কিডনির ভেতর থেকে মূত্রদ্বার পর্যন্ত মূত্রতন্ত্রের বিস্তৃতি। এই এলাকায় জীবাণুর (বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া) আক্রমণ হলে যে প্রভাব পরিলক্ষিত হয় সেটাই মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ বা টঞও. ইউরোলজিস্টদের কাছে এই রোগের প্রাদুর্ভাব সব থেকে বেশি। এর পর পাথুরি রোগ এবং পুরুষের প্রস্টেট সমস্যা। যেকোনো বয়সে যেকোনো মানুষেরই এ রোগ হতে দেখা যায়, যদিও কিছু সুনির্দিষ্ট কারণে মেয়েদের এই রোগের প্রকোপ বেশি। খুবই সাধারণ আকার বা স্বল্পস্থায়ী থেকে একেবারে চরম আকারে বা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এই রোগ। ক্ষেত্রবিশেষে এ রোগের জীবাণুগুলো অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী, তাই জটিলতা এড়াতে দ্রুত ও সঠিক রোগ নির্ণয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগের মাত্রা অনুযায়ী বাড়ন্ত চিকিৎসা দেওয়া হয় যা একেবারেই অনাকাক্সিক্ষত।
শ্রেণি বিভাগ
স্বল্পকালীন অথবা দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) এ দুভাবেই এই রোগ হতে পারে, এটা আবার প্রথমবার অথবা পরবর্তীতে বারে বারে আসতে পারে (জবপঁৎৎবহঃ). অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসার ব্যত্যয় ঘটলে (টহৎবংড়ষাবফ) থেকে যেতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তেমন কোনো জটিলতা ছাড়াই চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিরাময় হয়। আবার কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এ রোগ জটিল আকার ধারণ করতে পারে যেখানে মৃত্যুও ঘটতে পারে (ঈড়সঢ়ষরপধঃবফ টঞও)।
লক্ষণ সমূহ:
১. সাধারণভাবে প্রস্রাবের সময় জ্বালা-পোড়া করা ।
২. প্রস্রাবের রাস্তায় বা আশপাশে ব্যথা হওয়া।
৩. প্রস্রাবের সময় সাদা ময়লা বা রক্ত যাওয়া।
৪. তলপেটে ও কিডনির পেছনে ব্যথা হওয়া।
৫. খিঁচুনি দিয়ে জ্বর আসা।
৬. বমি বমি ভাব বা ক্ষুধা মন্দা।
জটিলতা
১. যাদের জন্মগত ইউরোলজিক্যাল ত্রুটি আছে।
২. যারা ডায়াবেটিস, ক্যান্সারের বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসা নিচ্ছেন।
৩. যাদের দীর্ঘদিন ক্যাথেটার পরানো, নিউরোজেনিক ব্লাডার বা স্ট্রোকের ইতিহাস আছে।
৪. স্পাইনাল কর্ড ইন্জুরি, বাচ্চাদের টঞও বা যারা ইউরোলজিক্যাল চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের জটিলতার হার বেশি থাকে।
রোগ নির্ণয়
রোগের ইতিহাস, লক্ষণসমূহ, শারীরিক ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগের ডায়াগনোসিস করতে হয়। সঠিক পদ্ধতিতে প্রস্রাব সংগ্রহ ও তদোনুযায়ী পরীক্ষা করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রকার ভেদে আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান, এমআরআইসহ অন্যান্য বিশেষ পরীক্ষা করা লাগতে পারে।
চিকিৎসা
স্বল্পস্থায়ী ও সাধারণ টঞও-এর ক্ষেত্রে চিকিৎসা সহজ। দীর্ঘস্থায়ী টঞও এর ক্ষেত্রে চিকিৎসা খুব ব্যয়বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ হয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বড় ধরনের অপারেশনও লাগতে পারে। দ্রুত ও সঠিক রোগ নির্ণয় করে, সেই মোতাবেক অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য সাহায্যকারী সেবাই এই রোগ নিরাময়ের মূল চাবিকাঠি। তবে অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি অল্প মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিকেরও প্রয়োজন পড়ে।
একটা কথা সর্বদাই খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে রোগীদের কোনোভাবেই অপ্রয়েজনীয় অ্যান্টিবায়েটিক যেন না দেওয়া হয়। তাতে করে আমাদের সমাজে উত্তরোত্তর বহু অ্যান্টিবায়োটিক রোধি বেশি বেশি জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে পারে।
অধ্যাপক ডা. নিতাই পদ বিশ্বাস
ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ
সাবেক অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ইউরোলজি
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেজে এন্ড উইরোলজি, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা
চেম্বার: আলোক হাসপাতাল, মিরপুর-৬, ঢাকা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন