মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ফিরোজ মাহমুদ, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ০১:৩৭ এএম

১২০০ কোটি টাকার কাজ ফেলে উধাও ভারতীয় ঠিকাদার

ফিরোজ মাহমুদ, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ০১:৩৭ এএম

১২০০ কোটি টাকার কাজ ফেলে  উধাও ভারতীয় ঠিকাদার

*** বারইয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক
*** ৮ মাস ধরে বন্ধ নির্মাণকাজ
*** চরম দুর্ভোগে মানুষ, মরিচা ধরেছে সেতুর রডে
*** মেয়াদ বাড়িয়েও ফেরেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র তিন ঘণ্টায় ভারতের ত্রিপুরায় পণ্য পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে হাতে নেওয়া হয়েছিল বারইয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্পের মাঝপথে কাজ ফেলে উধাও হয়ে গেছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘অশোকা বিল্ডকন লিমিটেড’। গত আট মাস ধরে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে কাজ। এতে শুধু ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের স্বপ্নই ভেঙে পড়েনি, বরং সড়কের অর্ধনির্মিত অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা।

প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, চার দিকে সুনসান নীরবতা। কোথাও কোনো নির্মাণকাজ নেই। খুঁড়ে রাখা সড়কের গর্তে জমেছে পানি। নির্মাণাধীন সেতু ও কালভার্টের রডে মরিচা ধরেছে। ফটিকছড়ির বাগান বাজার কাজী মাদ্রাসার সামনের অংশসহ অনেক জায়গায় সড়কের অবস্থা বেহাল। সামান্য বৃষ্টিতেই তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।

চট্টগ্রাম বন্দরকে খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দরের সঙ্গে যুক্ত করতে এই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। ভারত সরকারের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি-৩) এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ১৮ ফুট থেকে ৩৮ ফুটে উন্নীত করার কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। কথা ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি মাত্র ৪৫-৫০ শতাংশ। এমন অবস্থায় কাজ ফেলে উধাও হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘অশোকা বিল্ডকন লিমিটেড’। আট মাস ধরে কাজ বন্ধ থাকলেও প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের (২০২৫) ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও টনক নড়েনি ঠিকাদারের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অশোকা বিল্ডকন লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সন্দীপ দে হোয়াটসঅ্যাপে জানান, তিনি বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। কাজ বন্ধের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে সরকার পরিবর্তনে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে এর বেশিকিছু তিনি বলতে রাজি হননি।

প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাহিদ বলেন, সরকার পরিবর্তনে কিছুটা প্রভাব পড়েছিল। সেটা বর্তমানে কেটে গেছে। আমরা ঠিকাদারকে ৩৮ কিলোমিটারের মধ্যে ২৩ কিলোমিটার সড়ক বুঝিয়ে দিতে পেরেছি। বন বিভাগের সঙ্গে কিছু সমস্যা ছিল, সেটিরও সমাধান হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করলেও মাত্র তিন মাসে প্রকল্পের বাকি ৫০-৫৫ শতাংশ কাজ শেষ করা কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেহ উদ্দিনও প্রকল্পের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ গত বছরের ডিসেম্বরে শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিছু সমস্যা ছিল। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সহজ করতে ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল দিল্লিতে দুই দেশের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ৩৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করার পাশাপাশি ২৪৯.২ মিটারের ৯টি সেতু এবং ১০৮ মিটারের ২৩টি কালভার্ট নির্মাণের কথা রয়েছে। প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৫১৩ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং ভারত সরকার ঋণ দিচ্ছে ৫৯৪ কোটি ৭ লাখ টাকা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসা পণ্যবাহী যানবাহন বারইয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে রামগড় স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে। এতে সময় ও পরিবহন ব্যয় যেমন কমবে, তেমনি মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গেও সহজ যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

কাদারি প্রতিষ্ঠানের এমন আকস্মিক উধাও হয়ে যাওয়ায় পুরো প্রকল্পটিই এখন অনিশ্চয়তার মুখে। হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ, দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের স্বপ্ন এবং স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগ; সবকিছুই এখন ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ফেরার অপেক্ষায় আটকে আছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!