**** সুপেয় পানি সরবরাহ
**** কাজ শেষ হওয়ার বহু বছর পরও এক ফোঁটা পানিও পায়নি পৌরবাসী
*** নিম্ন মানের পাইপ ব্যবহারের ফলে ভেঙে গেছে বেশির ভাগ অংশ
*** প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা নেই বলছে সংশ্লিষ্টরা
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার বাসিন্দাদের আয়রন ও আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য প্রায় ২৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। কিন্তু কয়েক দফা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও আলোর মুখ দেখেনি। প্রকল্প শেষ হওয়ার বহু বছর পরও পৌরবাসীর ঘরে পৌঁছায়নি এক ফোঁটা পানিও। নিন্মমানের কাজ, অব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাবে মাটির নিচে নষ্ট হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে পুরো প্রকল্প। প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা নেই বলছে সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, দেশের ৩২টি শহরে বাসিন্দাদের সুপেয় পানি সরবরাহ করার জন্য পানি সরবরাহ প্রকল্প শুরু করে আ.লীগ সরকার। এর ধারাবাহিকতায় গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে কাজ শুরু হয় পানি সরবরাহ প্রকল্প। ২০২১ অর্থবছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১৩৮ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৮ লাখ ৬৭ হাজার ১৯ টাকা। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১০টি পাম্প হাউস বসানোর জন্য বরাদ্দ ৮ কোটি ৫৭ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৭ টাকা। পাইপলাইন স্থাপনের কাজ পায় মনিরা ট্রেডার্স ও পাম্প হাউস নির্মাণের কাজ করে জিলানী ট্রেডার্স নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর নির্মাণ কাজের তদারকি করেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকল্পের কাজ বুঝিয়ে দেন। কিন্তু নির্মাণকাজে নি¤œ মানের পাইপ ব্যবহারের ফলে মাটির নিচে পরে নষ্ট হচ্ছে ২৪ কোটি টাকার প্রকল্পটি। বেশির ভাগ এলাকার পাইপলাইন ভেঙে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে পুরো সঞ্চালন লাইন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বসতবাড়ি নির্মাণ রাস্তাঘাট, গ্যাস লাইন স্থানান্তর করে পানির লাইন নষ্ট করে ফেলেছে। নি¤œ মানের পাইপ ব্যবহারের ফলে বেশির ভাগ অংশ ভেঙে গেছে। ১৩৮ কিলোমিটার পাইপলাইনের প্রায় পুরোটাই বিকল। ১০টি পাম্প বসানোর কথা থাকলেও একটি পাম্প হাউস বসানোর কাজ এখনো চলমান। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী বিভাগ কাজ বুঝিয়ে দিলেও বিকল রয়েছে কয়েকটি পাম্প। প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা খুবই কম। পৌর বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় শুধু শুধু এতগুলো টাকা মাটির নিচে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।
পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এই প্রকল্পের টাকা সব জলে। মাটির নিচে পাইপলাইন সেগুলো নষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন বাসাবাড়ির গ্যাস লাইন, বসতবাড়ি নির্মাণ কারখানা কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন নির্মাণকাজ করার ফলে কেটে একাকার। শুধু প্রকল্পের টাকা লুটপাট হলো। নগরের মানুষ সুবিধা পেল না।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. খোরশেদ আলম বলেন, পানি প্রকল্পে ২৪ কোটি টাকা খরচ করলেও বাসিন্দাদের এক ফুটা পানিও সরবরাহ করতে পারেনি। প্রকল্প দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
আজিজুল নামের এক বাসিন্দা জানান, কাজের কাজ কিছুই হলো না। একদিনও এক সেকেন্ডের জন্য পানি সরবরাহ করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। মাঝখানে কাটা হলো রাস্তা পাইপলাইন বসানোর জন্য। নষ্ট হলো গাছগাছালি।
শ্রীপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন) কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, প্রকল্প শুরুর দিকে আমি ছিলাম না। নিয়ম অনুযায়ী আমি দায়িত্বে থাকলে আমাকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। নি¤œ মানের পাইপ ব্যবহার হয়েছে। ১৫শ গ্রাহকের বসতবাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে আজ একটি সংযোগও নেই। ১৩৮ কিলোমিটার পাইপলাইন পুরোটাই বিকল। কয়েকটি পাম্প নষ্ট। চালানো যাচ্ছে না। ১০টি পাম্পের মধ্যে নয়টি বুঝিয়ে দিলেও একটির কাজ এখনো চলমান। পাম্প হাউস বসানো হলে কি হবে। পুরো লাইন ভেঙে গেছে। প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা কম।
গাজীপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বলেন, ২০২৩ সালে শ্রীপুর পৌর কর্তৃপক্ষকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজের মান পাইপ নি¤œ মানের হলে তারা কেন কাজ বুঝে নিল।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও ও পৌর প্রশাসক সজীব আহমেদ বলেন, গৃহস্থালি কাজে বাসিন্দাদের পানি সরবরাহের জন্য প্রকল্পটির কাজ আমি যোগদানের পূর্বে শেষ হয়। হস্তান্তর আমাদের যোগদানের পূর্বে। আমি যোগদানের পর থেকে একটি বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। এটি আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা কম।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন