সিলেটের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হঠাৎ অভিযানে ভয়াবহ অনিয়মের চিত্র উন্মোচিত হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দুদকের সিলেট সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদারের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানকালে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড, প্যাথলজি বিভাগ, রোগীদের জন্য বরাদ্দ খাবার, ওয়াশরুম এবং দাপ্তরিক নথিপত্র খতিয়ে দেখা হয়। দুদক কর্মকর্তাদের প্রাথমিক তদন্তে একাধিক গুরুতর অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অভিযানে উন্মোচিত অনিয়মসমূহের মধ্যে রয়েছে হাসপাতালজুড়ে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় চরম অবহেলা। আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, যা আর্থিক দুর্নীতির ইঙ্গিত বহন করে। ২৬২ জন কর্মচারীর বেতন টানা তিন মাস ধরে বন্ধ, যা কর্মীদের মানবিক সংকটে ফেলেছে। রোগীদের নির্ধারিত খাবার মেনুর চেয়ে কম পরিমাণে খাবার সরবরাহ। হাসপাতালের ভেতরের ওষুধ বাইরের ফার্মেসিতে বিক্রির অভিযোগ। রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ না দেওয়ার ঘটনা নিয়মিত। অ্যাম্বুলেন্সে অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ দেখিয়ে প্রতিটি অ্যাম্বুলেন্স থেকে মাসে বাড়তি ১,৮০০ টাকা আদায়ের প্রমাণ।
দুদক জানায়, অভিযানকালে পাওয়া এসব অনিয়মের তথ্য ও রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সুপারিশ পাঠানো হবে।
৫০০ শয্যার ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১,৫০০ জনের বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এত বড় প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অসন্তোষ বিরাজ করছিল। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতেই দুদক এই অভিযান পরিচালনা করে।
রোগী ও স্বজনদের অনেকেই দুদকের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, এই অভিযানের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা যাবে এবং স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন