রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মাঝেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাব অর্থাৎ জুবেরী ভবনে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে প্রবেশের সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন জুবেরী ভবনের দোতলায় একটি কক্ষে অবস্থান নেন। এ সময় ভবনের বারান্দা ও প্রাঙ্গণে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়েও বিষয়টি নিয়ে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা চলছিল। ধস্তাধস্তির ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে পোষ্যকোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে প্রশাসন ভবনের সামনে অনশন শুরু করেন একদল শিক্ষার্থী। এর আগে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে প্রশাসন ভবন থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বাসভবনে যাওয়ার জন্য রওনা দেন উপউপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন। তখন সাবেক সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার ও শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আল শাহরিয়া শুভর নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী তার গাড়ি আটকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। প্রায় ২০ মিনিট পরে উপউপাচার্য গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই বাসভবনের দিকে রওনা দেন। তখন শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তার পিছু নেন। উপ-উপাচার্য পৌঁছানোর আগেই তার বাসভবনের ফটকে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের ফটক থেকে সরে যেতে অনুরোধ করেন বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমানসহ কয়েকজন শিক্ষক। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত ফটকের অবস্থান ছাড়বেন না বলে জানান।
পরে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে উপ-উপাচার্য ও প্রক্টরসহ কয়েকজন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাব অর্থাৎ জুবেরী ভবনের উদ্দেশে রওনা দেন। এ সময়ও শিক্ষার্থীরা তার পিছু নেয় এবং তার আগেই জুবেরী ভবনের ফটকে অবস্থান নেয়। এখানে ২০ মিনিট অপেক্ষার পর উপউপাচার্য প্যারিস রোডের দিকে হাটা শুরু করে কিছুদূর এগোলে শিক্ষার্থীরা আবারও স্লোগান দিয়ে তার পিছু নেয়।
এ সময় সেখানে উপউপাচার্য ও প্রক্টরের সঙ্গে যোগ দেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক খলিলুর রহমানসহ কয়েককজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা। তখন তারা আবারও জুবেরী ভবনে ফেরত আসেন এবং ফটকে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ধাক্কা দিয়ে ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়। তখন শিক্ষক-কর্মকর্তারা বাধা ভেঙে ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় উপস্থিত শিক্ষক-কর্মকর্তার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মাঝে ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনার একপর্যায়ে জুবেরী ভবনের পশ্চিম ব্লকের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে যান উপউপাচার্য। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠার সময়েও তিনি এক শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দিয়ে দোতলার একটি কক্ষে অবস্থান নেন। তারপর থেকে সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উপউপাচার্য ওই কক্ষে অবস্থান করছেন এবং শিক্ষার্থীরা ভবনের ব্লকে এবং প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানান বামপন্থি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা। এর আগে বিকেল ৫টায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় শাখা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরাও আন্দোলনে সংহতি জানান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিলেন। এ সময় প্রশাসন ভবনে গাড়ি আটকে দেয় শিক্ষার্থীরা। পরে তিনি হেঁটে বাসায় যেতে থাকেন। তাকে বাসায় যেতে দেওয়া হয়নি। পরে পাশেই জুবেরী ভবনে আলোচনার জন্য যেতে চেয়েছিলেন। জুবেরী ভবনে প্রবেশ করার সময় সামনে এসে শিক্ষার্থীরা দাঁড়ান। তখন একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। কী কে কীভাবে শুরু করে জানি না।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন