শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫, ০২:০৫ এএম

রশির দুই পাশে ভরসা ও ভয়

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫, ০২:০৫ এএম

রশির দুই পাশে ভরসা ও ভয়

  • গ্রামের শতাধিক শিশু প্রতিদিন ডিঙি নৌকায় স্কুলে যায়
  • মাঝি নেই, দুই পাশে রশি টানেই নদী পারাপার
  • সম্প্রতি তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রও পড়েছিল

রাজশাহী মোহনপুর উপজেলার নওগাঁ গ্রামে প্রতিদিনের স্কুল যাত্রা শিশুদের জন্য এক ভয়ঙ্কর অভিযান। শিব নদ পেরোতে তাদের একমাত্র ভরসা এখন ছোট্ট ডিঙি নৌকা, যেখানে মাঝি নেই, দুই পাশে কেবল রশি। এই রশি টেনে নদী পারাপার হতে হয় শিশুদের, আর প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ভরসা আর ভয়, দুই পাশে।

নদীর একপাশ থেকে অন্যপাশে পৌঁছাতে ফারুক হোসেন বলেন, ‘একা নৌকায় উঠতে ভয় লাগে। মাঝ নদে গেলে নৌকা স্রোতে সরে যায়। দড়ি টেনে পাড়ে আনা কঠিন। কখনো বাবা বা মা পার করান, কখনো এলাকার বড় ভাই।’

চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সম্পা খাতুন যোগ করেন, ‘বর্ষায় পানি বাড়লে নৌকায় ওঠা আরও বিপজ্জনক। বই-খাতা ভিজে যায়, পড়াশোনায় সমস্যা হয়। আমরা সব সময় ভয়ে থাকি।’

সহকারী শিক্ষক শিরিন আক্তার বলেন, ‘কিছুদিন আগে স্রোত ছিল প্রচ-। ছোট নৌকায় পারাপার করা ভয়ংকর। বড়রা ভয় পেত, শিশুদের ঝুঁকি আরও বেশি। আগে এখানে বাঁশের সাঁকো ছিল, ভেঙে যাওয়ার পর থেকে মানুষ এবং শিশুদের পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। একটি ব্রিজ হলে অনেকের জীবন সহজ হবে।’

নদীর উত্তরে মালিদহ ও গোপইল, দক্ষিণে নওগাঁ, এই চার-পাঁচ গ্রামের মানুষের প্রতিদিনের যাতায়াতও এখন নির্ভর করছে এই ঝুঁকিপূর্ণ নৌকার ওপর। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ‘সাঁকো ভাঙার পর দুর্ঘটনা হরহামেশাই ঘটে। একটি ব্রিজ হলে চার-পাঁচ গ্রামের মানুষের জীবন সহজ হবে।’

স্থানীয়রা জানান, শিব নদের ওপর একসময় বাঁশের সাঁকো ছিল। সেটি ভেঙে যাওয়ার পর একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠে এই ডিঙি নৌকা। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থী নৌকায় পার হয়। নদের উত্তরে মালিদহ ও গোপইল গ্রাম, দক্ষিণে নওগাঁ গ্রাম। তিন গ্রামের শতাধিক শিশু প্রতিদিন নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়। ১২০ বছরের পুরোনো এ বিদ্যালয়ে একসময় শিক্ষার্থী ছিল দুই শতাধিক। এখন সংখ্যা নেমে এসেছে ১১৮তে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভাষ্য, সাঁকো ভাঙার পর থেকেই অভিভাবকেরা নিরাপত্তার কারণে সন্তানদের অন্য স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। অভিভাবক নুরেসা বেগম বলেন, ‘গতকালই এক ছাত্র নদে পড়ে যায়। সহপাঠীরা ধরেছিল বলেই বেঁচেছে। প্রতিদিনই দুশ্চিন্তা নিয়ে থাকতে হয়, ছেলে-মেয়ে কখন বাড়ি ফিরবে।’

অভিভাবক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও বিকেলে কাজ ফেলে নদের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সন্তানদের পার করানোর জন্য। ঝুঁকির কারণে অনেককে দূরের স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। অথচ আমাদের দাবি একটাই এখানে একটা ব্রিজ হলে চার-পাঁচ গ্রামের মানুষ উপকৃত হবে।’ নদে মাছ ধরতে থাকা স্থানীয় মুঞ্জিলা সরদারও একই কথা বলেন। তার মতে, ‘সাঁকো ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এই নৌকায় মানুষ পার হচ্ছে। দুর্ঘটনা হরহামেশাই ঘটে। একটি ব্রিজ হলে চার-পাঁচ গ্রামের মানুষের জীবন সহজ হয়ে যাবে।’

নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা আহমেদ বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী নৌকায় চড়ে স্কুল আসে। ছোটরা, দুর্ঘটনার ভয় সব সময়ই থাকে। অভিভাবকেরা নিরাপত্তার কারণে সন্তানদের অন্য স্কুলে পাঠাচ্ছেন। ব্রিজ হলে তারা আবার বিদ্যালয়ে ফিরবে।’

অভিভাবক নুরেসা বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও বিকেলে আমাদের কাজ ফেলে নদপারে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ছেলেমেয়েরা কখন ফিরবে, তা নিয়েই আমরা দুশ্চিন্তায় থাকি।’

শিব নদ পারাপারের এ ঝুঁকিপূর্ণ নৌকা জীবন এবং নিরাপদ সেতুর অনিশ্চয়তা গ্রামের শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!