়তদার দেলোয়ার হোসেন ব্যাপারী জানান, দুই থেকে তিন বছর আগে সাগর উপকূলীয় এলাকা থেকে ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের আমদানি ছিল। এই সাইজের ইলিশের চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। কারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ছিল। এ সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে।
ইলিশের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক সবেবরাত সরকার বলেন, আমদানি যখন কম তখন মাছের দাম বাড়ে। আর সারা দেশের লোকজনের চাঁদপুরের ইলিশের প্রতি নজর থাকে। গত দুই বছর ইলিশের ভরা মৌসুমে আমদানি ছিল ১ থেকে দেড় হাজার মণ। বর্তমানে আমদানি হচ্ছে ২০০ থেকে ৪০০ মণ। চাহিদা বেশি থাকার কারণে দাম বেড়ে যায়। অনলাইনেও প্রতিদিন ইলিশ বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৫০ মণ। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন ভ্রমণ করতে এসে সরাসরি ইলিশ কিনতে আসে। সব মিলিয়ে চাহিদা বেশি এবং আমদানি কম থাকায় ইলিশের দাম প্রতিবছরই বাড়ছে।
চাঁদপুর সদরের জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মির্জা ওমর ফারুক বলেন, চাঁদপুর নৌ সীমানায় ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে সরকারের মৎস্য বিভাগ কাজ করছে। বিশেষ করে জাটকা সংরক্ষণ এবং মিঠা পানিতে মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে জেলা টাস্কফোর্স আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়ছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন