বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. রায়হান হোসাইন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ০১:০৮ এএম

প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে মুক্তি দিতে পারে কলেজ পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা 

মো. রায়হান হোসাইন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ০১:০৮ এএম

প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে মুক্তি দিতে পারে কলেজ পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা 

আমাদের সমাজের প্রতিটি শিশু ভিন্ন ভিন্ন। ভিন্ন শিশু ভিন্ন ধরনের প্রতিভার অধিকারী। সেই প্রতিভাকে বিকশিত করতে সাহায্য করে একটি সুন্দর শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষকবৃন্দ। স্কুল থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষার্থী জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা অর্জন করে। স্কুলের বিষয়বস্তুগুলো মূলত হয়ে থাকে আমাদের জীবন ঘনিষ্ঠ সব বিষয়ের বেসিক বা প্রাথমিক ধারণার সমন্বিত জ্ঞান। যা আমাদের ভিত্তি গড়ে দেয়। অন্যদিকে কলেজ পর্যায়ের বিষয়গুলো নির্ধারিত হয় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে। যেমন- সমাজ বা রাষ্ট্রের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থাৎ যে বিষয়ে সমাজে চাহিদা আছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি সেসব বিষয়কে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া আধুনিক বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেমন প্রযুক্তি বিষয়ক বিষয় বা একাডেমিক মানদ-ের ভিত্তিতে। অর্থাৎ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয় এমন বিষয়কে কলেজ পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অন্যদিকে জনপ্রিয়তা ও সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায়ও ‘সাবজেক্ট’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

এসব বিষয় বিবেচনা করলে শারীরিক শিক্ষা সকল মানদ-ে প্রথম সারিতে থাকবে। কেননা শারীরিক শিক্ষার বৃহৎ একটা সেক্টর হলো ক্রীড়া এবং ক্রীড়া বিজ্ঞান। আর বর্তমানে প্রতিটি রাষ্ট্রের পরিচিত এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ক্রীড়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ফলে এমন কোনো দেশ নাই যে, খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে না। সুতরাং আমরা বলতেই পারি সমাজ এবং রাষ্ট্রের চাহিদার ক্ষেত্রে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য। আবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যদি বলা হয় তাহলে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া একশভাগ বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিনির্ভর বিষয়। কেননা বর্তমানে সব খেলাধুলা বৈজ্ঞানিকভাবে পর্যবেক্ষণ ও পরিচালনা করা হয়। পাশাপাশি খেলাধুলার সব ক্ষেত্রে এখন প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার আমরা দেখতে পাই। ফলে এক্ষেত্রেও শারীরিক শিক্ষার মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকার কথা না। 

অন্যদিকে জনপ্রিয়তা এবং সমাজ বিনির্মাণে শারীরিক শিক্ষার বিকল্প নাই। কেননা এমন কোনো শিশু-কিশোর নাই যারা খেলাধুলা পছন্দ করে না। আর এই খেলাধুলার মাধ্যমেই একজন শিশুর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত হয়। ফলে একজন শিক্ষার্থীর সুস্থতা ও বিকাশের ক্ষেত্রে শারীরিক শিক্ষা অপরিসীম। একবিংশ শতাব্দীতে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে শিশু-কিশোরদের আধুনিক প্রযুক্তির প্রতি আসক্তি তাদের মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত করছে। এই অবস্থায়ও শারীরিক শিক্ষা খুবই প্রাসঙ্গিক। এখান থেকে বের হতে চাইলে অবশ্যই শারীরিক শিক্ষার মতো একাধিক জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয়ের কোনো বিকল্প নাই। কেননা কলেজে যদি প্রতিদিন শারীরিক শিক্ষার ক্লাস থাকে তাহলে শিক্ষার্থীরা হয় ব্যবহারিক চর্চার মাধ্যমে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবে না হয় শারীরিক শিক্ষার বিষয়বস্তু (স্বাস্থ্য শিক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য, পুষ্টি, প্রাথমিক চিকিৎসা ইত্যাদি) সম্পর্কে সচেতন হবে। প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায় তার তাত্ত্বিক শিক্ষাও শিখবে শিক্ষার্থীরা। 

সবশেষ কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ আনলে শারীরিক শিক্ষার সঙ্গে অন্য কোনো বিষয়ের তুলনাই চলে না। কেননা এখন পর্যন্ত শারীরিক শিক্ষায় পড়ালেখা করে কোনো শিক্ষার্থী বেকার আছে এমন কোনো উদাহরণ পাওয়া দুষ্কর। বরং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে শারীরিক শিক্ষার হাজার হাজার পোস্ট ফাঁকা আছে। পাশাপাশি বর্তমানে খেলাধুলা হয়ে উঠেছে একটি বড় কর্মসংস্থানের মাধ্যম। ক্রীড়াকে এই প্রজন্মের বড় একটা অংশ পেশা হিসেবে নিতে আগ্রহী। ফলে ক্রীড়া সেক্টরে অসংখ্য পদের সৃৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। উদাহরণ হিসেবে আমরা বর্তমানে ক্রীড়া বিজ্ঞানের কথা বলতে পারি। যেখানে একাধিক শাখায় গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও বৃদ্ধি পাবে। 

ফলে উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আমাদের দেশে কলেজ পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয়টি ‘সাবজেক্ট’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের দাবিই নয় বরং শক্তিশালী জাতি গঠনে এর কোনো বিকল্প নাই।

বাংলাদেশে কলেজ পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষার বর্তমান অবস্থা: বর্তমানে স্কুল এবং বিশ^বিদ্যালয়েও শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান সাবজেক্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। সম্প্রতি ২৮ আগস্ট ২০২৫ প্রাথমিক স্কুলের জন্য শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দেশের প্রতিটি সাধারণ কলেজে ‘সাবজেক্ট হিসেবে শারীরিক শিক্ষা নেই। তবে একজন করে শরীরচর্চা শিক্ষক রয়েছেন। যিনি সারা বছরে শুধু আন্তঃকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা কিংবা বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকেন। এ ছাড়া সারা বছর কোনো কাজ নাই। নামে শিক্ষক হলেও পড়ানোর সাবজেক্ট না থাকায় তিনি আদৌ শিক্ষকের কোনো মর্যাদা পান না। পাশাপাশি কলেজে বিষয় না থাকায় তাদের কোনো পদোন্নতিও নাই। ফলে কলেজের কোনো প্রশাসনিক পদ অর্থাৎ অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ হতে পারেন না। এতে করে তাদের কোনো পেশাগত দক্ষতাও বৃদ্ধি পাই না। ফলে এই পদে যারা চাকরি করেন তারা প্রায় সময় হতাশায় কাটান। 

কলেজের সিলেবাসে শারীরিক শিক্ষার বিষয়বস্তু যেমন হতে পারে: কলেজ পর্যাায়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের বিষয়বস্তু সংবলিত সিলেবাস হতে পারে, শারীরিক শিক্ষার চারটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি অর্থাৎ জীববিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান এবং দর্শনের প্রাথমিক ধারণা। ভিত্তির সঙ্গে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়ার সম্পর্ক। এ ছাড়া মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রাথমিক ধারণা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, পুষ্টি বিজ্ঞান, স্পোর্টস ফার্স্ট এইড বা খেলাধুলার প্রাথমিক চিকিৎসা, স্পোর্টস বায়োমেকানিক্স, স্পোর্টস সায়েন্স ইত্যাদি। 

কলেজ পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হলে দুটি বিষয়ে অগ্রগতি হবে নিশ্চিত। এক. কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার শিক্ষা লাভ করবে। পাশাপাশি এই বিষয়টি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় থাকলে তারা কখনো এটি কমপোলসারি বা অপশোনাল যে কোনোভাবেই পছন্দের রাখতে পারবে। দুই. যেসব শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় ভালো আবার পড়ালেখাতেও সমানতালে এগিয়ে যায় তারা কলেজের সময় থেকেই এই সেক্টরের প্রতি মনোনিবেশ করতে পারবে। ফলে কোনো কারণে যদি সে খেলা থেকে ছিটকেও যায়। তবুও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সে শারীরিক শিক্ষায় পড়ালেখা করে ক্রীড়া বিজ্ঞানের যে কোনো শাখাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে। 

সুতরাং উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করলে আমরা বলতে পারি যে, কলেজ পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিষয়টিকে ‘সাবজেক্ট’ হিসেবে অন্তুর্ভুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। 

মো. রায়হান হোসাইন
প্রভাষক
সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ, বরিশাল

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!