ময়মনসিংহ নগরীতে আতে রাসুল খাজা বাবার দায়রা শরিফ নামে একটি খানকায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। খানকায় আয়োজিত গানবাজনার প্রতিবাদে স্থানীয় জনতা এই হামলা চালায়।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরের পর নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুতিয়াখালী বাজারে অবস্থিত এই দরবার শরিফ ভাংচুর করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুতিয়াখালী বাজারে ‘আতে রাসুল খাজা বাবার দায়রা শরিফে’ প্রতি শুক্রবার রাতে সামা কাওয়ালি গানের আসর হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা উসমান গণি ফকির প্রায় ১৭ বছর আগে বাজারের এক পাশে সরকারি জমিতে একটি ঘর করে সেখানে ওই খানকা গড়ে তোলেন। এখানে নিজের ভক্তদের নিয়ে আড্ডা দিতেন উমসান গণি ফকির।
স্থানীয় লোকজন এটিকে গণি ফকিরের আস্তানা নামে জানে। কাওয়ালি গানের আয়োজন করায় সম্প্রতি অসামাজিক আখ্যা দিয়ে এটি বন্ধের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন একদল মুসল্লি।
দায়রা শরিফের খাদেম উসমান গণি ফকির বলেন, জুমার নামাজের পর একটি গ্রুপ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় খানকায় ভাঙচুর ও মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। হামলার সময় আমরা কেউ সেখানে ছিলাম না।
তিনি আরও বলেন, ঘর-দরজা ভেঙে কুপিয়ে তছনছ করেছে, সাউন্ডবক্সের সেট নিয়ে গেছে। এখানে প্রায় সাড়ে ১৭ বছর ধরে আস্তানা ছিল। এখানে খাজা বাবার দায়রা শরিফে মিলাদ হতো, গানবাজনা হতো। কিন্তু কোনো কিছু না বলে হঠাৎ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সুফিবাদ ঐক্য পরিষদের সভাপতি খলিলুর রহমান চিশতী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণি ফকির মুঠোফোনে তার আস্তানা ভাঙচুর করার খবর জানিয়েছে। সেখানে গানবাজনা ও আড্ডা হতো। সরকারি জায়গায় কার্যক্রমটি চলায় লোকজন ক্ষুব্ধ ছিল।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ময়মনসিংহ বাউল সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম (আসলাম) বলেন, ‘সুফি এবং বাউল দর্শন কখনোই সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা সমর্থন করে না। সুতরাং যেকোনো দরবার, দরগা, মাজার ও আস্তানা ভেঙে যারা আমাদের মুসলিম সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিনষ্ট করছে, তাদের প্রতি ঘৃণা জানাই।’
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি পীরের আস্তানা রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন রকমের কার্যকলাপ হয়, যা স্থানীয় সাধারণ মানুষের পছন্দ হচ্ছিল না। সেখানে সাউন্ড সিস্টেমে গানবাজনা করা হয়।
তিনি বলেন, ‘ভক্তরা এসে আড্ডা দেয়, নামাজ-কালাম নাই। এর আগেও কয়েকবার স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের সতর্ক করেছে। আজকেও সেখানে গান বাজনার আয়োজন করলে এলাকার কিছু ছেলেপেলে গানবাজনার জিনিসগুলো ভেঙে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এ ধরনের ঘটনা অপ্রত্যাশিত। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন