বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন বহু বেকার যুবক-যুবতী। কিন্তু দালাল, প্রতারণা আর অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা সেই স্বপ্নকে বহু সময়েই দুঃস্বপ্নে পরিণত করে। তবে এবার বদল এসেছে। জর্ডানে গার্মেন্টস সেক্টরে চাকরির ক্ষেত্রে সরকারিভাবে একেবারে বিনা খরচে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে- যা ইতোমধ্যেই বদলে দিচ্ছে বহু বাংলাদেশির ভাগ্য।
সরকারিভাবে সুযোগ, কোনো খরচ নেই
বাংলাদেশ ও জর্ডান সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় এখন গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে শতভাগ বৈধ ও সরকারি চ্যানেলে, আর এর সবচেয়ে বড় দিক হলো- ‘শ্রমিককে কোনো খরচ দিতে হয় না’। বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড এবং বিএমইটি -এর মাধ্যমে এই নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ‘গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য জিরো-রিক্রুটমেন্ট ফি পলিসি চালু হয়েছে। চাকরি, ভিসা, থাকা-খাওয়ার সব খরচ বহন করছে জর্ডানের নিয়োগকর্তারা’ - জানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।
কী ধরনের চাকরি?
জর্ডানের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে সাধারণত কাজগুলো হলো- সেলাই অপারেটর যিনি সেলাই মেশিন চালনায় দক্ষ, প্যাকিং হেলপার অবশ্য শারীরিকভাবে সক্ষম হতে হবে, কাটিং হেলপার গার্মেন্টস অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার পাবে। লাইন ছঈ/ইনস্পেক্টর অভিজ্ঞতা থাকা আবাশ্যক।
যোগ্যতা
যারা আগ্রহী তাদের বয়স: ১৮-৩৮ বছর হতে হবে। শিক্ষা থাকতে হবে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি, নারী ও পুরুষ উভয়ই আবেদন করতে পারবেন।
বেতন ও সুবিধা কী কী?
সরকারিভাবে গার্মেন্টস চাকরিতে প্রবাসী শ্রমিকরা পাবেন সাধারণত বেতন হবে ন্যূনতম ২৩০ জর্ডানের দিনার যা বাংলা টাকায় প্রায় ৫৫,০০০ টাকা, কাজের ক্ষেত্রে ওভারটাইম পাবেন তার জন্য পেমেন্ট সুবিধা। যার কাজ করবেন তিনি আবাসন ও খাবার বহন করবে। চিকিৎসা ও নিরাপত্তা কোম্পানির তত্ত্বাবধানে থাকবে। ফেরার বিমানভাড়া চুক্তি শেষে ফেরার খরচ মালিক বহন করে থাকে। চুক্তির মেয়াদ থাকে সাধারণত ২ বছর, তবে নবায়নযোগ্য।
চাকরির জন্য কীভাবে আবেদন করবেন?
চাকরির আবেদন পদ্ধতি নিচে ধাপে ধাপে দেওয়া হলো-
ধাপ ১: বিজ্ঞপ্তি দেখুন
ইঙঊঝখ ও ইগঊঞ-এর ওয়েবসাইটে জর্ডানগামী গার্মেন্ট চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়।
িি.িনড়বংষ.মড়া.নফ
িি.িনসবঃ.মড়া.নফ
ধাপ ২: অনলাইন আবেদন
- নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে হয়
- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট (পাসপোর্ট, ছবি, অভিজ্ঞতা/প্রশিক্ষণের সনদ) সংযুক্ত করতে হয়
ধাপ ৩: সাক্ষাৎকার ও বাছাই
- প্রার্থীদের সরাসরি সাক্ষাৎকার ও দক্ষতা যাচাই হয়
- অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নির্বাচন
ধাপ ৪: মেডিকেল টেস্ট
নির্বাচিত প্রার্থীরা নির্ধারিত মেডিকেল সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করেন
ধাপ ৫: ওরিয়েন্টেশন ও ভিসা
- প্রাক-প্রস্থান প্রশিক্ষণ (চৎব-উবঢ়ধৎঃঁৎব ঙৎরবহঃধঃরড়হ)
- ইঙঊঝখ শ্রমিকদের ভিসা প্রসেস সম্পন্ন করে
ধাপ ৬: ফ্লাইট ও নিয়োগ
- সরকারি তত্ত্বাবধানে বিমান টিকিট
- নিয়োগকর্তা শ্রমিককে জর্ডানে গ্রহণ করে
- এই পুরো প্রক্রিয়ায় কোনো ফি লাগবে না। কোনো দালাল বা এজেন্সি জড়িত নয়।
বিশেষ সতর্কতা: প্রতারণা এড়িয়ে চলুন
- কাউকে টাকা দিয়ে চাকরির নিশ্চয়তা চেয়ে প্রতারিত হবেন না
- শুধু সরকারি ওয়েবসাইট বা অফিসে যোগাযোগ করুন। ফেসবুক/মেসেঞ্জারে অফার পাওয়া চাকরিতে বিশ্বাস করবেন না
- চুক্তি না দেখে বিদেশে যাবেন না
- যেখানে যোগাযোগ করবেন
- বোয়েসেল ও বিএমইটি।
শেষ কথা
জর্ডানে গার্মেন্টসে চাকরি পাওয়া এখন আর অসম্ভব স্বপ্ন নয়। সরকারি উদ্যোগে, সঠিক প্রক্রিয়ায়, শতভাগ বৈধভাবে কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে হাজারো প্রার্থীর জন্য। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে দরকার শুধু সঠিক তথ্য, ধৈর্য আর সতর্কতা।
বিদেশগামী শ্রমিকদের জন্য এটি হতে পারে নতুন জীবনের শুরু, যেখানে আছে সুরক্ষা, সম্মান আর সম্ভাবনা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন